অভিমান ।। লেখা : শংকর দেবনাথ
সামনে বইখাতা খোলা। টিচার আসবেন পড়াতে। বিকেল পাঁচটায়। হোমওয়ার্কটা এখুনি করতে হবে। নইলে…।
কিন্তু কিছুতেই ছোট্ট শ্রমণের মন বসতে চাইছে না পড়াতে। বারবার যেন আনমনা হয়ে যাচ্ছে। বইয়ের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে অক্ষরগুলো যেন ওকে হাঁ করে গিলতে আসছে।
হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে বাতাস আসে। ওর সারা গায়ে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়। ফিসফিস করে বলে- চলো ভাই, আমার সাথে। দু’জনে মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়াবো ইচ্ছেমত।
শ্রমণ বলল- না ভাই, আমার এখন পড়তে হবে। তুমি ফিরে যাও।
বাতাস বিষন্ন মনে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। শ্রমণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। বাগানের ফুলগুলো মিটিমিটি হাসে ওর দিকে চেয়ে।
বলে – এসো ভাই। আমাদের কাছে। রঙ আর ঘ্রাণ মাখিয়ে দেবো তোমার মনে।
মলিনমুখে শ্রমণ বলল- না গো, অমন করে আমাকে ডেকো না। আমার সময় নেই। এক্ষুনি স্যার আসবেন পড়াতে।
ফুলেরা ফ্যাকাসে পাপড়ি মেলে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
পাশের গাছ থেকে কি যেন একটা পাখি ডেকে ওঠে- বন্ধু, চলে এসো বন্ধ ঘর থেকে বাইরে। আমরা একসাথে উড়বো, ঘুরবো, গান গাইবো।
শ্রমণের বুকের ভেতরটা হুহু করে ওঠে। সত্যি যদি ও পাখি হতে পারতো। রাতদিন উড়ে ঘুরে বেড়াতে পারতো। বই পড়তে হতো না। মা বাবা স্যারদের চোখরাঙানি দেখতে হতো না মোটেই। কী মজাই না হতো তাহ’লে!
কষ্ট বুকে চেপে শ্রমণ অভিমানি স্বরে বলে- তোমরা আর আমাকে ডাকবে না। আমি কোত্থাও যাবো না। কোত্থাও না।
বলেই ছলছল চোখে বইয়ের পাতা ওল্টাতে থাকে শ্রমণ।