
-“হ্যালো পরি, কিরে কোথায়, রাত ১১টা হয়ে গেল!”
-“হ্যাঁ, মা একটু দেরী হয়ে গেল, অফিসের ডিনার পার্টি এই শেষ হল। ঘন্টা খানেক এর মধ্যে পৌঁছে যাব। তুমি প্লিজ চিন্তা করো না, খেয়ে নিও।”
-“কিন্তু এত রাতে তুই একা একা…”
-“আরে চিন্তা করছো কেন? অভীক আর সন্দীপ আছে তো।”
-“ঠিক আছে, সাবধানে আয়।”
-“দেখলি তো, মা এখন চেঁচামেচি করছে… সেই কখন থেকে বেরোনোর কথা বলছি, তোরা বসে বসে ওইসব ছাইভষ্ম গিললি… এই চত্বরে কোনো ক্যাব পাওয়া যাবে না… সামনের ওই রেললাইনের পাশের বস্তিটা পার না করা পর্যন্ত চরণবাবুর ট্যাক্সিটা ভরসা… ধুরর্… তোদের কথা মত অফিসের গাড়িটাও ছেড়ে দিলাম …” বলে ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দুই বন্ধু তথা সহকর্মীর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো বছর সাতাশের আই. টি. ফার্মের কর্মচারী পরিধি।
-“চিল্ পরি… তুই ও না পারিস… অলওয়েস একটা গুডি গুডি লুক… মা বাবার অনুগত মেয়ে… ভাবা যায় এই বয়সেও তুই সিঙ্গল …” মুচকি হেসে বলল অভীক।
-“ইসসস্ … এত রাতে আর ইয়ার্কি ভালো লাগছে না… জলদি জলদি চল… কাল সানডে... তোদের ছুটি থাকলেও… আমার তো ছুটি নেই…” অধৈর্য্য স্বরে কথা গুলো বললো পরিধি।
-“ও হ্যাঁ হ্যাঁ.. ভুলেই গেছিলাম। আমাদের পরি সোনা তো ছুটির দিনে আবার সমাজ সেবা করে… কি সব অনাথ-বৃদ্ধ- বাচ্চা নিয়ে কারবার!”
-”তোর মত এরকম সুন্দরী, সিঙ্গল স্মার্ট মেয়ে পাব, ডিস্কো, পার্টি, বয়ফ্রেন্ড না করে যে কি পায় গড নোওস্!!” কথাগুলো বেশ ব্যঙ্গ করেই বলল সন্দীপ।
-“কি আর করা যাবে, আমার ভালো লাগে। সবার অব্জেকটিভ অফ্ লাইফ তো আর সেম হয় না। আর জানিসই তো বাবার ইচ্ছে ছিল আমি নিজেকে কোনো সেবামুলক কাজে নিয়োগ করি। নে, এবার একটু তাড়াতাড়ি হাঁট আর বকবক কম কর…” বিরক্তির সুরে বলল পরিধি।
-“তা ম্যাডাম, সমাজ সেবার পাশাপাশি তো একটু আমাদেরও সেবা করা উচিত আপনার… কি সন্দীপ ঠিক বললাম না…?” বেশ রসিয়ে রসিয়ে কথা গুলো বলে অভীক হাসতে শুরু করলো।
-“নেশা করে কি তোদের মাথা গেছে??? কি যে ভাট বকছিস দুজনে!!” কথাগুলো বললেও কেন জানি পরিধির মনটা আনচান করছে। খালি মনে হতে লাগল, “অফিস কারটা ছাড়া উচিত হয় নি… উফফ্, তার উপর সামনে বস্তি… হে ভগবান, ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছে দাও”… আজ যেন ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা বড়োই কু ডাকছে।
