শ্রেয়া ও আমি ।। লেখা : সুবীর মজুমদার
আমি ঈশানী। বাবা আমাকে আদর করে পুটু বলে ডাকেন। অন্যেরা ডাকে পুটি বলে। আমার মাসির মেয়ে গুল্লি প্রায়ই আমাকে পুঁটি মাছ বলে। পুঁটি মাছ বললে আমার খুব রাগ হয়। আচ্ছা বল তো, আমি কি মাছ?
ছোটবেলার দিনগুলো কত ভালো ছিল। সারাদিন খেলা করতাম। কেউ পড়াশোনার কথা বলতো না। পড়াশোনা না করলে কেউ বকাও দিতো না। এখন আমি ক্লাস ওয়ানে উঠেছি। বাবার কাছে শুনেছি, আমার বয়স এখন সাত বছর। পড়াশোনা করতে ভালো না লাগলেও স্কুলে যেতে আমার খারাপ লাগে না। স্কুলে আমার অনেক বন্ধু হয়েছে। পম্পি, টুম্পা, চেতনা, অলকা- এরা সবাই আমার বন্ধু। ওদের সাথে খেলে আর গল্প করে আমার অনেকটা সময় কেটে যায়।
আমাদের বাড়ির পাশে আমারই বয়সী একটা মেয়ে থাকে। ওর নাম শ্রেয়া। ও কখনও স্কুলে যায় না। ওরা বেড়ার ঘরে থাকে। সবসময় ছেঁড়া জামা-কাপড় পরে। শুনেছি ওরা গরীব, তাই ঠিকমতো খেতে পায় না। আমি বাবা-মাকে প্রশ্ন করেছি, “শ্রেয়া স্কুলে যায় না কেন?!”
ওঁরা উত্তর দিয়েছেন, “ওর বাবার তো পয়সা নেই। তাই ও স্কুলে যায় না।”
আচ্ছা, পয়সা না থাকলে কি স্কুলে যাওয়া যায় না!
একদিন ছুটির দিনে বাড়ির জানলায় বসে খেলা করছি। একটা কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি, শ্রেয়ার খেলনাটা ভেঙে গেছে। তাই ও মায়ের কাছে খেলনার জন্য বায়না করে কাঁদছে। আমার কাছে অনেক খেলনা আছে। আমি তো সবক’টা নিয়ে খেলিও না। তাই চুপিচুপি একটা খেলনা নিয়ে এসে জানলা দিয়ে গলিয়ে দিলাম। হঠাৎ খেলনাটা পেয়ে শ্রেয়া খুব খুশী হ’ল। উপরের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ও একগাল হেসে দিল।
আজকাল শ্রেয়া আর আমি দুই বন্ধু হয়ে গেছি। আমার স্কুল ছুটির পরে ও আমাদের বাড়িতে আসে। আমিও ওদের বাড়িতে যাই। দু’জনে একসাথে মিলে অনেক গল্প করি, খেলাধূলা করি। আমার তো ভাই-বোন নেই। তাই শ্রেয়াকেই আমি নিজের বোন বলে মনে করি। একদিন বাবা এসে বললেন, শ্রেয়া আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমারই সাথে স্কুলে যাবে। তাই শুনে আমি আনন্দে ধেই-ধেই করে নাচতে লাগলাম।