রহস্যের নাম ক্রিকেট (প্রথম পর্ব)

রহস্যের নাম ক্রিকেট (প্রথম পর্ব)

লেখা – শান্তনু দাস
ছবি – অরিজিৎ

হোটেল মঞ্জুষার নীল কাচ দিয়ে তুষারাবৃত হিমালয়ের রূপ দেখছিলাম। দার্জিলিঙে এসে হিমালয়ের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম প্রতি মুহূর্তে। চা বাগান ঘেরা, পাখির কূজন ভরা, ফুলের রঙ্গিন গন্ধে মাতোয়ারা দার্জিলিং এসেছি সেই ছোটবেলায়। কিন্তু এবারে শুধু আমি আর ইন্দ্রদা। পাহাড়ের খাদের ধারে বড় বড় পাইন গাছ মাথা নাড়ছে। মাঝখানে পাতার ফাঁকের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে ঝলমলে রোদ্দুর। কোলকাতার ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে হাঁফিয়ে উঠেছিল মন। তাই দুজনে বেরিয়ে পড়েছি এবার মানুষের দৈনন্দিন কোলাহল ও দূষণ থেকে বহুদূরে।
ইন্দ্রদা জিজ্ঞেস করল, “কিরে কেমন লাগছে দার্জিলিং?”
-“ভাল।”
-“শুধু ভাল?”
-“হ্যাঁ, শুধুই ভাল। তুমি তো যেখানেই যাও সেখানেই রহস্যের পরিবেশ গড়ে ওঠে। কই এবারে তো আর তেমন কিছু হল না?”
-“ওহো এই ব্যাপার! তা দার্জিলিঙে এসে হিমালয়ের থেকে আর বেশি কি রহস্যময় তুই আশা করিস?”
যাইহোক আমাদের কথার মাঝেই কলিংবেলটা বেজে উঠল। আমিই গিয়ে দরজা খুললাম। এক অপরিচিত ব্যক্তি, বয়স ইন্দ্রদার মতই সাতাশ আঠাশ হবে, বেশ লম্বা চওড়া, গৌরবর্ণ, মাথাভর্তি ব্যাকব্রাশ করা কোঁকড়ানো চুল, চোখে ফাস্ট্র্যাকের সানগ্লাস, কপালে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ।
ভদ্রলোক বললেন, “ইন্দ্রজিৎ আছে?” ততক্ষনে ইন্দ্রদা উঠে এসেছে। ওরা কিছুক্ষণ পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। তারপর ইন্দ্রদাই প্রথম কথা শুরু করল, “আরে সুমিত না? কেমন আছিস?”
-“হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছিস, তুই কেমন আছিস?”
-“ভাল। তা তুই এখন কি করছিস? শুনেছি নাকি একটা ক্রিকেট দলের পরিচালনা করিস?”
-“ঠিকই শুনেছিস, একটা ছোটখাটো ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন। আর তুই তো এখন বেশ নামকরা ডিটেকটিভ। দার্জিলিঙেও তো তোর নাম ছড়িয়ে গেছে রে, সেবারে কি একটা রহস্যের কিনারা করে।”
-“হ্যাঁ, ঐ আর কি।”
-“আমি কালকেই জানতে পারলাম তোরা দার্জিলিং বেড়াতে এসেছিস, তাই দেখা করতে চলে এলাম। তা তোর সঙ্গে এটি কে? তোর সেই বিখ্যাত অ্যাসিস্ট্যান্ট সৌম্য বুঝি?”
আমার সঙ্গে পরিচয়ের পালাটা শেষ হতেই ইন্দ্রদা হোটেলে তিনটে কফির অর্ডার দিল। ততক্ষনে হালকা এক পশলা বৃষ্টি নেমেছে। পাথুরে মাটির সোঁদা গন্ধে সে এক আলাদা আমেজ।
অনেকদিন পর দুই বন্ধুর রিইউনিয়ন খোশমেজাজেই চলছিল। তারপর একসময় ইন্দ্রদার বন্ধু সুমিতদা বলে উঠল, “তোরা কোলকাতা কবে ফিরছিস?”
-“আপাতত চার পাঁচদিন তো এখানে আছিই।”
-“তাহলে সৌম্যকে নিয়ে কাল সকাল আটটা নাগাদ একবার শিবতলা স্টেডিয়ামে চলে আয় না?”
-“কেন ?”
