লকডাউন ।। লেখা : শঙ্কর নাথ প্রামাণিক
দোতলায় ব্যালকনির পাশে পড়ার ঘরে ছোট্ট প্রকাশ। গতকাল বিকেলে সামান্য জ্বর হওয়ার পর থেকে মা তাকে পড়ার ঘরেই থাকতে বলেছে। প্রকাশ একা ছেলে। সঙ্গী বলতে মা আর বাবা। খেলাধুলা নেই, বন্ধুবান্ধব নেই। স্কুল যেন ইঁদুরদৌড়ের প্রতিযোগিতার স্থান। এখন বাড়িতে মা বাবাও দূরে দূরে থাকে।
প্রকাশ ছোট্ট জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। রাস্তা ঘাট একেবারে জনমানব শূন্য। মাঝে মাঝে দু একটা হকার সাইকেলে সবজি, ফল নিয়ে জোরে জোরে হেঁকে চলে যায় রাস্তাটা দিয়ে।
মানুষের ভয়ে যে কুকুরগুলো হিউমপাইপে লুকিয়ে থাকতো, তারা অবাধে রাস্তায় খেলে বেড়ায়। তাদের মুখে মাস্কের দরকার পড়ে না। প্রকাশ ঘরে থাকে তাও মাস্ক পরে। ঘুমোবার সময় শান্তি পায়।
রাতে প্রকাশ অনেক রকমের স্বপ্ন দেখে। দেখে রাতে সে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হওয়ার বেগে এদিক থেকে ওদিক। কখনো লাফ দিয়ে আকাশে উঠে যাচ্ছে, উড়তে উড়তে কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে। কি মজা!
তার চোখের সামনে গঙ্গা যমুনা সরু সুতোর মতো লাগছে। পাহাড়গুলো বেশ মজার, লুডোর ছক্কার মতো। মনে হচ্ছে হাত দিয়ে তুলে এখন থেকে ওখানে সরানো যাবে। কখনো সুন্দরবনে নেমে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর সঙ্গে খেলাও করে নিচ্ছে সে। কখনো লঞ্চে করে গঙ্গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বপ্নে একাই ভালো থাকে প্রকাশ, কোনো বন্ধুর প্রয়োজন হয় না তার।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলে এই বদ্ধ ঘরে সে যেন এক হয়ে যায়। এ বড়ো জ্বালাময়। মুখ ধুয়ে টিফিন করে শুরু হয় অনলাইনের পড়াশুনা। বড়ো বিরক্তিকর। তবুও তাকে পড়তে হয়।
দুপুরে খেয়ে দিয়ে ঘুম। বিকেলে পড়াশুনা। প্রকাশ অপেক্ষায় থাকে রাতের। বড়ো শান্তির সময় তার জন্য।
পাঁচদিন পরে রক্ত পরীক্ষার রেজাল্ট আসার পর বাবা ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে আসেন। প্রকাশ বিপদ মুক্ত।
রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর মা প্রকাশ কে নিজের কাছে ঘুম পাড়ান। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বাবা গল্প শোনান। টিভি দেখতে বলেন। কার্টুন খুলে দেন।
সবই ভালো লাগে প্রকাশের কিন্তু তার চিন্তার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে প্রকাশ। মায়ের সঙ্গে ঘুমোলে একটা স্বপ্নও দেখে না সে।