
বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ৬)
শিপ্রা মজুমদার তরফদার
পুরনো বন্ধু ভোলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে রামুর। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। পুরোনো ভিটের পাশে গাছ তলায় বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই। ছেলেটাও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। পাড়াতে মস্তান বলে পরিচিত ছিল ভোলা। ওর চেয়ে ২ বছরের বড়।
-“কিরে? মুখ দেখে তো রামু বোধ হচ্ছে! তা এখানে এভাবে কেন পড়ে রয়েছিস? ওঠ ওঠ, চল আমার বাড়ি। …তবে ঘরে কিন্তু তোকে থাকতে দিতে পারব না। দূর থেকে এসেছিস, ঘরে ঢোকাতে পারব না তোকে।”
রামু কৃতার্থ হয়ে চলে ভোলার পেছনে পেছনে। পথে রামুর মুখে সব কথা শোনে ভোলা।
-“তা এই মা মরা ছেলেটিকে নিয়ে এখন কি করবি তুই? ভুল হয়েছে তোর চট করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া। দীর্ঘদিন তোর খোঁজ খবর নেই, আপন বলতে কেউ এখানে নেই। তা তোর ঘর কি এখানে তোর দিকে চেয়ে বসে থাকবে রামু? দেশের এই দুর্যোগে এখন কি করবি, কোথায় যাবি তুই ছেলেকে নিয়ে বল তো?”
রামু নিরুত্তর, এ সেই ভোলা যাকে পাড়ার কোন লোক পছন্দ করত না, কোন ছেলে মিশত না। সে আজ কত ভালো ভালো কথা বলছে। সময় মানুষকে বদলে দেয় হয়তো এভাবেই।
পায়ে পায়ে বাপ-বেটা ভোলার দাওয়াতে এসে হাজির হয়। ভোলার মা রামুকে চিনতে পারে। বাপ-বেটাকে পেট পুরে খাওয়ায়। ভোলার প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখে জল চলে আসে রামুর। ওর ছেলেটা কত দিন পেট পুরে খায়নি। আজ বিশ্বকে দেখে পরম শান্তিতে মনটা ভরে যায় রামুর। শেষপর্যন্ত ভোলার গোয়াল ঘরের এক কোণে বাপ-বেটার শোয়ার ব্যবস্থা হয়।
ভোলা এই সময় ক্লাবের ছেলেদের সাথে ত্রাণ দিতে এদিক-ওদিক যাচ্ছে মাঝে মাঝে। সেখানেই কানে এসেছে ভিনদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের ঘরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। রোগ মহামারী হচ্ছে দিনে দিনে। সরকার পরিযায়ীদের সবার থেকে আলাদা থাকতে বলেছে। তাই ভোলার রামুর জন্য কষ্ট হলেও ঘরে ঢোকাতে সাহস পায় না। কারণ ওর বুড়ো বাবা অনেকদিন হলো বিছানা নিয়েছে। রোগ বড় ছোঁয়াচে, কোথা থেকে কি হবে বলা যায় না।
দু-তিন দিনের মধ্যে সূর্যনগর এলাকায় কথাটা ছড়িয়ে পড়ে যে দিল্লি থেকে এসে রামু দাস আশ্রয় নিয়েছে ভোলার বাড়িতে। পাড়াগাঁ ঘরে-ঘরে কথাটা হতে থাকে সবসময়। ওই বাপ-বেটা বুঝি দিল্লি থেকে করোনা রোগ সাথে করে নিয়ে ঢুকেছে গ্রামে। আতঙ্ক এমন আকার নেয় যে ভোলাদের বাড়ি গ্রামের লোকের কাছে অচ্ছুত হয়ে যায়। ভোলার কাছে রামুর নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। হাতে যতটুকু টাকা পয়সা ছিল জমানো সব রামু ভোলার হাতে তুলে দেয়। ভোলা নিতে প্রথমে রাজি হয় না, কিন্তু পরে এতগুলো মানুষের পেট চালানোর কথা ভেবে নিয়ে নেয় সে। সময়টা ভীষণ খারাপ, নাহলে আজ রামুর পাশে ভোলা সবসময় থাকত। যদি ওর পড়ে থাকা টোটো চালিয়ে রামু দুটো পয়সা আনত তাহলে অভাব আর থাকত না। কিন্তু সে পথ যে আজ বন্ধ।
চলবে …
পড়তে পড়তে আমি নিজেকে রামুর সাথে একাত্ম করে ফেলেছি। ভোলাকে সখ্যাট ভগবান মনে হলো। আজ এই নিম্ন শিক্ষিত মানুষ টি না মানবিকতার পরিচয় দিলো, আমরা পারতাম?
দারুন লাগছে। অনেক দিন থেকে পড়তে পড়তে চরিত্রগুলো খু চেনা হইয়ে গেছে। ভোলা অতিমামব। আমরা এই সাহস সত্যি দেখতে পারতাম না।
খুব মনেহাছিল রামু একটা থাই পাক। শিশুটির কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল। আজ তাও মনটা একটু ভালো লাগলো।
Nice ongoing. Episodes are not comming in regular basis.
Ramjr Anonder dine choke jol elo. Bachata khete pelo. Volar ei punyo sarajiboner kharap kajke otikrom koruk.
Ram er
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ.. আমরা সত্যি গল্পের চরিত্রের সাথে নিজেদের একাত্ম করে ফেলি… রামুর আনন্দে আমাদেরও আনন্দ হয়