বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ২)

বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ২)
শিপ্রা মজুমদার তরফদার

“বাবা, এরকম করে আমরা যদি থাকি তবে খুব মজা হবে বল। নাড়ু রেবা, লাল্টু, সবাই আমরা কত কাছাকাছি আছি। একটাই আমাদের বারান্দা, খাচ্ছি আমরা একসাথে, কত মজা না!” বিশ্বের কথার কি উত্তর দেবে রামু বুঝে পায়না। এই ছোট্ট ছেলেকে কিভাবে বোঝাবে এভাবে বাঁচার কোন নিশ্চয়তা নেই। বউটার আবার শরীরটা ভেঙ্গে পড়েছে। সকাল থেকে বমি করছে, বিছানা নিয়েছে সন্ধ্যা।
অনেক পথ হেঁটে ওরা খুব ক্লান্ত। পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরা নিয়ে নাকি অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে। নয়ন বলছিল পথে ও শুনেছে একজন বলছিল টিভিতে ওদের দেখাচ্ছে। সরকার ওদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেবে। কয়েকজন পুলিশ এসে ওদের কয়েকজনকে এই স্কুল বাড়িতে দুদিন থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সকালে কয়েকজন লোক এসে ওদের কিছু শুকনো খাবার দিয়ে গিয়েছে। দুপুরে শুনেছে খিচুড়ি আসবে ওদের জন্য। যাক ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। দুদিন সেরকম কিছুই পেটে পড়েনি। আজও যদি খাবার না জুটত ছেলে বউ নিয়ে বাড়ি ফেরায় হয়তো হ’ত না।
স্কুল বারান্দায় বসে সাত-পাঁচ ভাবছিল রামু। এমন সময় নয়ন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়ায়। বলে, “রামুদা, ওদিকে তো প্রধানমন্ত্রী লকডাউন আবার বাড়িয়ে দিল। ঘরে কবে ফিরবো দাদা?” রামু দাস উপরে তাকায়, “জানিনা ভাই। আমাদের কপালে কি আছে কে জানে? এদিকে তোর বৌদি তো বিছানা নিল ঘরের পথ তো এখনো অনেক বাকি।” একটু দূরে সরে বালা আপন আনন্দে খেলছে। সব সময় এরা একে অপরকে পাচ্ছে, এর চেয়ে খুশি আর কি হতে পারে ওদের জীবনে?
সন্ধ্যার শরীর রাতের দিকে খুব খারাপ হয়ে যায়। এই অচেনা পরিবেশে ওরা বুঝে পায় না কি করবে। ভগবান কে ডাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। গভীর রাতে সন্ধ্যার শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়, বারবার বমি করে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। ভোর রাতে রাম ওর হাতে হাত রেখে সন্ধ্যা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কিছু বুঝে উঠবার আগেই সব শেষ হয়।
চলবে …

Author: admin_plipi