রিয়ানা ।। লেখা : সবিতা বিশ্বাস
রিয়ানার দিম্মা প্রতিদিন সকালে সাজি ভরে ফুল তোলে, রিয়ানারও ফুল তুলতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু সকাল হলেই তো ছুট্ ছুট্ ছুট্। না ছুটলে হবে? তোমাদের তো আর টুবি মিসের ক্লাস করতে হয় না, তাই জানো না। বাব্বাঃ, টুবি মিসের কি রাগ! তা রিয়ানার কি দোষ বলো! বাবার স্কুটার খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে! তবে আর দেরী হবে না, রিয়ানা এখন মিশা, টিটো, মিতুলদের সাথে পুল কারে চেপে স্কুলে যাচ্ছে। টিটো খুব বাজে, ওর জন্যেই সে টুবি মিসের কাছে বকুনি খেয়েছে। রিয়ানা এখন ফাইভ প্লাস, ক্লাসে গল্প করতে নেই সে কি জানে না? কিন্তু ও তো গল্প করছিল না, ফিসফিস করে মিশা, মিতুলকে বলছিল ওদের বাড়িতে টুনটুনি পাখির তিনটে ছানা হয়েছে। এটা কি গল্প হল? মিস তিনজনকেই দাঁড় করিয়ে রিয়ানাকে বললো, “আমি রোববার দিন তোমাদের বাড়ি গিয়ে বাচ্চাগুলো নিয়ে আসবো।” খুব ভয় পেয়েছে রিয়ানা, মিস যদি সত্যি সত্যিই বাচ্চাগুলো নিয়ে যায়, কি হবে? ওরা তো খুব ছোট, এখনো ডানা গজায়নি, মাকে ছাড়া কি করে থাকবে? বাড়ি এসে দিম্মার কোলে শুয়ে রিয়ানার কি কান্না। রবিবারে দিম্মার সাথে ফুল তুলতে গিয়ে রঙ্গন গাছের ডালে বুলবুলি পাখির বাসাটা প্রথমে রিয়ানাই দেখেছিল। সকালে বিকালে যখনই সময় পেত ছুটে ছুটে ছানাগুলো দেখত। মা পাখিটাও চিনে গিয়েছিল রিয়ানাকে, ওকে দেখে মোটেই ভয় পেত না।বাড়ির সবাই অনেক করে বোঝালেও পরের দিন রিয়ানা স্কুলে গেল না। তাই বলে টুবি মিস, মানে মিস তুলিকা বসু, যে সত্যি সত্যিই ওদের বাড়ি চলে আসবেন এটা ভাবতে পারেনি রিয়ানার মা, দিম্মাও। মিসকে দেখেই রিয়ানা দিম্মার আঁচলের তলায় লুকিয়েছে। মিস যত বলে, “ভয় পেয়ো না, আমি পাখি নিয়ে যাবো না। তবে ক্লাসে আর কখনো কথা বলবে না, কেমন! আমি ওদের ছবি তুলতে এসেছি।” রিয়ানা তবুও ভরসা পায় না। তারপর মিস রিয়ানাকে আদর করে ক্যাডবেরি দিয়ে বাচ্চাগুলোর ছবি তুললো, তখন রিয়ানার মনে হল মিসকে তো একটুও রাগী লাগছে না। চুপিচুপি দিম্মাকে বলল, “মিস খুব ভালো, একদম মায়ের মতো।”