আইকম বাইকম ।। লেখা : চিত্রাভানু সেনগুপ্ত
শ্যামনগরের দুই যমজ ভাই আইকম আর বাইকমের দুষ্টুমির বহর আছে ষোল আনা। সকল সময়েই তাদের দুষ্টুমিতে থাকে নতুন চমক, কখনো কখনো সে দুষ্টুমি এমনই চমকপ্রদ হয়, পাড়ার লোকে তাদের তখন ডাকাত বলে ডাকে। আখেরে তারা দুষ্টু মোটেই নয়, তারা সকলের উপকারই করতে চায় বেশি। নিতান্ত মা একটু রাগি, তাই ‘ডাকাত ছেলে’ উপাধিটা তাদের ঘুচলো না। মাত্র এক বছর দুই মাস বয়সে আইকম দোতলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে এক্কেবারে নীচে পড়ে গেল, বাইকম তখন আইকমের নকল করে ইচ্ছাকৃত ভাবে গড়িয়ে পড়লো সিঁড়ি দিয়ে। মা বলেন সেই তখন থেকেই তাদের একখানা করে লেজ গজিয়েছে, কিন্তু একথা তাদের মোটেও বিশ্বাস হয় না। সেইদিন প্রবল বর্ষায় নিতান্তই উপকারের তাগিদে বাইকম উঠান থেকে কুড়িয়ে আনলো রাজ্যের কেঁচো, পোকা, শামুক আর জড়ো করে বারান্দায়। তাই দেখে আইকমও উঠোনময় লাফিয়ে বেড়ানো কেলে ব্যাঙটা ধরার জন্য ছুটলো পিছু পিছু। এমন সময় পা পিছলে ছিটকে যখন পড়লো, মা এসে পিঠের উপর দিলেন ঘা কতক। সেদিন আবার দুই ভাইয়ে মিলে পেয়ারা গাছের শুঁটকো ডালখানা ভেঙে যখন সটাং নীচে পড়লো, মা একটুও আদর না করে ধমক দিয়ে হেঁকে বললেন, “লক্ষীছাড়া বাঁদর।” ওদিকে পেয়ারা গাছটা যে বিনা খাবারে এক্কেবারে রোগা হয়ে গেছে সেদিকে যেন কারো নজর নেই। তাদের ভাতের থালা থেকে যত খুশি সবজি আর তেঁতো, মায়ের চোখের আড়ালে চুপ করে লুকিয়ে এনে গুঁজে দেয় পেয়ারা গাছের তলায়। এই এত্তো ভালো কাজের পরও মা তাদের দোষটাই দেখেন। একদিন দুপুর বেলায় ঘুমে ফাঁকি দিয়ে যেমনি উঠেছে ওরা, মা বললেন, “দুই ভাইয়ে মিলে পাতা ভরে নামতা লেখ। ষোল ঘর আর আঠারো ঘরের নামতা।”দুষ্টু হলেও লক্ষী ছেলে তারা। আইকম পাতা ভরে লিখলে “ষোল ঘরের নামতা, ষোল ঘরের নামতা…”বাইকম লিখলে?… আঠারো ঘরের নামতা, আঠারো ঘরের নামতা…”মায়ের অবাধ্য তারা হয় না কক্ষণো, নেহাত মা একটু রাগি তাই! এর পরেও মা তাদের একটা সময়ে বড্ড আদর করেন। যখন তারা রাতের বেলায় মায়ের কোলে চুপটি করে ঘুমায়, তখন মা তাদের জড়িয়ে ধরে আদর করেন… “লক্ষী ছেলে, সোনা ছেলে আমার।”