-“কাল সেমি ফাইন্যাল ম্যাচ, আর পরশু ফাইন্যাল। আমরা সেমি ফাইন্যালে উঠেছি। তোদেরকে ভি.আই.পি গেস্ট হিসেবে থাকতে হবে। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।”
-“কিন্তু…”
-“দার্জিলিঙের সাইটসিইংগুলো অন্য দিন করে নিস। কোনো কিন্তু শুনতে চাই না। কাল আর পরশু আমাদের সঙ্গে থাকতেই হবে। এতদিন পর দেখা, এত সহজে তোকে ছেড়ে দেব ভাবলি কি করে? আমি কাল গাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
ইন্দ্রদার বন্ধু চলে গেল। পরে ইন্দ্রদার কাছে সুমিতদার পরিচয় জানলাম। নাম সুমিত বিশ্বাস, একসময় ক্লাসের সেরা ক্রিকেট প্লেয়ার ছিল সে। যেমন ব্রিলিয়াণ্ট স্টুডেন্ট, তেমন তুখোড় ক্রিকেট প্লেয়ার। এখানে একটা কথা বলে রাখি, ইন্দ্রদার একটা পরিচয় পাঠক পাঠিকারা সবাই জানে না। একদিকে ও যেমন একজন নামকরা ডিটেকটিভ, অন্যদিকে ক্রিকেটারও বটে, যদিও খুব নামকরা নয়। ইন্দ্রদার কাছে আজই জানলাম, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় ইন্দ্রদা আর সুমিত বিশ্বাস দুজনেই ছিল ওপেনিং জুটি। মাইক্রোবায়োলজি তে মাস্টার্স করে ইন্দ্রদা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে রিসার্চ শুরু করে দিল, তারপর থেকে দুই বন্ধু দুইদিকে। ইন্দ্রজিৎ সান্যাল জয়েন করল ক্রাইম ব্রাঞ্চে। ক্রিকেটটা আস্তে আস্তে ইন্দ্রদার জীবন থেকে জলছবির মত মুছে গেল। বদলে ইন্দ্রদার গ্রিন পিচে বাউন্সারের মত আবির্ভাব হল এক মিষ্টি মেয়ে ঝিলিক সেনগুপ্ত। পেশায় ফটোগ্রাফার, ইন্দ্রদার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট। কথায় আছে না, প্রত্যেকটি সাকসেসফুল পুরুষের সাফল্যের পেছনে একজন নারীর অবদান আছে। ইন্দ্রদার ক্ষেত্রেও তেমন এই ঝিলিক সেনগুপ্ত। গল্পের প্রয়োজন ছাড়া ইন্দ্রদা অপ্রাসঙ্গিক মানুষের বিবরণ দেওয়া একদম পছন্দ করে না। তাই ইন্দ্রজিৎ সান্যাল ও ঝিলিক সেনগুপ্তের প্রেমপর্বটি একান্তই ব্যক্তিগত ভেবে বিষয়টির ইতি টানলাম এখানেই। অনেকটা অফ স্ট্যাম্পের বল কাট না মেরে সেফলি লিভ করার মতো, কারন বয়েসে ইন্দ্রদার থেকে অনেকটা ছোট হওয়ায় ওর কাছে এল.বি. ডবলু. হবার ভয় আমার আছে।
বাইরে কালো মেঘের অবগুণ্ঠন মোচন করে সূর্যদেব উঁকি মারছেন আকাশ থেকে। সূর্যের আলোটা পাহাড়ের বরফের উপর পড়ে চমৎকার দেখাচ্ছে। আর সেই মলিন আলোয় মিশে যাচ্ছে গোটা চা বাগান লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ঘন পাইন ফার ওক বনের পরতে পরতে যেন কোনো রহস্য উঁকিঝুঁকি মারছে। গলার মাফলারটা বিছানাতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ব্যাগ থেকে দার্জিলিং জমজমাট বইটা এনে পাতা ওলটাতে লাগলাম। পরশু টাইগার হিল দেখতে গিয়েছিলাম তাই আজকের দিনটা দার্জিলিং ঘুরে দেখার জন্য স্থির রইল।

হোটেল মঞ্জুষার নীল কাচ দিয়ে তুষারাবৃত হিমালয়ের রূপ দেখছিলাম। দার্জিলিঙে এসে হিমালয়ের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম প্রতি মুহূর্তে। চা বাগান ঘেরা, পাখির কূজন ভরা, ফুলের রঙ্গিন গন্ধে মাতোয়ারা দার্জিলিং এসেছি সেই ছোটবেলায়। কিন্তু এবারে শুধু আমি আর ইন্দ্রদা। পাহাড়ের খাদের ধারে বড় বড় পাইন গাছ মাথা নাড়ছে। মাঝখানে পাতার ফাঁকের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে ঝলমলে রোদ্দুর। কোলকাতার ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে হাঁফিয়ে উঠেছিল মন। তাই দুজনে বেরিয়ে পড়েছি এবার মানুষের দৈনন্দিন কোলাহল ও দূষণ থেকে বহুদূরে।
ইন্দ্রদা জিজ্ঞেস করল, “কিরে কেমন লাগছে দার্জিলিং?”
-“ভাল।”
-“শুধু ভাল?”
-“হ্যাঁ, শুধুই ভাল। তুমি তো যেখানেই যাও সেখানেই রহস্যের পরিবেশ গড়ে ওঠে। কই এবারে তো আর তেমন কিছু হল না?”
