জন্মদিন

<?php
    if (function_exists('zeno_font_resizer_place')) {
        zeno_font_resizer_place();
    }
?>

বিকালের চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখে অভিরূপ তখনো বসে, এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল। পিনাকেশ বাবুর ফোন। “দাদা, শুনেছেন নিশ্চয়ই খবরটা!” “হ্যাঁ, এখনো টিভির সামনেই। এই মাত্র ভাবছিলাম আপনাকে ফোন করব একটা।” অভিরূপের গলায় কেমন যেন একটা বিষন্নতার সুর। “এ কি, অভিরূপদা, গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন? আজ তো আমাদের খুশীর দিন হওয়া উচিত। চলে আসুন সন্ধ্যায় আমাদের এখানে, একসাথে সেলিব্রেট করা যাক।” “আপনি তো জানেন পিনাকেশ বাবু আমার বাড়ীর অবস্থা, কিভাবে যাই বলুন?” অভিরূপ যেন অসহায়। পিনাকেশের গলায় কিন্তু খুশীর সুর- “কিচ্ছু ভাববেন না, আমরাই যাচ্ছি তাহলে আপনার ওখানে। মল্লিকা বৌদি কেমন আছেন এখন?” “ওই একই রকম।” “নো প্রবলেম! আমরা আসছি। নিখিলের জন্মদিন নেক্সট মান্থে, কিন্তু আজই আমরা পালন করব আপনার ওখানেই।” পিনাকেশের উৎসাহের সামনে অভিরূপের আর কিছু বলার থাকে না, “চলে আসুন- আমি অপেক্ষা করব।”

পিনাকেশ লোকটাকে অভিরূপের মনে মনে শ্রদ্ধা হয়- কিন্তু তিনি এটাও জানেন ওনার মতো হওয়া তাঁর নিজের পক্ষে সম্ভব নয়। ওনার মতো পজিটিভ লোক তিনি আর দুটি দেখেন নি। টিভিতে খবর শুনে মেয়ে ফোন করেছিল দিল্লি থেকে। কোন কথা নয়, দু মিনিট ধরে শুধু কেঁদেই গেল মেয়েটা। সেই থেকে মনটা ভারী হয়ে রয়েছে অভিরূপের। দুর্ঘটনাটার পর থেকেই আট বছর ধরে মল্লিকা শয্যাশায়ী পাথর, তিনিও স্বেচ্ছাবসর নিয়ে ছিলেন, সেও আট বছর হতে চলল। দিনের বেলায় একজন আয়া আসে মল্লিকার জন্য- সেই দু’বেলার রান্না করে দেয়। রাতে স্ত্রীর দেখাশোনা অভিরূপ নিজেই করেন। বছর দুয়েক হল নীচের ঘরগুলো ভাড়া দিয়েছেন, তাছাড়া তাঁর নিজের পেনশন আছে। পিনাকেশ যথেষ্ট অবস্থাপন্ন, সদ্য অবসর নিয়েছেন অধ্যাপনা থেকে, কিন্তু ওনার স্ত্রী এখনও টেলিকম ডিপার্টমেন্টে কর্মরতা। করুনাময়ীর কাছে সুদৃশ্য দোতলা বাড়ী- অভিরূপ কয়েকবার গিয়েছেন সেখানে।

মল্লিকার ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখলেন- শুয়ে আছেন, চোখ বোজা- হয়তো ঘুমোচ্ছেন। অভিরূপ ডাকলেন না, আয়াকে বললেন আর একটু থাকতে। বেশীক্ষন লাগবে না, পিনাকেশ বাবুদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আয়া একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিল, মুখে কিছু বলল না। ফিরে এসে দেখেন মল্লিকাকে বালিশে ঠেস দিয়ে বসিয়ে আয়া চা খাওয়াচ্ছে। অভিরূপ বললেন, “আমাদের একজন গেস্ট আসবেন এখন, তুমি বৌদিকে একটা ভাল নাইটি পরিয়ে দিয়ে বরং চলে যাও আজ।”

পিনাকেশরা এলেন ঠিক সাড়ে সাতটায়। দু’জনের হাতে ঠাসা জিনিস- ফুলের তোড়া, মালা, মিস্টি। অনুপা “আমি নিখিলের জন্যে আজ পায়েস করেছি” বলে ব্যাগ থেকে একটা টিফিন ক্যারিয়ার বার করলেন। পিনাকেশ বললেন, “আজ যেন কেমন শান্তি লাগছে মনের ভেতর। কেমন যেন যুদ্ধ জয়ের অনুভূতি। তাই অক্টোবরে নিখিলের জন্মদিনটা আজই পালন করব ঠিক করলাম।” অভিরূপ বললেন,”আজ রমা আর নিখিলেশ আমাদের সঙ্গে থাকলে…” ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন প্রৌঢ়। পিনাকেশ ওনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিলেন। চোখের জল মুছে অনুপা বললেন, “কাঁদবেন না দাদা, আজ কাঁদার দিন নয়। সমাজের সাথে বাচ্ছাগুলো বীরের মতো মোকাবিলা করেছিল, পুলিশের অত্যাচারটা আর সহ্য করতে পারলো না।” পিনাকেশ ব্যাগ থেকে ছেলের একটা ফ্রেমে বাঁধানো ফটো বার করে টেবিলের ওপর রাখলেন, বললেন, “আট বছর হয়ে গেল নিখিল আর রমা এক হয়ে গেছে। বডি যখন পাওয়া গেল রেললাইনে তখনো দুজনের হাত ধরা ছিল। কি গভীর ভালোবাসা ছিল ওদের।” টেবিলের ওপর মিস্টি, পায়েস সাজাতে লাগলেন অনুপা।

ধরা গলায় অভিরূপ বললেন, “আজ দুজনেরই জন্মদিন পালন হোক একসাথে, আদালতের রায়ে আজ ওদের নবজন্ম হল।” তাঁর হাতে তখন দেওয়াল থেকে নামিয়ে আনা রমাকান্তর ছবিটা, আর পাথর মল্লিকার দু গাল বেয়ে নামছে অশ্রুধারা।

লেখা ও ছবিঃ অরিন্দম

Janmodin    |    Arindam    |    Arindam    |    https://pandulipi.net    |    Emotional    |    Bengali    |    Story

Author: admin_plipi