
বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ৪)
শিপ্রা মজুমদার তরফদার
ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে, অবিরাম ছোটার পর এখন সে স্তব্ধ। ধীরে ধীরে ফাঁকা হচ্ছে ট্রেন। পরিযায়ীরা শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াইয়ের পর পেয়েছে তাদের গন্তব্য।
রামু ছেলের হাত শক্ত করে ধরে। এই ভিড়ে আবার যেন দলছুট না হয় সে। বিশ্ব অবাক চোখে দেখছে সবকিছু। কত বড় ট্রেন, কত মানুষ এটা করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়! স্টেশনে তেমন ভিড় নেই, চারদিকে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্ব এক টানে মুখের ঢাকনা সরিয়ে দেয়। রামু তাড়াতাড়ি আবার মাস্ক পরিয়ে দেয় ওকে। ট্রেনের সবাইকে পুলিশ এই মাস্ক দিয়েছে। এটা না পরলে বলেছে আটকে দেবে তারা। রোগ থেকে বাঁচার নাকি এটাই এখন রাস্তা। নয়নদের থেকে বিদায় নিয়ে রামু বিশ্বের হাত ধরে এগোতে থাকে। পায়ে হেঁটে এখন চলে যাওয়া যাবে তাদের পুরনো বসতবাড়িতে। আবার রামুর চোখে জল চিকচিক করে। যদি আজ বউটা ওদের সাথে থাকতো কতই না খুশি হতো আজ। সন্ধ্যা এত তাড়াতাড়ি রামুকে একা করে দিয়ে কেন চলে গেল?
অন্যমনস্ক ভাবে এগোতে থাকে রামু। বাড়ির কাছাকাছি আসতে দেখে সব কেমন অচেনা হয়ে গিয়েছে এই দশ বছরে। ছেলেটা তো প্রথম এই জায়গায় মুখ দেখল। বিশ্ব বাবার হাত ধরে হাটতে হাটতে অসংখ্য প্রশ্ন করে চলেছে। কিছু উত্তর রামু দিচ্ছে, কিছু ওর মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কোথায় রামুর সেই ছাপড়া ঘর? সেখানে একটা সিমেন্টের ঘর দেখা যাচ্ছে! সব ভেঙ্গে ফেলেছে ওর শরিকরা। এখন এখানে ওকে থাকতেই হয়তো দেবে না। ভয়ে ভয়ে গুটিয়ে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় রামু। ভেতর থেকে ঘোমটা মাথায় একটা বউ বেরিয়ে আসে, বলে, “কাকে চাই? একেবারে যে দাওয়ায় উঠে এসেছ! দূরে যাও, দূরে যাও।”
-“আমি রামু গো, এই গ্রামের ছেলে।”
বউটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। পিছন পিছন এক বয়স্ক লোক বেরিয়ে আসে।
-“মাধব কাকা না? আমি রামু।”
মাধবের চোখের দৃষ্টি অনেক কমে এসেছে। কাছে এগিয়ে আসে। বউটি হঠাৎ টেনে ধরে ধরে বুড়োকে।
-“কাছে যাও কেন বাবা?”
মাধব ঠাহর করতে পারে রামুকে।
-“ও! তা তুই কোথা থেকে এলি এ সময়?”