-“ওহো এই ব্যাপার! তা দার্জিলিঙে এসে হিমালয়ের থেকে আর বেশি কি রহস্যময় তুই আশা করিস?”
যাইহোক আমাদের কথার মাঝেই কলিংবেলটা বেজে উঠল। আমিই গিয়ে দরজা খুললাম। এক অপরিচিত ব্যক্তি, বয়স ইন্দ্রদার মতই সাতাশ আঠাশ হবে, বেশ লম্বা চওড়া, গৌরবর্ণ, মাথাভর্তি ব্যাকব্রাশ করা কোঁকড়ানো চুল, চোখে ফাস্ট্র্যাকের সানগ্লাস, কপালে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ।
ভদ্রলোক বললেন, “ইন্দ্রজিৎ আছে?” ততক্ষনে ইন্দ্রদা উঠে এসেছে। ওরা কিছুক্ষণ পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। তারপর ইন্দ্রদাই প্রথম কথা শুরু করল, “আরে সুমিত না? কেমন আছিস?”
-“হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছিস, তুই কেমন আছিস?”
-“ভাল। তা তুই এখন কি করছিস? শুনেছি নাকি একটা ক্রিকেট দলের পরিচালনা করিস?”
-“ঠিকই শুনেছিস, একটা ছোটখাটো ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন। আর তুই তো এখন বেশ নামকরা ডিটেকটিভ। দার্জিলিঙেও তো তোর নাম ছড়িয়ে গেছে রে, সেবারে কি একটা রহস্যের কিনারা করে।”
-“হ্যাঁ, ঐ আর কি।”
-“আমি কালকেই জানতে পারলাম তোরা দার্জিলিং বেড়াতে এসেছিস, তাই দেখা করতে চলে এলাম। তা তোর সঙ্গে এটি কে? তোর সেই বিখ্যাত অ্যাসিস্ট্যান্ট সৌম্য বুঝি?”
আমার সঙ্গে পরিচয়ের পালাটা শেষ হতেই ইন্দ্রদা হোটেলে তিনটে কফির অর্ডার দিল। ততক্ষনে হালকা এক পশলা বৃষ্টি নেমেছে। পাথুরে মাটির সোঁদা গন্ধে সে এক আলাদা আমেজ।
অনেকদিন পর দুই বন্ধুর রিইউনিয়ন খোশমেজাজেই চলছিল। তারপর একসময় ইন্দ্রদার বন্ধু সুমিতদা বলে উঠল, “তোরা কোলকাতা কবে ফিরছিস?”
-“আপাতত চার পাঁচদিন তো এখানে আছিই।”
-“তাহলে সৌম্যকে নিয়ে কাল সকাল আটটা নাগাদ একবার শিবতলা স্টেডিয়ামে চলে আয় না?”
-“কেন ?”
-“কাল সেমি ফাইন্যাল ম্যাচ, আর পরশু ফাইন্যাল। আমরা সেমি ফাইন্যালে উঠেছি। তোদেরকে ভি.আই.পি গেস্ট হিসেবে থাকতে হবে। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।”
-“কিন্তু…”
-“দার্জিলিঙের সাইটসিইংগুলো অন্য দিন করে নিস। কোনো কিন্তু শুনতে চাই না। কাল আর পরশু আমাদের সঙ্গে থাকতেই হবে। এতদিন পর দেখা, এত সহজে তোকে ছেড়ে দেব ভাবলি কি করে? আমি কাল গাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
ইন্দ্রদার বন্ধু চলে গেল। পরে ইন্দ্রদার কাছে সুমিতদার পরিচয় জানলাম। নাম সুমিত বিশ্বাস, একসময় ক্লাসের সেরা ক্রিকেট প্লেয়ার ছিল সে। যেমন ব্রিলিয়াণ্ট স্টুডেন্ট, তেমন তুখোড় ক্রিকেট প্লেয়ার। এখানে একটা কথা বলে রাখি, ইন্দ্রদার একটা পরিচয় পাঠক পাঠিকারা সবাই জানে না। একদিকে ও যেমন একজন নামকরা ডিটেকটিভ, অন্যদিকে ক্রিকেটারও বটে, যদিও খুব নামকরা নয়। ইন্দ্রদার কাছে আজই জানলাম, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় ইন্দ্রদা আর সুমিত বিশ্বাস দুজনেই ছিল ওপেনিং জুটি। মাইক্রোবায়োলজি তে মাস্টার্স করে ইন্দ্রদা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে রিসার্চ শুরু করে দিল, তারপর থেকে দুই বন্ধু দুইদিকে। ইন্দ্রজিৎ সান্যাল জয়েন করল ক্রাইম ব্রাঞ্চে। ক্রিকেটটা আস্তে আস্তে ইন্দ্রদার জীবন থেকে জলছবির মত মুছে গেল। বদলে ইন্দ্রদার গ্রিন পিচে বাউন্সারের মত আবির্ভাব হল এক মিষ্টি মেয়ে ঝিলিক