হলুদ পাঞ্জাবি ও বাসন্তী শাড়ি

 

“এ কি রে বাবিন! কি করেছিস এটা? পুরো ঘরে আলমারির জামা কাপড় ছড়ানো ছিটানো কেন? মায়ের কাজ বাড়াতে খুব ভালোবাসিস, তাই না? দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে!”
— “মা আমি সেই হলুদ রঙের পাঞ্জাবিটা খুঁজছিলাম, যেটা দাদা গত বছর পুজোর সময় কিনেছিল। প্লিজ মা পাঞ্জাবিটা খুঁজে দাওনা। ওটা আমার চাই-ই চাই।”
— “কিন্তু পাঞ্জাবি দিয়ে তুই কি করবি?”
— “পরব, আবার কি করব?”

ছেলের মুখে পাঞ্জাবির কথা শুনে মন্দিরাদেবী হতবাক! যে ছেলে পাঞ্জাবি নামটাই পছন্দ করে না, ডজনখানেক পাঞ্জাবির একটাও ছুঁয়ে দেখেনি কখনও, সে কি না আজ পাঞ্জাবি পরবে বলছে! এ তো রীতিমত অবাক হওয়ার মতই ব্যাপার।
মন্দিরাদেবী ছেলেকে কাছে ডেকে মজা করে বললেন,”হ‍্যাঁ রে বাবিন, তোর শরীর টরির ঠিক আছে তো?”…..বলেই মুচকি হাসলেন।
— ” ওহ্ মা….!”
মায়ের এমন মশকরায় কিছুটা কপট রাগ দেখালো কিংশুক ওরফে বাবিন। ছেলের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, বেশ লজ্জা পেয়ে গিয়েছে। লজ্জাটাকে আপ্রাণ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে কিংশুক বলল, “এমন করে ইয়ার্কি করাটা কিন্তু ঠিক নয় মা। আসলে পরশু দিন সরস্বতী পুজো। আর ঋজু, শৌনক, প্রীতম সবাই পাঞ্জাবি পরবে বলল। তাই আমাকেও খুব করে জোর করেছে পরার জন্য। সেই জন্যই আর কি।”

— “আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে। সে যে কারণেই হোক, মায়ের কথা তো কোনো দিন শুনিসনি এ বিষয়ে। বন্ধুদের দৌলতে তবুও না হয় হল। মেয়েদের যেমন শাড়িতে, ঠিক তেমনি পাঞ্জাবি পরলে ছেলেদের দারুণ হ‍্যান্ডসম্ লাগে বুঝলি? বাঙালী ছেলেদের পাঞ্জাবিতেই বেশী মানায়।”

এতবার শেষের কথাগুলো মায়ের মুখে শুনেছে কিংশুক। অথচ আজ যেন কথাগুলো সত্যি মনে হচ্ছে ওর। আসলে কাল সরস্বতী পুজোর প্ল‍্যানিং-এর আড্ডায় কৌশানীও যে এই কথাগুলোই বলছিল। “সরস্বতী পুজোয় ছেলেদের ফরমাল-এ নয়, হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে উফফফ্ জাস্ট অসাম লাগে আমার।”

ব‍্যাস, কৌশানীর এই কথা শুনেই কিংশুক ইনস্ট‍্যান্ট প্ল‍্যান করে ফেলে। হাজার ভালো না লাগলেও এবার সরস্বতী পুজোয় কিংশুক হলুদ পাঞ্জাবি পরেই ওর প্রেয়সীর সামনে যাবে। আর মনের গোপন কথাটা, যেটা এখনও বলা হয়ে ওঠেনি ওর। সেই কথাটা বলার জন্যও ওই দিনটাই বেস্ট।

কথাগুলো এক মনে ভাবছে ও, ঠিক তখনই দাদার হলুদ পাঞ্জাবিটা ওর হাতে দিয়ে ঠাট্টা করে মা বলে উঠল, “সত্যিই বন্ধুরা বলেছে বলে, নাকি বিশেষ কোনো বান্ধবী বলেছে বলে পাঞ্জাবির খোঁজ পড়ল?” বলেই হো হো করে হেসে ফেলেন মন্দিরাদেবী।

“মাআআআআআআ… তুমিও না, কি সব বলো!” বলে মা’কে জড়িয়ে ধরে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে নেয় বাবিন। পাঞ্জাবিটা খুঁজে পাওয়ার আনন্দে খুব খুশি ও। বাবিন আর ওর মায়ের সম্পর্কটা ছেলে ও মায়ের সম্পর্কের সাথে সাথে খুব মিষ্টি এক বন্ধুত্বের সম্পর্কও বটে।

