তাতানের কথা ।। লেখা : সৌরভ চাকী
তাতান মন খারাপ করে পড়ার টেবিলে বসে। মা-বাবার কাছে খুব বকুনি খেয়েছে। আসলে স্কুলের ফাইনাল টার্মের রেজাল্টে ও মোটামুটি নম্বর পেয়ে ক্লাস ফোরে উঠেছে কিন্তু অঙ্কে খুব খারাপ। বাবা বলেই দিয়েছেন সামনের মাস থেকে বিকেলে একজন মিস শুধু অঙ্ক করাতে আসবেন, অর্থাৎ বিকেলে খেলতে যাওয়া বন্ধ। জানলা দিয়ে তাতান দেখতে পায় সামনের ছোট্ট মাঠটায় পাপাই, টুবাইরা ক্রিকেট খেলছে। ওকে দেখে ইশারায় ডাকে। তাতান মাথা নেড়ে জানায় যাবে না, কারন আজ থেকে ওর খেলতে যাওয়া বন্ধ। চোখ ভরে এল জলে। পাশে রাখা ড্রয়িং খাতাটা টেনে বসল। তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠতে থাকল খোলা আকাশ, মাঠ, উড়ে বেড়ানো পাখি আর প্রজাপতি। আঁকতে শুরু করলে ও সব ভুলে যায়। বাবা-মা ওকে এসব আঁকতে দেখলেই বলে, “এ সব এঁকে সময় নষ্ট না করে স্কুলের বইয়ের আঁকা প্র্যাকটিস কর।”
আসলে ওর এই ভালোলাগাটাকে রাঙাদাদু ছাড়া কেউ বোঝে না। দাদু মাঝেমাঝেই ওদের বাড়িতে আসেন। কলেজে পড়ানো ছাড়াও উনি একজন নাম করা আর্টিস্ট।
“কী করছো দাদুভাই?” পিঠের উপর হাতটা পড়তেই তাতান চমকে উঠল!
“রাঙাদাদু তুমি কখন এলে?”
“এই তো তোমাকে দেখবো বলে। বাহ্ কী দারুন এঁকেছ। চালিয়ে যাও ছেড়ো না। এটা আমাকে দাও তো।” এই বলে তাতানের থেকে আঁকাটা চেয়ে নিলেন।
তাতানের মা রাঙাদাদুকে বললেন, “দেখুন না পড়াশুনাতে মন নেই, শুধু খেলা আর আঁকা।”
রাঙাদাদু ওনাদের বোঝালেন, “দেখ,ওর আঁকার হাত দারুন, ঠিকঠাক গাইডে ও অনেক দূর যাবে। আর খেলাধুলা না করলে শিশুর মানসিক বিকাশ হবে কী করে? ওকে খেলতে দাও, ওর মতো আঁকতে দাও, দেখবে ঠিক ওর পড়াতেও মন আসবে।”
পরের রবিবার বাবা খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন, “দেখো ছোটদের পাতায় তাতানের আঁকা বেরিয়েছে।”
মা তো খুব খুশি। বিকেলবেলা রোজ একঘন্টা করে খেলার মাঠে যাওয়ার পারমিশানও পেয়ে গেল তাতান।
তাতানের এখন পড়ার টেবিলে প্রচুর প্রাইজ, বিভিন্ন ড্রয়িং কম্পিটিশনে জেতা। কাগজে, পত্রিকাতেও ওর আঁকা মাঝেমাঝে বেরোয়। আর স্কুলের ক্রিকেট টিমেও এবার চান্স পেয়েছে।
ওহ্, হ্যাঁ, আসল কথাটাই তো বলা হয় নি। এবারের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষায় তাতান অঙ্কে একেবারে একশোতে একশো।