সেনগুপ্ত। পেশায় ফটোগ্রাফার, ইন্দ্রদার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট। কথায় আছে না, প্রত্যেকটি সাকসেসফুল পুরুষের সাফল্যের পেছনে একজন নারীর অবদান আছে। ইন্দ্রদার ক্ষেত্রেও তেমন এই ঝিলিক সেনগুপ্ত। গল্পের প্রয়োজন ছাড়া ইন্দ্রদা অপ্রাসঙ্গিক মানুষের বিবরণ দেওয়া একদম পছন্দ করে না। তাই ইন্দ্রজিৎ সান্যাল ও ঝিলিক সেনগুপ্তের প্রেমপর্বটি একান্তই ব্যক্তিগত ভেবে বিষয়টির ইতি টানলাম এখানেই। অনেকটা অফ স্ট্যাম্পের বল কাট না মেরে সেফলি লিভ করার মতো, কারন বয়েসে ইন্দ্রদার থেকে অনেকটা ছোট হওয়ায় ওর কাছে এল.বি. ডবলু. হবার ভয় আমার আছে।
বাইরে কালো মেঘের অবগুণ্ঠন মোচন করে সূর্যদেব উঁকি মারছেন আকাশ থেকে। সূর্যের আলোটা পাহাড়ের বরফের উপর পড়ে চমৎকার দেখাচ্ছে। আর সেই মলিন আলোয় মিশে যাচ্ছে গোটা চা বাগান লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ঘন পাইন ফার ওক বনের পরতে পরতে যেন কোনো রহস্য উঁকিঝুঁকি মারছে। গলার মাফলারটা বিছানাতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ব্যাগ থেকে দার্জিলিং জমজমাট বইটা এনে পাতা ওলটাতে লাগলাম। পরশু টাইগার হিল দেখতে গিয়েছিলাম তাই আজকের দিনটা দার্জিলিং ঘুরে দেখার জন্য স্থির রইল।

বিকেলে একটু মেঘলা মেঘলা ছিল। ইন্দ্রদা তবুও ঝিলিকদির দেওয়া হ্যান্ডিক্যামটা আনতে ভোলেনি। ঘন চা বাগানের মধ্যে দিয়ে নানা পাখির কলতান শুনতে শুনতে ঘন সবুজে চোখ ভিজিয়ে একটা পাহাড়ের খাদের ধারে এসে পড়লাম। ধীরে ধীরে সূর্য পাহাড়ের বুকে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এই নিস্তব্ধতার মাঝেও এক আলাদা রোমাঞ্চ খুঁজে পাচ্ছিলাম আমি। ডিঊল্যান্ড পার্কে এসে বসেছি, মনে হল পেছন থেকে কেউ যেন আমাদের ফলো করছে। প্রথমটা অতটা না বুঝলেও আমরা যখন পার্কের সিংহদ্বারটার কাছাকাছি তখন ইন্দ্রদা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, “কে তুমি?” এবার যাকে দেখলাম তার চেহারার বর্ণনা দেওয়াটা বেশ হাস্যকর। দেখে মনে হল বদ্ধ পাগল, পরনে ময়লা হাফপ্যান্ট, ছেঁড়া কালি লাগা একটা টি শার্ট, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, জামার পকেটটা বেশ ভারী, মনে হয় অনেককিছু ভরা আছে, মাথায় একটা সাদা টুপি, দাঁতগুলো অদ্ভুত রকমের বড়, বয়স বড়জোর ত্রিশ বত্রিশ। প্রথমেই লোকটা এসে সোজা ইন্দ্রদার কাছে গড়গড় করে কথাগুলো বলল ইন্দ্রদাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, “আপনার নাম ইন্দ্রজিৎ সান্যাল, তাই না? হ্যাঁ আমি জানি তো আপনার নাম। কিন্তু আপনি কালকে যাবেন না, একদম যাবেন না ওখানে। তাহলে ওইসব বেআইনি চোরাকারবারের সাথে আপনিও যুক্ত হয়ে যাবেন। ও হ্যাঁ, কোথায় যাবেন না, তাই তো? খেলার মাঠে, শিবতলা, শিবতলা স্টেডিয়াম। সত্যি বলছি ইন্দ্রজিৎ স্যার। পাগলা ভাবছেন? আমাকে সবাই তাই ভাবে। আমি কিন্তু পাগলা নই।”
এবার ইন্দ্রদার প্রশ্ন, “কিন্তু তুমি কে?”
লোকটা অদ্ভুতভাবে হাসতে হাসতে নিমেষের মধ্যে ছুটে চলে গেল। আমরা কিছুক্ষন ওইদিকে চেয়ে রইলাম।
-“রহস্য যখন গজায়, তখন এমনি ভাবেই শুরু হয় সৌম্য। তোর কথাটা মিলে যাচ্ছে। দার্জিলিঙে এসেও রহস্য পিছু ছাড়বে না মনে হচ্ছে।”
-“তাহলে তুমি বলতে চাইছ স্টেডিয়ামে কিছু একটা রহস্য রয়েছে?”