হঠাৎ করেই একটা হাতের স্পর্শ কাঁধে অনুভব করে চমকটা ভাঙ্গলো পরিধির। ঘুরে তাকিয়ে দেখে সন্দীপ কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে ওকে মাপার চেষ্টা করছে। পাশে অভীককে কিছু বলার চেষ্টা করতেই পরিধি বুঝতে পারল সন্দীপের সাথে সাথে অভীকের হাতদুটোও যেন ওর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলো ছুঁতে চাইছে। তীব্র প্রতিবাদ করার চেষ্টা করতেই সন্দীপ বলে উঠলো, “দেখ, ভালো করে বলছি… লেটস্ এনজয় দ্য নাইট… আর এনজয় তো শুধু আমাদের নয়… দু’পক্ষের হবে… বাইরের কেউ জানবে না… ওনলি উই থ্রি উইল নো অ্যাবাউট দা সিক্রেট…”কথাটা শোনা মাত্র পরিধি রাগে দুঃখে একটা সপাটে থাপ্পড় দিল সন্দীপের গালে। সন্দীপ এহেন উত্তরে একটু হতচকিত হলেও অভীক পরিধির হাতদুটো চেপে চিৎকার করে বলে উঠলো, “তবে রে, নিজেকে সতী বানানো!!! আজ তোকে বাঁচায় কে…”
-“প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে… দেখ তোরা এখন নেশা করে আছিস… তোরা তো আমার বন্ধু!!” কাঁদতে কাঁদতে আকুতি মিনতি করতে লাগল পরিধি।
-“হ্যাঁ রে, আমাদের নেশা হয়েছে… তোর নেশা… এই সন্দীপ, ধর তো চেপে…”।
কিছু বলার আগে অভীকের হাতটা পরিধির মুখ চেপে ধরলো। আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না পরিধির যে, ইচ্ছে করে ওরা এত লেট করলো আর এই জন্য ওরা ওকে অফিস কারে উঠতে দিল না। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে কোনো মতে একটু জোরে ধাক্কা মেরে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে ছুটতে লাগল। দৌড়তে দৌড়তে সে ওই অন্ধকার বস্তির সামনে। ঘুরে তাকিয়ে দেখে অভীক আর সন্দীপ ওর থেকে আর কয়েক হাত পেছনে, যে কোন মুহূর্তে ওকে ধরে ফেলবে। উপায় না পেয়ে বস্তিরই একটি ছোটো ঘরের দরজায় “বাঁচাও বাঁচাও…”চিৎকার করে করাঘাত করতে শুরু করল। এরই মধ্যে ওরা এসে ওকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
হঠাৎ করেই দরজা খুলে কেউ একজন বাইরে বেরিয়ে এসে বেলা, চামেলী, শবনম, কমলী, নাম ধরে ডাকতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু জন বেরিয়ে এল। ওদের গলা শুনে প্রথমে পরিধির একটু অবাক লাগছিল, বুঝতে পারছিল না এরা কে বা কি হতে চলেছে। ওরা আরেকটু সামনে এগোতে, অন্ধকার থাকলেও ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আর ওর চিনতে বাকি রইল না, যে এরা তো ওরাই, যাদের সাথে ওর রোজ ট্রেনে দেখা হয়, যাদের হাততালির আওয়াজে ও যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করে। ওদের দেখে ও রোজ মনে মনে ভাবত “এই টু-ইন-ওয়ান গুলোর কি কোনো কাজ নেই, এই ভাবে টাকা রোজগার করে। এরা তো শারীরিক ভাবে যথেষ্ট সুস্থ, ওরা কি খেটে খেতে পারে না!!” চমক ভাঙ্গলো সন্দীপের আওয়াজে, “খবরদার!! এটা আমাদের ব্যাপার। তোরা অমানুষগুলো এসবে একদম থাকবি না…দূরে সরে যা তোরা।”
