
সতী মায়ের মেলা
লেখা ও ছবি – সৌম্য গাঙ্গুলী
অনেক দিন ধরে ভাবছি কবে যাব, কবে যাব! এই করতে করতে আজ সকালে আমরা সবাই মিলে স্নান করে বেরিয়ে পড়লাম সতী মায়ের মেলার উদ্দেশ্যে। বহু প্রচলিত এই সতী মায়ের মেলা। কল্যানীর ঘোষপাড়া অঞ্চলটি এই সময় এক বিরাট মেলার চেহারা নেয়। অন্য সময় এই এলাকাটি ফাঁকাই থাকে সাধারণত।
এই মেলা নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনী জড়িয়ে আছে। কথিত আছে যে, ১৬৯৪ সালে তৎকালীন শান্তিপুরের কাছে উলা গ্রামের মহাদেব বাড়ুই নামের এক বৈষ্ণব ব্যক্তি সম্ভবত পূর্ণিমার দিন পানের বরজে একটি পুত্র সন্তান কুড়িয়ে পান। সেই পুত্রটির নাম রাখা হল পূর্ণচন্দ্র। এরপরে পূর্ণচন্দ্র শাস্ত্রের পাঠ নিয়ে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন এবং সিদ্ধিলাভের পর তাঁর নাম হয় আউলচাঁদ। বড় হয়ে আউলচাঁদ বেরিয়ে পড়েন ঘর থেকে এবং ঘুরতে ঘুরতে আউলচাঁদ চলে আসেন কল্যানীর এই ঘোষপাড়ার ডালিম তলায় প্রাঙ্গনে। এই দিকে এই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রীর মরণাপন্ন অবস্থা। তাঁকে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে বাঁচাতে ওই ডালিম গাছের কাছেই এক পুকুর (যা হিমসাগর নামে পরিচিত) থেকে মাটি তুলে সেই মাটি সারা গায়ে লেপে দেন আউলচাঁদ। কিছুক্ষনের মধ্যে ওই মহিলা সুস্থ হতে থাকেন এবং প্রাণ ফিরে পান। ওই মহিলার নাম ছিল সরস্বতী দেবী এবং ওনার নাম অনুসারে মন্দিরের নাম হয় ‘সতী মায়ের মন্দির’।
এর পরে তৈরী হয় আউল সম্প্রদায়। বহু মানুষের বিশ্বাস, আউলচাঁদই হলেন স্বয়ং শ্রীচৈতন্য। সতীমার সন্তানের নাম হল দুলালচাঁদ। কথিত আছে, এই দুলালচাঁদই নবদ্বীপের নিমাইচাঁদের আর এক অবতার। সাধারণত বাচ্ছাদের জন্য মায়েরা সতীমায়ের কাছে মানত করেন। মনস্কামনা পূর্ন হলে হিমসাগর পুকুরের জলে স্নান করে ভক্তরা দণ্ডি কেটে ডালিমতলায় পূজা দেন। মন্দিরের ডালিমগাছটার পাতা সারা বছর সবুজ থাকে, কোনো দিন ও শুকিয়ে যায় না।
ডালিমতলার বাইরেই অনেক পূজা দেওয়ার ডালি পাওয়া যায়। এখানে পূজার উপকরণ বলতে মাটির সরায় খই-বাতাসা কিংবা মঠ। সতীমায়ের মেলার মূল উৎসবটি হয় দোলের আগের দিন থেকে দোলের পরের দিন পর্যন্ত। সারারাত ধর্মীয় গান ও মেলার বিভিন্ন জায়গায় বাউল গানের আখড়া বসে। দোলের আগের দিন থেকে মেলা চত্বরটি যেন তার অপরূপ সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে। কিন্ত মেলাটি চলে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। মেলা মানেই নানারকম দ্রব্যের বিকিকিনি। এই সতীমায়ের মেলাও কোনো ব্যাতিক্রম নয়। এখানে বিভিন্ন রকমের খেলনার দোকান থেকে শুরু করে, বিভিন্ন রকমের বাসনপত্র, মনিহারি জিনিস, কাঠের জিনিসপত্র, পাথরের জিনিস, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, আরও কত কি। এছাড়া ইলেকট্রিক নাগরদোলা, সার্কাস, নানা ধরনের খেলাতো আছেই। আর মেলা মানেই কিছু খাবার দোকান তো থাকবেই। অসংখ্য জিলিপি, নিমকি, গুড়কাঠীর সাথে পাঁপড় ভাজার দোকান, আচারের দোকান ইত্যাদি মেলার ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে।