-“সেটা তো না গেলে বোঝা যাবে না। তবে রহস্যকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে ক্রিকেটকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলাম, এবারে তো দেখছি দার্জিলিঙের পাটা পিচেও রহস্যের বল সুইং করবে মনে হচ্ছে।”
-“ক্রিকেট রহস্য?”
-“না সৌম্য, রহস্যের নাম ক্রিকেট।”

*

-“নাম ধাম কিছু বলল না, তবে শিবতলা স্টেডিয়ামে চোরাকারবার নিয়ে কিছু একটা বলছিল মনে হল।”
-“ওসব বাদ দে, পাগল টাগল হবে হয়তো। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি, তোরা রেডি হয়ে নে। আমাকে আবার টিম মিটিং এ বসতে হবে।”
সকালে উঠতে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল আমাদের। সুমিত বিশ্বাসের ফোনটা রাখার পর ইন্দ্রদা চট করে কোটটা পরে নিল। আমিও সোয়েটার মাফলারটা গলায় জড়িয়ে নিলাম। মুখ ধুয়ে ফ্রেস হতে প্রায় আটটা বাজতে দশ হয়ে গিয়েছিল। ব্রেকফাস্ট না করেই সোজা আমি আর ইন্দ্রদা একটা জাইলো গাড়িতে করে শিবতলা স্টেডিয়ামের দিকে রওনা দিলাম। বাইরে কুয়াশার ঘনঘটা। তুমুল বৃষ্টিতে চারদিক ঝাপসা লাগছিল। গাড়ির কাঁচের বাইরে তখন ধারাজলের আল্পনা আঁকা হচ্ছে। পাহাড়ের বৃষ্টির একটা আলাদা মোহময়ী রূপ আছে। সেই রূপসাগরে ডুব দিতে দিতে গাড়ি হালকা চালে এগোতে লাগল।
স্টেডিয়ামে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়ি বলছে সাড়ে আটটা। বৃষ্টি কমে গেলেও গাছের পাতা থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে জলের ফোঁটা। দুপাশে সবুজ চা বাগান আর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা শিবতলা স্টেডিয়াম। বৃষ্টিস্নাত হয়ে পাহাড়ি সবুজ যেন আরো সতেজ দেখাচ্ছে।
দূর থেকে মনে হল একজন কেউ হন্তদন্ত হয়ে আসছে। ফিচেল গোছের লোকটা আমাদের কাছে এসে বলল, “আপনারা সুমিত বিশ্বাসের বন্ধু?”
আমরা মাথা নাড়লাম। লোকটার কথায় বুঝতে পারলাম সুমিত বিশ্বাসই তাকে পাঠিয়েছে। যেহেতু সুমিতদা এখন খেলার প্রাকটিসে ব্যস্ত তাই লোকটা আমাদের স্টেডিয়ামের ভি.আই.পি. সিটের কাছে নিয়ে এল।
ইন্দ্রদা অনেকের সাথে পরিচয় করছিল, সেখানে ইন্দ্রদাকে চেনে এরকম দু তিনজন পরিচিত লোকও বেরিয়ে গেল। আমাদের নিয়ে ভি.আই.পি সিটে প্রায় পঞ্চাশ জনের মত লোক ছিল। বাকি স্টেডিয়াম ভর্তি। স্টেডিয়ামটা খুব বড় না হলেও মাঠটা বেশ বড়। দক্ষিন দিকটাতে রয়েছে স্কোরবোর্ড, প্রত্যেকটা ব্লকে রয়েছে তিন ফুট লম্বা করে আয়তকার সাউণ্ড বক্স যা থেকে কমেন্টটেটর এর ধারাভাষ্য ভেসে আসছিল। আর আমাদের পাশেই রয়েছে দুটো দলের ড্রেসিংরুম কাম ওয়েটিং রুম। ইতিমধ্যে ইন্দ্রদার সঙ্গে অনেকে দেখা করে গেছে। সুমিত বিশ্বাস যে এখানেও রহস্যভেদী ইন্দ্রদার বেশ গুণগান গেয়েছে তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি।
প্রথমত ইন্দ্রদার বন্ধু সুমিত বিশ্বাস। সে আজকে অবশ্য সম্পূর্ণ খেলোয়াড়ের ড্রেসে ছিল। দেখে মনে হল সেই ওপেনিং করবে।
