একাত্মতা

 

 

 

কিছুদিন থেকেই ইউনিভার্সিটি  থেকে বাড়িতে ফিরতে ঝিনুক দেরী করছিল। যদিও দেরী করাটা ইচ্ছাকৃত ছিল না। সেমিনার চলছে। বিকেলের দিক থেকেই প্রায় প্রতিদিন আকাশ কালো করে মেঘ জমছিল, কিন্তু বৃষ্টি টা হব হব করেও হচ্ছিল না। সেদিনই যে হঠাৎ অমন করে শহর ভাসিয়ে ঝোড়ো  হাওয়ার সাথে বৃষ্টি নামবে কে জানত।

ঝিনুক যদিও বৃষ্টি নামার আগেই জোরে পা চালিয়ে বাস স্টপে এসে বাস টা ধরতে পেরেছিল, কিন্তু যখন বাস থেকে নামল, তখন রীতিমতো পায়ের পাতা ডোবার মতো জল রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেছে। শাড়িটা একটু উঁচু করে নিলেও ততক্ষণে যা ভেজার ভিজে গিয়েছে ও। বৃষ্টি ভেজা দমকা হাওয়া যেন ওর সিক্ত শরীরকে  তীব্র ভাবে জড়িয়ে ধরে অবশ করে দিচ্ছিল। শীত করছিল ওর। পাতলা ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠছিল। ঝিনুক বুঝতে পারছিল জ্বর আসবে। ভেজার অভ্যেস নেই ওর। কখন যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল খেয়াল করেনি। গায়ের সামনে হঠাৎ একটা গাড়ি সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়তে ওর সম্বিত ফিরে আসে। কেউ ওর উদ্দেশ্যে  বলে ওঠে, “রাস্তায় চলতে চলতে ধ্যান করলে চলবে?” কিছুটা লজ্জিতই হয়ে পড়ে ও।

যখন বাড়িতে ঢুকল তখন রীতিমতো ঠান্ডাটা বসে গেছে। মায়ের কাছ থেকে আদা-চায়ের কাপ টা নিয়ে ঝিনুক ওর ঘরে এল। চা খেতে খেতে আজ ইউনিভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাবছিল। ঋতব্রত, ওরই সহপাঠী- চাপা স্বভাবের ছেলে। আজ দু’বছরের  মাথায় এসে শুধু ঝিনুকের হাত টা ধরে না বলা অনেক কথাই বলে ফেলল নীরব চোখের চাহনি দিয়ে। ঝিনুকের ফর্সা গালদুটো লাল হয়ে উঠেছিল। আর ভাবতে পারছে না ঝিনুক… চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে। জ্বরে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে। সারারাত অঝোরে বৃষ্টি ওর শরীরে মনে। তার সাথে যেন একাত্ম  হয়েছে প্রকৃতি।

একবার শুধু জ্ঞান ফিরেছিল ঝিনুকের,  তখন ও বুঝতে পেরেছিল ওর হাতটা কেউ একজন আঁকড়ে ধরেছিল। সে ছোঁয়ায় ছিল নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের সন্ধান। সেই  নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের বুকে ওর তৃপ্তির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ যেন আশ্বাস দিয়ে গেল… আমি তো তোমারই আছি, তোমারই থাকব…।

 

 

কলমে – দেবশ্রী

ছবি – নিকোলাস

Author: admin_plipi