 

ভোর ভোর থাকতেই মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল কিংশুকের। আজ তো সরস্বতী পুজো। বাড়ির পুজোর জোগাড় করে ফেলেছে প্রায় পুরোটাই মা আর দাদা মিলে। বাবা ঠাকুরের জায়গাটা ফুলের মালা, রঙিন কাগজ দিয়ে সাজাচ্ছেন। বাবিন তাড়াতাড়ি স্নানে দৌড়ল। গায়ে কাঁচা হলুদবাটা মেখে স্নান সেরে হলুদ পাঞ্জাবিটা পরে নিল। নাহ্, খুব একটা খারাপ কিন্তু দেখাচ্ছে না ওকে। কেন যে এতদিন পাঞ্জাবির সাথে বৈরিতা ছিল ওর কে জানে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে দেখতে আপন মনেই হেসে ফেলল ও।

ঠাকুরমশাই চলে এসেছে ততক্ষণে, মন্ত্রোচ্চারণ, ঘন্টাধ্বনিতে ঘর গম গম করছে ওদের।

উফফফ্, কিংশুকের আর দেরি সইছে না। ঠিক সাড়ে ন’টায় প্রীতম, কৌশানী, মৃন্ময়ীরা কলেজ মাঠে চলে আসবে বলেছে। বাড়ির পুজো শেষ হতেই কিংশুক-ও বেরিয়ে পড়বে।

ঠিক ন’টা বাজতে পাঁচে কিংশুক কলেজে পৌঁছে গেল। তখন কলেজের পুজোর জোগাড় চলছে…। মৃন্ময়ী, দেবারতি বাকিদের সাথে পুজোর টুকটাক কাজ করছে। কিন্তু কৌশানীকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছে না ও! তবে কি ও এখনও আসেনি! ঠিক আছে, আরও কিছুক্ষণ না হয় অপেক্ষা করাই যাক। সবুরেই তো মেওয়া মেলে।

খানিকক্ষণ বাদে হঠাৎ মাইকে অ‍্যানাউন্সমেন্ট হল, পুষ্পাঞ্জলি হবে এবার। সবাই চলে এসেছে। ধুর্, পুজো প্রায় শেষের পথে, তবুও কৌশানীটা এখনও এসে পৌঁছতে পারলো না! বেয়াক্কেলে মেয়ে একটা! একরাশ মন খারাপ নিয়ে প্রীতম, শৌনক, দেবারতি ও বাকিদের সাথে কিংশুক-ও এগিয়ে গেল মন্ডপের সামনে।

মন্ত্রোচ্চারণ শুরুর ঠিক আগেই যেন ওর কানের কাছে মিষ্টি সুরের মন্ত্র ধ্বনির মত করে এক মেয়ে কণ্ঠ ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো, “হলদে পাঞ্জাবিতে তোকে হেব্বি লাগছে।” পাশে মাথা ঘোরাতেই দেখে বাসন্তী রঙা শাড়িতে কৌশানী। উফফফ্, মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতই সুন্দরী লাগছে আজ ওকে।

 

কৌশানী, কিংশুকের চোখে চোখ রেখে, বন্ধুদের আড়াল করে বলল, “জানিস তো, হলদে পাঞ্জাবি আর বাসন্তী শাড়ি আজকের দিনে পারফেক্ট ম‍্যাচ?” বলেই,ফিক্ করে হেসে ফেললো। ওর কথা শুনে কিংশুক অবাক হতে গিয়েও এক গাল হেসে ফেলল। আস্তে করে কৌশানীর হাতটা সকলের অগোচরে নিজের হাতে আলগোছে ধরে বলল, “ভালোবাসি, শুধু তোকেই ভালোবাসি।”

পুষ্পাঞ্জলি শুরু হল… হলুদ পাঞ্জাবি ও বাসন্তী শাড়ি একসাথে বিদ্যাদেবীর মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করল…”ওঁ জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে”…….।

 

লেখা : রাজনন্দিনী
ছবি : জ্যোতিশিখা

 

Holud Punjabi O Basanti Sari    |    Rajnandini    |    Jyotisikha    |    https://pandulipi.net    |    Emotional    |    Devotional    |    Bengali    |    Love Story    |    Story

Author: admin_plipi