দ্বিতীয়ত সুমিত বিশ্বাসের বিপক্ষ দলের ক্যাপ্টেন সৌরভ নাগ। ইন্দ্রদার সঙ্গে ওর বেশ ভাব আলাপ হল। আমি সৌরভ নাগের চেহারার মোটামুটি বর্ণনা দিচ্ছি। মোটাসোটা, কালো গায়ের রং, হাইট খুব বেশি নয়, আইডিয়াল স্পোর্টসম্যান টাইপ ফিগার নয়, মুখে গোঁফ দাড়ি পরিস্কার করে কামানো, আর সম্পূর্ণ খেলোয়াড়ের ড্রেসে। কথায় কথায় জানতে পারলাম সৌরভ নাগের দলটার নাম জয়পুর স্পোর্টিং ক্লাব এবং সুমিত বিশ্বাসের দলটার নাম বলাকা স্পোর্টিং ক্লাব।
তৃতীয়ত শিবতলা স্টেডিয়ামের কনভেনার এবং ম্যাচের আম্পায়ার দুজন গনেশ ঘোষ ও তপেন গুহ। দুজনেরই বয়স চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশের মধ্যে, মাথায় সাদা টুপি, পুরো সাদা ড্রেস, বলিষ্ঠ চেহারা, চোখে রেব্যানের অ্যাভিয়েটার সানগ্লাস ও হাতে বড় বড় দুটো স্পেশাল হাতঘড়ি সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছিল। দুজনের মধ্যে একটাই তফাত। গণেশ ঘোষ কথা বলতে বলতে চোখ পিটপিট করেন আর তপেন গুহর কথা বলার সময় চোয়ালটা একটু বাঁদিকে বেঁকে যায়।
যাই হোক বক্সে শুনতে পেলাম, “এবার শুরু হচ্ছে বলাকা আর জয়পুরের সেমিফাইন্যাল সংঘর্ষ।”
ঘড়িটা একবার দেখে নিলাম বাজছে নটা। পাশের এক ভদ্রলোকের কাছে জানতে পারলাম জয়পুর ক্লাব টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জয়পুর স্পোর্টিং ক্লাবের দল আর দুজন আম্পায়ার মাঠে নামল। ইন্দ্রদার বন্ধুর দলের প্লেয়ারগুলো আমাদের থেকে দশ হাত দূরে বসে আছে। ওরা কফি খাচ্ছিল। সকালে ব্রেকফাস্ট করিনি বলে বেশ খিদেই পাচ্ছিল। ইতিমধ্যে আমাদের টিফিন আর কফি ভি.আই.পি. সিটে চলে এল। পাশের এক মোটাসোটা ভদ্রলোক অতিরিক্ত এক্সাইটমেণ্টে হাততালি দিতে লাফিয়ে উঠেছিল বলে ইন্দ্রদার কাপ থেকে কিছুটা কফি ভদ্রলোকের ডেনিম জিন্সে পড়ে গেল। ইন্দ্রদা অবশ্য দোষটা নিজের কাঁধে নিয়েই পকেট থেকে রুমাল বের করে ভদ্রলোকের প্যান্টের কফিটা মুছে দিয়েছিল।

ওপেনিং করতে নামল সুমিত বিশ্বাস ও আর একজন। খেলা শুরু হল, টোয়েণ্টি টোয়েণ্টি ম্যাচ। টিফিন আর কড়া ব্ল্যাক কফি খেতে খেতে ইন্দ্রদার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলাম। মুখ দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, তবে বেশ গম্ভীর। প্রথম ওভারেই ফিল্ডারদের মধ্যে একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। বলাকা ক্লাবের ওপেনার, ইন্দ্রদার বন্ধু সুমিত বিশ্বাস বোল্ড আউট। ইন্দ্রদা বেশ গম্ভীর, ও এখন মাঠের দিকে লক্ষ্য করছে না। মাঠের উত্তর দিকে যেখানে স্টেডিয়ামটা শেষ হয়েছে সেখানে তাকিয়ে রয়েছে একদৃষ্টে। পাশের এক ভদ্রলোক দূরবীন নিয়ে খেলা দেখছিল। ইন্দ্রদা “প্লিজ” বলে দূরবীনটা একবার চেয়ে নিল। কি এত মন দিয়ে দেখছে তা ইন্দ্রদাই জানে। কিছুক্ষন পর স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখি, দশ ওভারে পঁচিশ রান, পাঁচ উইকেট। ইন্দ্রদা ভদ্রলোককে দূরবীনটা ফেরত দিল। আমি তখনই কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না।
সুমিত বিশ্বাস ইন্দ্রদার পাশে এসে একটা খালি সিটে বসল, “আজকে আমাদের হার অবধারিত।”
ইন্দ্রদা বলল, “ক্যাপ্টেনের মুখে এসব কথা?”
-“তুইও আমার জায়গায় থাকলে একই কথা বলতিস।”
-“মানে? আমি তো তোকে বেশ পজিটিভ মাইন্ডেড বলেই জানতাম। এখনো খেলার অনেক কিছু বাকি আছে।”
-“হয় আমাদের ফিটনেসের ঘাটতি আছে, তা না হলে অন্য কিছু…”
-“কি বলতে চাইছিস বল তো?”
