বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ১০)

বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ১০)
শিপ্রা মজুমদার তরফদার

গোদের উপর বিষফোড়া। চারিদিকে এই অজানা রোগের আতঙ্ক আর তার মাঝেই কাল বিকেল থেকে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি।
আকবর একটু বেরিয়েছিল, মেহেরের আবার জ্বর এসেছে। মেয়েটা হওয়ার পর থেকে খুব ভুগছে। এদিকে ডাক্তার-খানা ওষুধের দোকান বন্ধ। ওষুধ আনতে সাইকেল নিয়ে দূরে গিয়ে ছিল আকবর। ফেরার সময় শুনলো রাত থেকে নাকি ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে। বৃষ্টিতে ভিজে আকবর কোনরকমে বাড়ি ফিরল। শাবানা চিন্তিত মুখে বসে মেয়ের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছিল। গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। আম্মি ছেলের হাতে গামছা দিয়ে বলল, “হ্যাঁ রে, আমাদের ওদিকের ঘর দুটো ঝড় আসলে আর থাকবে না রে! জিনিসগুলো তো এদিকে আনতে হবে।” মা-ছেলের কথাবার্তার মাঝেই দমকা বাতাস আর বৃষ্টি জোরে শুরু হয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে মনে হ’ল যেন ওদের ঘর আর থাকবে না। শাবানা ভয়ে মেহেরকে বুকে চেপে ধরে। বাইরে মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চারদিকে অন্ধকার, আর একের পর এক গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ। দেখতে দেখতে চোখের সামনে আকবরদের পুরনো দুটি ঘর ভেঙ্গে পড়ল। আম্মির আর্তনাদ আর ঝড়ের তান্ডব এই রাতকে ক্রমশ যেন ভয়ংকর করে তুলছে। শাবানা মেহেরকে বুকে নিয়ে আল্লাহকে ডাকতে থাকে, আর আকবর অসহায়ের মতো দেখতে থাকে প্রকৃতির ভয়ংকর রূপ।
সারারাত কেটে যায় ঝড়ের তাণ্ডবে। পরদিন বাইরে বেরিয়ে আকবর দেখে গ্রামটা যেন তছনছ হয়ে গিয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীর জল হুহু করে ঢুকছে গ্রামের মধ্যে। গোটা রামনগর এলাকায় যেন মনে হচ্ছে কোন রূপকথার দৈত্য ঢুকে সারারাত দাপিয়ে বেড়িয়েছে, আর ইচ্ছে মত ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়েছে গাছপালায় ঘেরা এই গ্রামটিকে। দিনুরা ডাকতে এসেছিল আকবরকে। যেতে হবে বাঁধ মেরামতের জন্য। আপাতত কোনো রকমের ঠেকাতে হবে জল, না হলে তো বন্যায় ভেসে যাবে গোটা গ্রাম। আকবর ওদের গ্রাম বর্ধিষ্ণু হলেও এখানে মাটির বাড়ির সংখ্যায় বেশি। তাই কাল রাতে ঝড়ে বেশিরভাগ বাড়ি পড়ে গিয়েছে। যতটুকু আছে সেটাকে না বাঁচালে তো আর থাকবে না মাথা গোঁজার ঠাঁই। শুধু ভিটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে ওদের। মনটা ভাল নেই। আম্মা সকাল থেকে কাঁদছে পুরনো ঘর দুটো হারিয়ে, আর মেয়েটার জ্বর কমছে না। আকবর ছোটে দিনুদের সাথে। কিছুই ওর হাতে নেই। যা করবার ওই একজন‌ই করবেন।


চলবে …

Author: admin_plipi