সারা বছরই সতীমায়ের পূজা দেওয়া যায় এই ডালিম তলায়। সতীমায়ের কাছে আসতে হলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে কল্যাণী সীমান্ত লোকাল ধরে কল্যাণী ঘোষপাড়া স্টেশন এ নামতে হবে। স্টেশন এ নেমে রিক্সা ভ্যানে বা টোটো ধরে সতীমায়ের মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া যাবে। বর্তমানে এই মন্দিরটি পরিচালনা করে সরস্বতী ট্রাস্ট এস্টেট। আমার মনে হয় যাঁরা মেলা ভালোবাসেন, যাঁরা নিত্য নতুন কিছু দেখতে ভালোবাসেন, যাঁরা বাউল গান শুনতে ভালোবাসেন এবং যাঁরা প্রাচীন তথ্য জানতে ভালোবাসেন তাঁদের এই সতী মায়ের মেলা অবশ্যই ভালো লাগবে এবং সমৃদ্ধ করবে।
দারুন
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৌম্য গাঙ্গুলী।
আপনাকে ধন্যবাদ
অসাধারণ
আপনাকে ধন্যবাদ
বেশ কয়েক বছর আগে আমি সতী মায়ের মেলায় গেছিলাম। দারুন অনুভূতি।
আপনকে ধণ্যবাদ।
এটা বেশ সুন্দর একটা লেখা। খুব ভালো লাগল পড়ে।
ধন্যবাদ
ডালিমতলায় আমার বাড়ি। দিনে দিনে মেলা আরো জমছে।
আপনাকে ধন্যবাদ। আমি কিছু বাদ দিয়ে ফেললে মনে করিয়ে দেবেন দয়া করে।
সুন্দর লেখা। প্রায় 4 বছর কল্যাণী ছিলাম। জানতাম ই না। মনে হচ্ছে আবার যাই।
নিশ্চয় ঘুরে আসুন। আরো কোনো তথ্য থাকলে সংযোজন করবেন অনুগ্রহ করে।
অনেকেই আমার মত আছেন যারা হয়ত এমন একটি ধর্মীয় স্থানের কথা জানান না যা কিনা হাতের নাগালে। ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।
ধন্যবাদ। এই সময় দেখে ফেলতে পারেন
সত্যি , এত কাছে যে এমন জাগ্রত সতী মায়ের মন্দির আছে অনেকেই জানে না। লেখক কে সাধুবাদ সকল কে অবগত করানোর জন্য। কল্যানির বাসিন্দা হিসেবে আমরা গর্বিত।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলে আমাদের এই বাংলায় এরকম অনেক সুন্দর সুন্দর ঘোরার জায়গা আছে যেগুলো কেউ জানেই না। এরকম সুন্দর লেখা শুধু পড়তেই ভালো লাগে তা নয়, ঘুরতে বেরোনোর ইচ্ছেটাকেও উস্কে দেয়।
নিশ্চয়। আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
Valo laglo pre
Thank you
Beautiful
Thank you
সুন্দর লেখা। খুব ভালোলেগেছে।
ধন্যবাদ
Like!! Thank you for publishing this awesome article.
Thank you
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও এই ধন্যবাদ জানাতে বেশ বিলম্বই হয়ে গেল, তার জন্য মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। আপনাদের উৎসাহ নতুন কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।