-“এখানে নয়, পরে বলব।”
-“তাই বলিস। তবে আজ আর ভাল লাগছে না রে সুমিত। বড্ড অলস লাগছে, কাল ফাইন্যালে আসব।”

স্কোর বোর্ডে যাবার সময় চোখ পড়ল। বলাকা ক্লাবের অবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে, কুড়ি ওভারে সাতচল্লিশ রান, আট উইকেট। এতটা একপেশে ম্যাচ হবে আশা করিনি। এক এক করে বলাকা স্পোর্টিং ক্লাবের সাপোর্টাররা সব স্টেডিয়াম ছাড়ছে। আমরাও চলে এলাম হোটেল মঞ্জুষায়।
একটানা চুপচাপ বসে থাকলে নাকি ঘুম পায় শুনেছি। অনেকক্ষণ স্টেডিয়ামে বসেছিলাম তাই টায়ার্ড লাগছিল। খাবার রেডি ছিল। লাঞ্চের জন্য হোটেলে ইন্দ্রদা আগেই ফোন করে দিয়েছিল। স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে আমি আর ইন্দ্রদা শুয়ে পড়লাম। টায়ার্ডনেসে চোখ বুজে যাবার আগে পর্যন্ত বুঝতে পারছিলাম ইন্দ্রদা কিছু বলছে, “পাগলটার সঙ্গে দেখা হওয়াটা কি নিতান্তই কাকতালীয় বলে মনে হয় তোর সৌম্য? শিবতলা স্টেডিয়ামের সঙ্গে চোরাকারবারের কি সম্পর্ক থাকতে পারে?”

*

-“আমার মনে হয় ইন্দ্র, এই খেলার সঙ্গে কিছু গভীর রহস্যের সম্পর্ক আছে!”
-“হেরে গেছিস বলে এখন যা তা বকছিস, তাই তো সুমিত?”
-“না না, তার জন্য নয়। আমি তোকে কিছু বলতে চাই ইন্দ্র।”
-“আচ্ছা আগে ঘরে এসে বোস তো!”
এক্কেবারে পাক্কা চারটে পর্যন্ত ঘুমোনোর পর আমরা বিকেলে মার্কেটে যাব বলে বেরোচ্ছিলাম, ঠিক তখনই কলিংবেল বাজল। ইন্দ্রদা অবশ্য আমার একটু আগে ঘুম থেকে উঠে বাইরে গিয়ে কি একটা কাজ সেরে এসেছে বলল। দেখলাম সুমিত বিশ্বাস এসেছে, ভ্রু যুগলের নিচে একজোড়া গম্ভীর অনুসন্ধানী চোখ। সুমিত বিশ্বাস ব্যালকনির সোফায় উপবেশন করে আবার বলা শুরু করল, “বুঝলি ইন্দ্র, গত দু বছর ধরে জয়পুর স্পোর্টিং ক্লাব ফাইন্যাল কাপ জিতছে। আর তুই দেখে নিস ইন্দ্র, এবছরেও ওরা জিতবে। তাই বলে প্রত্যেকটা ম্যাচে ওরা ভাল ভাল টিমকে গোহারানে হারিয়ে দেবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমার মনে হয় এর পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে।”
-“বেটিং?” ইন্দ্রদা বলল।
-“না, না। ওসব কিছু না। আমাদের টিম কখনও এরকম করতে পারে না। মনে হয় অন্য কিছু। তুই একবার নিজে মাঠে যাবি… মানে শিবতলা স্টেডিয়াম?”
-“কখন?”
-“এখনই চল না, সন্ধ্যের আগে ফিরে আসব।”
-“কিন্তু ওখানে গিয়ে আমি করব টা কি?”
-“ওরা যদি মাঠে গিয়ে কিছু কারসাজি করে রেখে দেয়, তাহলে তোর চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না নিশ্চয়।”
-“কিসব আবোল তাবোল বকছিস, সুমিত? আর ইউ ম্যাড? ওদের ক্ষমতা আছে তাই জিতছে।”
-“না না, এ হতে পারে না ইন্দ্র। পরপর তিনবছর জিতে কাপ নেবার মত দল জয়পুর স্পোর্টিং ক্লাব নয়।”
কিছুটা জোরপূর্বক আমাকে ও ইন্দ্রদাকে সুমিত বিশ্বাসের সঙ্গে যেতে হল। আমরা তিন মূর্তি যখন শিবতলা স্টেডিয়ামের মাঠে পৌঁছলাম তখন আকাশে আধো আধো আলো ছিল। তর্জনী ও মধ্যমার ফাঁকে কিং সাইজ গোল্ড ফ্লেকটা চেপে ধরে ইন্দ্রদা পিচটা নিখুঁত ভাবে কি লক্ষ্য করছিল তা ও নিজেই জানে। তারপর সুমিত বিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা সুমিত, মাঠে নামবার পর থেকে কাউকে তোর সন্দেহজনক বলে মনে হয় না? যদিও ক্যাপ্টেনসি করতে করতে এ বিষয়টা মাথায় আসার কথা নয়, তবুও জিজ্ঞেস করছি, এনি অকওয়ার্ড সিচুএসন ডু ইউ ফেস?”
