নেশা

নেশা
লেখা: তমনাশ সমদ্দার
ছবি : জয়দেব ভট্টাচার্য

রোজকার অন্নসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে আমার স্কুলে হাজিরা দেবার জন্য ৯:৪০ এর কাটোয়া লোকাল ধরতে ২নং প্লাটফর্মে ট্রেন আসার অপেক্ষা করছি। মিনিট দুয়েক পরই আমার ফোনের একাগ্রচিত্ততা ভেঙ্গে দুটি রোগা হাড় জীর্ণ হাত আমার দিকে এগিয়ে এল।“ভাই রে! দশটা টাকা দিবি? ভাত খাব। দুদিন খাইনি।”
মুখটা দেখে মায়াই হল। ব্যাগ থেকে মানিব্যাগটা বের করতে যাচ্ছি, পাশে বসা আমারই সহযাত্রী হাতটা চেপে ধরলেন। আমি অবাক, যিনি আমায় এহেন পুণ্য করতে বাধা দিলেন তিনি তো নিজেই দান ধ্যান পুণ্য কাজে অনেকদিন আগেই নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তাহলে আমায় বাধা কেন? তাহলে কি সব পুণ্যের ভাগী উনি নিজেই হতে চান। মুখে না বললেও চোখে এমন প্রশ্ন নিয়ে তাকালাম বুলুদার দিকে। আমার দৃষ্টিজাত প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টে সেই দাদুকেই প্রশ্ন করে বসলেন, “তুমি দশটাকায় ভাত খাবে, না পেপসি?”
“যাই খাই না শালা, তোর তাতে কী?”
“না, আমার কিছুই না। ভাত খাবে বলে হাত পাতছ কি না তাই জিজ্ঞাসা করলাম।”
“এই লেখাপড়া করেছিস তুই? দশটাকায় তোর কোন শ্বশুরে ভাত দেবে রে শালা? দশটাকায় আজ কি হয়?”
“কেন? দু’ প্যাকেট পেপসি!”
এতক্ষণ দু’জনের কথোপকথন বেশ মন দিয়েই শুনছিলাম। এবার উত্তেজিত দাদুকে শান্ত করে বললাম, “ও দাদু, রেগে যেও না। আমি তোমায় দশটাকাই দেব। তুমি খাবার খেও। ওই সব ছাইপাস আর খেওনা।”
আমার কথায় একটু শান্ত হয়ে দাদু হাসল। সে হাসি দেখলেই বোঝা যায় কি তীব্র ব্যঙ্গ ঝরে পরছে ওই হাসি থেকে।
“খাবার। দশটাকায় কী খাবার হবে দাদু?”
“কেন! চারটে কচুরি, অসীমের দোকানে।”
পাশ থেকে বলল বুলুদা।
আবার দাদু খেঁকিয়ে বলে উঠল,“কচুরি। কতক্ষণ থাকবে পেটে?”
“আর তোমার পেপসিই বা কতক্ষণ থাকবে পেটে শুনি?
“শুনবি শালা? দ্যাখ, দশ টাকায় দু’ প্যাকেট পেপসি হবে। কিনব, ছিঁড়ব, ঢক ঢক করে নাক টিপে গলায় ঢেলে দেব। তারপর ওই বেঞ্চির ওপর শুয়ে পড়ব। ঘুম যখন ভাঙবে তখন তোদের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে যাবে। আবার সাতটায় একটা ঢালব, রাত কাবার। পারবে তোর কচুরি?”
বুলুদার চোখ ছলছল করে উঠল। আমার আগেই বুক পকেটে রাখা একটা দশ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিল দাদুর হাতে। আর আমিও। শুকনো জিরজিরে হাত কপালে ঠেকিয়ে দাদু আসতে আসতে এগিয়ে গেল।
আর ঠিক সেই সময়ই মাইকে ঘোষণা – “কাটোয়া যাওয়ার গাড়ি হাওড়া-কাটোয়া লোকাল খামারগাছী ছাড়ল…”
“কেন? দু’ প্যাকেট পেপসি!”
এতক্ষণ দু’জনের কথোপকথন বেশ মন দিয়েই শুনছিলাম। এবার উত্তেজিত দাদুকে শান্ত করে বললাম, “ও দাদু, রেগে যেও না। আমি তোমায় দশটাকাই দেব। তুমি খাবার খেও। ওই সব ছাইপাস আর খেওনা।”
আমার কথায় একটু শান্ত হয়ে দাদু হাসল। সে হাসি দেখলেই বোঝা যায় কি তীব্র ব্যঙ্গ ঝরে পরছে ওই হাসি থেকে।
“খাবার। দশটাকায় কী খাবার হবে দাদু?”
“কেন! চারটে কচুরি, অসীমের দোকানে।”
পাশ থেকে বলল বুলুদা।
আবার দাদু খেঁকিয়ে বলে উঠল,“কচুরি। কতক্ষণ থাকবে পেটে?”
“আর তোমার পেপসিই বা কতক্ষণ থাকবে পেটে শুনি?
“শুনবি শালা? দ্যাখ, দশ টাকায় দু’ প্যাকেট পেপসি হবে। কিনব, ছিঁড়ব, ঢক ঢক করে নাক টিপে গলায় ঢেলে দেব। তারপর ওই বেঞ্চির ওপর শুয়ে পড়ব। ঘুম যখন ভাঙবে তখন তোদের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে যাবে। আবার সাতটায় একটা ঢালব, রাত কাবার। পারবে তোর কচুরি?”
বুলুদার চোখ ছলছল করে উঠল। আমার আগেই বুক পকেটে রাখা একটা দশ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিল দাদুর হাতে। আর আমিও। শুকনো জিরজিরে হাত কপালে ঠেকিয়ে দাদু আসতে আসতে এগিয়ে গেল।
আর ঠিক সেই সময়ই মাইকে ঘোষণা – “কাটোয়া যাওয়ার গাড়ি হাওড়া-কাটোয়া লোকাল খামারগাছী ছাড়ল…”


Author: admin_plipi