তাল তলার মাঠে ।। লেখা : অসীম কুমার চট্টোপাধ্যায়
সেদিন ছিল উত্তরপাড়ার সাথে আমাদের কলাবাগানের শিল্ড ফাইনাল। দুটো টিমই খুব ভালো। হাবুল স্যার আমাদের দলের কোচ। কয়েকদিন ধরে খুব প্রাকটিস করাচ্ছেন ছেলেদের। স্কুল থেকে ফিরেই আমরা সোজা চলে যাই তালতলার মাঠে। প্রাকটিস দেখি। বিকেল সাড়ে তিনটের সময় খেলা শুরু। মাঠ কানায় কানায় ভর্তি। রেফারি এবং দুজন লাইন্সম্যান মাঠে নেমে পড়েছে। উত্তরপাড়ার ছেলেরা নেমে পড়লো মাঠে। কিন্তু আমাদের কলাবাগানের ছেলেরা কোথায়? রেফারি হুইসেল দিয়ে অপেক্ষা করছে। সবার দৃষ্টি ক্লাব ঘরের দিকে। একটু গুঞ্জন শোনা গেল। হঠাৎ হাবুল স্যার আমাকে ডেকে পাঠালেন।
কাছে যেতেই বললেন, “তুই লব কুশদের বাড়ি চিনিস?”
লব আর কুশ দুই জমজ ভাই। দুজনেই টিমে আছে।
বললাম, “চিনি। ওদের বাড়ি মন্ডলপাড়ায়। অনেকটা দূর।”
তুই এক কাজ কর, এই নে কুড়ি টাকা। ওদের ধরে রিকশা করে নিয়ে আয়। এক্ষুনি যা।”
আমি ছুটলাম মন্ডলপাড়ার দিকে। ওদের বাড়ির সামনে ভিড়। লব কুশকে দেখতে পেলাম না। একজনকে জিজ্ঞেস করতে বলল, “ওদের ঠাকুমা মারা গেছে। ওরা শ্মশানে যাবে।”
ফিরে এসে হাবুল স্যারকে ঘটনাটা বললাম। স্যারের মাথায় হাত। আর দেরি করা যাবে না। আমাকে আর পল্টা কে জোর করে মাঠে নামিয়ে দিল। আমি স্টপার। আমার কাছে বল এলেই ভন্টু চেয়ে নিচ্ছে। অবশ্য আমার কাছে বল এসেছেই বা কটা? হাফের প্লেয়ারগুলো নিচে নেমে এসে বল ক্লিয়ার করছে। খুব ইচ্ছা একবার অন্তত বল ড্রিবল করে একটা গোল দিয়ে আসা। এসে গেল সুযোগ। খেলা শেষ হবার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে একটা বল পেলাম। সামনে ওদের দুজন প্লেয়ার ছুটে আসছে। গোল কিপার ভন্টু এগিয়ে এসেছিল। চিৎকার করে বলল, “ব্যাকপাস কর। আস্তে করে ঠেলে দে আমার কাছে।” আমি ওর কথা না শুনে ড্রিবল করতে গিয়ে নিজের পায়ে বল জড়িয়ে আছাড় খেয়ে পড়লাম। ফাঁকা বল পেয়ে গেল ওদের প্লেয়ারটা। আড়াআড়ি পাস দিল দ্বিতীয় জনকে। সে নিখুঁত ভাবে বলটা ঠেলে দিল আমাদের গোলে। শুয়ে শুয়ে দেখলাম কিভাবে বলটা জড়িয়ে গেল আমাদের গোলপোস্টের জালে ।