রামু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, “তোমার বউমা আর নাই মাধব কাকা। আমরা বাপ ছেলে এখন থেকে এখানে থাকবো গো।”
-“না, দূর হ এখান থেকে। এই রোগ ভোগের সময় তোদের এখানে জায়গা হবে না। যেখানে ছিলি সেখানে চলে যা।”
মুখের উপর দরজা বন্ধ করে ওরা ঢুকে যায় ঘরে। রামু ছেলের দিকে অসহায় ভাবে তাকায়। বিশ্বের চোখে জল।
-“বাবা, খুব খিদে পেয়েছে আমার। খাবার দাও বাবা।… ও বাবা, তুমি কাঁদছো কেন? আমাকে তাড়াতাড়ি খাবার দাও।”
অবিরাম বলে চলেছে বিশ্ব। আর রামু ওর হাত ধরে বসে আছে দাওয়ায়। খিদে পেয়েছে কিন্তু কোথায় এখন পাবে খাবার? হাঁটার শক্তি নেই। বিশ্ব কাঁদতে কাঁদতে বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। রামু উদাস ভাবে তাকিয়ে থাকে ওর পুরোনো ভিটেটির দিকে।
চলবে …
মর্মান্তিক। প্রিয় জন চেনা মানুষ অচেনা হয়ে যাচ্ছে।
মাধব কাকা স্বার্থপরতার পরিচয় দিল। অমানবিক
সবকটি পড়লাম। এটা ত9হ বড় গল্প পার্ট করে চলছে।
উফফ বাচ্চাটার কথা ভেবে মন কেমন করছে। সন্তান মা হারাল, পিতা ভিটা মাটি সব হারাতে চলেছে। জীবন এক ধাক্কায় সব পরিবর্তন করে দেয়।
Sadistic story.
রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত লাইন-
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া
Awsome story. Strikes me out of pain.
Eder jonno kichu kora dorkar.
অসাধারন গল্প। চরিত্র বর্ণনা এত সুন্দর। লেখিকা আপনাকে সাধুবাদ। এমন ঘটনা তুলে ধরার জন্য। আমি বিগত কতেক মাস পাণ্ডুলিপি পড়ছি। অসাধারন খেলহ বের হচ্ছে এখানে।
কয়েক, লেখা
বানান ত্রুটি মার্জনা করবেন
খুব ভালো লেখা। এই ম্যাগাজিন টিকে এমন লেখা পরিবেশন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। কে বা এই মনুষ গুলোর দুঃখ দুর্দশা দের নিয়ে ভাবে। আপনারা তাও সাহিত্যে ওদের তুলে ধরছেন।
ধন্যবাদ সবাইকে আমার লেখা ভালো লাগার জন্য.. মনটা নিশ্চই খারাপ হয়ে যায় গরিব মানুষদের মর্মান্তিক পরিণতি দেখে.. কিন্তু এটাই তো বাস্তব.. এর মধ্যেই হয়তো এরা জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলে
এর পর হয়তো এই সব মানুষের প্রতি আমাদের ধারণা কিছুটা হলেও পাল্টাবে।
গল্পটা পড়তে পড়তে চোখের সামনে বেদনাদায়ক ছবি ভেসে উঠছে। মনটাকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায়———–?
শেষ প্যারাগ্রাফ টি অত্যন্ত মর্মান্তিক
অন্তত শিশুটির কথা ভেবে পরিবারবর্গ ভাতে ভাত খাইয়ে দিতে পারত। বা একবেলা খাইয়ে দিত। পাশবিক। লেখিকা কে অজস্র অজস্র থ্যাংকস। অসাধারন লিখছেন একের পর এক। ~ঋতুব্র্ত সম
সবাইকে ধন্যবাদ… সব মানুষ সমান হয় না… তাই ভালো মানুষের সংস্পর্শে এরপর আমরা আসবো… ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
It was really heart touching! Keep up the good work!
অন্যায়ের পরাজয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে জয়ের পতাকা । খুব ভালো হচ্ছে এগিয়ে চল ।
Thank you নিরালাদি… তোমার comments আমাকে উৎসাহ যোগায়
অসাধারণ লেখনী….. একদম বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠেছে…..রামুর দূঃখ মনকে নাড়া দেয় …..তবে আশা যে রামু আকবররা এই বিপদ কাটিয়ে উঠবে ….কারণ পরিমলের মতো মানুষ রা রয়েছে ।
অসাধারণ লেখনী….. একদম বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠেছে…..রামুর দূঃখ মনকে নাড়া দেয় …..তবে আশা যে রামু আকবররা এই বিপদ কাটিয়ে উঠবে ….কারণ পরিমলের মতো মানুষ রা রয়েছে ।
Ki laraai suru holo ramu r!!!!!!!!! Bhite achhe thakar jor nei…