“চু’কর মিনসে!!! তোগো লজ্জা করে না… আমাগো অমানুষ বলিস… এ্যাই ধর তো ওই হারামি দুইটাকে… এমন মার মারবি যে ওইডা ভুইলা যাবে ওরা মানুষের বাচ্চা না অন্য কিছু”… কথাগুলো বলতে বলতেই পরিধির গায়ে নিজের ওড়নাখানা জড়িয়ে দিল ওদের দলের লিডার মুমতাজ। “চিন্তা করিস না বহিন… মুই থাকতে তোর কোনো ক্ষেতি হতে দিমু না… হামাগো কেউ পসন্দ করে কাম কাজ দেয় না… তালি বাজায়ে পয়সা কামাই করি…” বাকি কয়েকজন তখন পুরোদমে সভ্য বদমাশ দুটোর ওপর চড়াও হয়েছে। মুমতাজ চিৎকার করে বলতে লাগল, “হামরা মরদ বা মেয়েছেলে হতি না পারি কিন্তু দিনের শেষে হাম লোগ মানুষ আছি… অমানুষ নাহি… এই শয়তানগুলোকে মাইরা দারোগাবাবুর কাছে দিয়া আসুম… আর তুকে হামরাই ঠিক বাড়ি পৌঁছাই দিমু, বহিন।” কথাগুলো শুনে ভক্তি শ্রদ্ধাতে পরিধির চোখের কোণ ভিজে উঠল।
“যাদেরকে এতদিন ও বিরক্তি সহ অবহেলা করতো আজ তারাই ওকে বাঁচালো আর ওর বন্ধুর মুখোশধারী জানোয়ারগুলো… আজ ওই বেলা, চামেলীরা না থাকলে কি হত… নাহ… বাবা ঠিক বলতেন মানুষের আসল পরিচয় দিনের শেষে। কে কতটা ভালো না খারাপ তার প্রকাশ অস্তাচলের পরে… রাতের গহীন অন্ধকারে…” রাতে বিছানায় শুয়ে এই কথাগুলো ভাবছিল পরিধি। বাবার ফটোটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ঠিক করে নিল, কাল সকালে এন.জি.ও. গিয়ে ওকে প্রথমে মুমতাজ, বেলা, চামেলী এদের ব্যাপারে কথা বলতে হবে। ম্যাডামকে বলে ওদের একটা কাজের সাথে যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। আফটার অল্ দিনের শেষে ওর নাম ও তো পরিধি। পরিধির মনের পরিধি তো এত ছোট হলে চলে না…।”
ওপারে টেবিলে রাখা, কারগিল যুদ্ধে শহীদ আর্মি অফিসারের ফটোটা যেন রাতের আঁধারে আরো বেশী জীবন্ত হয়ে উঠছে ।
কলমে – মাধবীলতা
ছবি – নিকোলাস
Diner Seshe | Madhabilata | Nicolus | https://pandulipi.net | Emotional | Bengali | Story
সুন্দর
ধন্যবাদ..
ভীষন সুন্দর
??
ধন্যবাদ
This writing refresh my mind
ধন্যবাদ ?
Valolaglo bes!!
ধন্যবাদ রাজনন্দিনী
?
ভীষণ সুন্দর কাহিনী
ধন্যবাদ ?
বাহ সুন্দর গল্প
ধন্যবাদ ?
সুন্দর গল্প।
ধন্যবাদ ?
খু্ব ভালো কনসেপ্ট । ভালো লাগলো লেখাটা ।
ধন্যবাদ ম্যাডাম.. ?
এভাবেই পাশে থাকবেন।
অসাধারণ গল্প৷
ধন্যবাদ ?
Bhalo laglo… “Poridhir moner poridhi….” khub sundor…
??
ধন্যবাদ..
Besh bhalo laglo !!!
??
খুব ভালো লাগলো , বিষয় টা অন্যরকম , তবে বাস্তব জীবনে অনেক তাৎপর্যপূর্ন ।
??
ধন্যবাদ
Like!! Really appreciate you sharing this blog post.Really thank you! Keep writing.
438610 954788This internet website is my intake , real good layout and perfect topic material . 649220