জামাই আদর ।। লেখা : প্রমিতা মান্না
শুভর ফোনে একের পর এক ফোন ঢুকছে। আমি কতক্ষণ ধরে রেডি হয়ে বসে আছি, বাপের বাড়ি যাব। কাল জামাই ষষ্ঠী, তাই আজই চলে যাব। এখন যা পরিস্থিতি কখন যে লকডাউন হয়ে যায় বোঝা যাবে না। শুভ ফোন রেখে দিয়ে আমাকে বলল, “শোনো একটা এমারজেন্সি আছে, এখনি চেম্বার খুলতে হবে। একটু ওয়েট করে যাও।” এখন চারিদিকে যা চলছে তাতে ডাক্তার পাওয়া খুব মুশকিল, তাই আমি আর না করলাম না। এদিকে মা বারবার ফোন করছে।
আমরা পৌছালাম। যেমন হয়, এতদিন পর গেছি বাবা মা তো খুশি হবেই, তবে জামাই এর প্রতি একটু বেশি যত্নশীল, যতই হোক একটাই জামাই কিনা! এদিকে ডাক্তার জামাই এর ফোন সর্বদাই বেজে উঠছে। না পারছে খেতে, না পারছে বসতে। এতদিন পর বাবার বাড়ি এসে এলাহি ব্যাপার দেখে ভালোই লাগছে। সেদিন আমরা ডিনার করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম। রাত পোহালেই জামাই ষষ্ঠী তাও আবার প্রথম, একটা তো এক্সাইটমেন্ট কাজ করেই! রাত পোহাতে না পোহাতে বাবা মাথা ঘুরে বাথরুম পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে হসপিটালাইজ করতে হয়। যদিও করোনার সময় বেড পাওয়া মুশকিল, তবু ওর পরিচিতি ছিল, তাই সম্ভব হয়েছে। ও আর ডঃ ব্যানার্জী দেখে বললেন যে বাবার প্রেসার খুব লো ছিল তাই মাথাটা ঘুরে গেছে, আর ফেটেও গেছে, অনেক রক্তও বেরিয়ে গেছে, এখনি রক্ত দিতে হবে। তখন দাদু দিদাও চলে এসেছে। দাদু খুব শক্ত মনের মানুষ। আমি আর মা টেনশন করছি দেখে দাদু আমাদের বুঝিয়ে শান্ত করল আর শুভর সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা ও করল। আমি মা বাড়ি চলে এলাম, একটু পরেই শুভ ফোন করে জানাল রক্ত পাওয়া গেছে চিন্তার কারন নেই। আমরা নিশ্চিন্ত হলাম।
সকাল হতেই আমরা হসপিটালে গেলাম, মা এতকিছুর মধ্যেও শুভ কে বলল, “তোমার প্রথম ষষ্ঠী, একটু মিষ্টি খাইয়ে আর্শীবাদ করব তারও উপায় নেই।” শুভ বলল, “এসব নিয়ে ভাববেন না, বাবা সুস্থ হলে আপনি আর বাবা একসাথে আর্শীবাদ করবেন।” এই কদিন শুভ নাওয়া খাওয়া ভুলে অনেক সেবা করেছে। দুদিন পর বাবা সুস্থ হতে বাড়ি নিয়ে এলাম। সেদিন দিদা একা দেখতে আসায় মা দাদুর কথা জিজ্ঞেস করায় দিদাকে এড়িয়ে যেতে দেখে শুভ বলল, “কি দিদুন! বলবো!” দিদা না করলেও শুভ শুনল না, সবটা আমাদের বলল। বলল করোনার সময় যখন কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন দাদু রক্ত দিয়ে বাবাকে সুস্থ করে, দাদুর ‘ও’ পজিটিভ রক্ত। আমি মা দিদাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। দাদুকে আমাদের বাড়ি নিয়ে এলাম। সেদিন জামাই ষষ্ঠী হয়নি তো কি হয়েছে? আজ হবে! দিদা বরণ করল, ফোঁটা দিল বাবাকে আর মা শুভকে। সেই সুন্দর মুহূর্ত ধরা পড়ল আমার ক্যামেরাতে।
জামাই এর ‘আদর যত্নে’ আর শ্বশুরের ‘জামাই আদরে’ বাবা এখন দিব্য আছেন। শ্বশুর জামাই এর সম্পর্কের মধ্যেই যেন পূর্ণতা পায় বাবা ছেলের সম্পর্ক। আমার বাবার মতই যেন সব শ্বশুররাই তাদের জামাইকে ছেলের চোখে ‘জামাই আদর’ করে আর জামাই ও যেন বাবার মতো সম্মান দেয় আজীবন।