-“সেরকম তো কিছু মনে পড়ছে না।”
-“মে বি এনি আনইম্পরট্যান্ট থিংগ।”
-“যদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় তবুও বলছি, প্রথম ম্যাচ যখন খেললাম, তখন আমি জয়পুর স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ম্যাচের দুজন আম্পায়ারের কিছু কথাবার্তা চলছিল সেটা লক্ষ্য করি। সেটা যে শুধুমাত্র মৌখিক ছিল তা নয়, আই কন্টাক্ট চলছিল তাদের মধ্যে প্রায়ই।”
-“আর অন্য কিছু?”
-“নো… নাথিং ইন্দ্র।”
-“সুমিত, এটা কোনো সন্দেহজনক ব্যাপার বলে তো মনে হচ্ছে না আমার। প্রত্যেক মাচেই কি এই দুজন আম্পায়ারই খেলা পরিচালনা করেন?”
-“হ্যাঁ। তবে এনারা খুব অভিজ্ঞ। প্রথম প্রথম সন্দেহ হত ঠিকই, কিন্তু পরে বুঝলাম এনারা তো কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেন নি।”
-“তোদের ডে নাইট ম্যাচ হয়?”
-“হ্যাঁ, ফ্লাড লাইটেও ম্যাচ হয়, তবে কম । ”
-“জয়পুর স্পোর্টিং ক্লাব এই সেশনে কটা ম্যাচ হেরেছে?”
-“নট এ সিঙ্গল ওয়ান, ইন্দ্র।”
-“ইন্টারেস্টিং!”
-“দ্যাখ ইন্দ্র, আমি একটা দলের ক্যাপ্টেন। এটুকু বোঝার নিশ্চয় ক্ষমতা আছে যে, কোন দলের উইনিং পাওয়ার কিরকম। কিছু তো একটা গড়বড় হচ্ছেই।”

আমরা এবার মখমলি সবুজ ঘাসের উপর হাঁটতে হাঁটতে চলেছি মাঠের উত্তর দিকটায়। গোটা স্টেডিয়ামটা আজ ফাঁকা, অথচ কাল ফাইন্যালে গোটা স্টেডিয়ামে লোক গিজগিজ করবে। মাঠে প্র্যাকটিসে মত্ত কিছু প্লেয়ার। আকাশের গোলাপি রঙটা ক্রমশ মিলিয়ে গিয়ে অন্ধকার হয়ে আসছিল। মাঠের একদম উত্তর প্রান্তে যেখানে স্টেডিয়ামটা শেষ হয়েছে, সেখানে একটা একতলা বিল্ডিং দেখলাম। এটাই ক্রিকেট ক্লাব ঘর। ছোট হলেও বাইরে থেকে দেখতে খুব সুন্দর। ভেতরে টিউব লাইট জ্বলছে বুঝতে পারছিলাম। ঝট করে একটা কথা মনে পড়ে গেল, আজ সকালে স্টেডিয়ামে ইন্দ্রদা দূরবীন দিয়ে মাঠের উত্তর দিকটাতে কিছু একটা দেখছিল। আমার মনে হল ইন্দ্রদাকে একবার কথাটা জিজ্ঞেস করে দেখা দরকার। কিন্তু সেটা আর বলতে হল না, ইন্দ্রদার পরের কথা থেকেই সেটা বোঝা গেল।
-“সুমিত, সকালে একটা আশ্চর্য ঘটনা দেখলাম জানিস। একটা পাগলাটে গোছের লোক এই ক্লাবটার ভেতরে ঢুকে গেল, তবে কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে এল।”
-“কখন?”
-“সকালে যখন তোদের ব্যাটিং চলছিল, সবাই খেলা দেখতে মত্ত ছিল। আমি স্টেডিয়াম থেকে দূরবীন দিয়ে লক্ষ্য করেছি। হতে পারে তোদের চেনা জানা কেউ।”
-“তাহলে কি…”
-“এই পাগলটার সাথেই কাল আমাদের পার্কে দেখা হয়েছিল। ও বলছিল, এখানে নাকি চোরাকারবার হয়। আর সেজন্য আমাকে সাবধানও করে দিয়েছে।”
-“বলিস কি রে ইন্দ্র। শিবতলা স্টেডিয়ামে চোরাকারবার?”
-“এখন ক্লাবে গেলে গনেশ ঘোষ ও তপেন গুহর দেখা পাওয়া যাবে? ওনাদের কাছে যদি কিছু ইনফরমেশন পাওয়া যায়।”
-“কিন্তু ওনারা তো কাল ফিল্ডে আম্পায়ারিং এ ব্যস্ত ছিলেন।”
-“এদিকে এসেছি যখন চল একটু দেখা করেই যাই। কিন্তু আসল ব্যাপার একদম ফাঁস করবি না সুমিত। এমন ভাব করবি যেন মনে হয় আমরা ঘুরতে এসেছি।”

Author: admin_plipi