আত্মজা

 

আত্মজা

কলমে – আরতি দাস

ছবি – তীর্থরাজ রায়

 

ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা। রুদ্রবাবু তখন অফিস যাওয়ার ব্যস্ততায়। তাঁর স্ত্রী মন্দিরা তাঁর ব্রেকফাস্ট তৈরী করছে। ছোট মেয়ে রিয়া।  বাবা অফিস যাওয়ার সময় রিয়ার খুব ব্যস্ততা। বাবাকে নিজে হাতে সব গুছিয়ে দেওয়া চাই। “বাবা! বাবা! ওই রুমালটা আজ আর না।… নীল জ্যাকেটের সঙ্গে বাদামি ঘড়িটা পরবে না। জানো না, ওটা মা পছন্দ করেনা?… কাল কালো পেনটা নাও নি! বের করে রেখেছিলাম তাও ভুলে গেছ? আজ মনে করে পকেটে ঢোকাবে। দাড়াও আমি ঢুকিয়ে দিই।”

 

পাশের বাড়ির শ্যামলবাবু রুদ্রবাবুর সাথে একই অফিসে কাজ করেন। অফিস যাওয়াটা আজ বিশ বছর একই সাথে। তিনিও তৈরী হচ্ছেন। স্ত্রী সীমাদেবী দৌড়োদৌড়ি করে সব গোছগাছ করছেন।  শ্যামলবাবু ও সীমাদেবীর একমাত্র পুত্র রাহুল আজ প্রায় তিন বছর হল দুবাইতে আছে। এম.টেক করে আর বসতে হয়নি, সোজা দুবাই পাড়ি দিয়েছে। এই তিন বছরে রাহুল আসতেই পারেনি একবারও । কখনো প্রোমোশনের ঝামেলা, তো কখনো আর.এম. এর ভিজিট। ফোন ও সেভাবে করা হয়ে ওঠেনা ওর।  প্রথম প্রথম সীমা খুব অধীর হয়ে উঠতেন ওর ফোনের আশায়। শ্যামলবাবু বুঝতে না দিলেও বার বার আড় চোখে ল্যান্ড লাইনটার দিকে চেয়েই ফেলতেন। এখন সময়ের সাথে সেই অপেক্ষাও বয়সের ভারে মালিন্য বাড়িয়ে ফেলেছে। শুধু শুনেছেন রাহুল ওর স্ত্রী প্রিয়াকে নিয়ে বেশ সুখেই আছে। দু’বছর আগে রাহুলের প্রিয়ার বিয়ে হয় দুবাইতেই। শ্যামলবাবুরা অবশ্য এখানে বসেই সেই খবর পেয়েছিলেন। বিয়ে সেরে এসে রাহুল যখন জানাল মাকে, একটা মেকি হাসি হেসে সীমা শুধু বলেছিল,“ভালো থাকিস বাবা, বৌমার একটা ছবি পাঠাস।” কদিন আগে আর একটা দারুণ খবর এসেছে, শ্যামলবাবু এখন দাদু হয়েছেন। এবার সীমাদেবী ফোনে বললেন, “দাদুভাই আর বৌমার একটা ছবি পাঠাস বাবা।” কি জানি, কবে পাঠায়!

 

রুদ্রবাবুর বড় মেয়ে তানিয়া। এম.বি.এ. করে এখন বেশ কয়েক মাস হল হায়দ্রাবাদে আছে। বড় মেয়ের বিয়ের চিন্তায় রুদ্রবাবু অস্থির। সমস্যা পাত্র নিয়ে নয়, তানিয়া বেঁকে বসেছে। ভালো ভালো সম্বন্ধ সে না করে দেয়।  ওর এক গোঁ – “আগে কিছু করি নিজের যোগ্যতায়।” একদিন রুদ্রবাবু আর তানিয়ার মাঝে বেশ রাগারাগিও হয়ে গেল। রুদ্রবাবু বললেন, “এভাবে সম্বন্ধ প্রত্যাখ্যান করতে থাকলে আর মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না। বয়স বাড়ছে। ছোট বোনটার কথা ভাববি না?  দু বছর পর রিয়া কলেজে যাবে। তোর বিয়ে হলে আমি তো একটু সময় পাবো। তারপর রিয়ার জন্য ভাববো।” তানিয়া সেদিন খুব রাগারাগি করলো। শেষে কান্নাকাটি। আর কি ? বাপ্ মেয়ের যা হয়। কিছুক্ষন পর তানিয়া এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করে বললো, “এতো কষ্ট করে যে আমাকে পড়ালে, দেখবে না মেয়ে কি করতে পারে? প্লিজ বাবা, একবার চাকরি পাই, তারপর তোমার ইচ্ছা।” রুদ্রবাবু এই লড়াইয়ে বারংবার হারার অভ্যেস করে নিয়েছেন। আসলে এই হারাতেই উনি নিজের জয় খুঁজে পান।

 

ঠিক দুপুর দু’টো কুড়ি, অফিস এর ফোনে একটা ফোন এলো, ওপারে তানিয়া। রুদ্রবাবু ফোন ধরতেই তারস্বরে চিৎকার করে উঠে বললো, “বাবা গুড নিউজ! গত মাসে একটা এম.এন.সি. তে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। ওটায় আমার সিলেকশন হয়ে গেছে। সাত দিনে জয়েনিং। আর বেশি দিন তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। এখন থেকে তোমার, মার আর বুনুর দায়িত্ব আমার।” রুদ্রবাবুর চোখের কোণায় এক ফোঁটা জল এল।  মন্দিরা কে এই খবর কি করে এখনই দেওয়া যায়? অফিস বেয়ারা কে ডেকে বারোশ’ টাকা দিয়ে সবার জন্য মিষ্টি আনতে বলে সাহেবের কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবার অনুমতি নিয়ে নিলেন। অফিস এ সবাইকে এই খবর দিয়ে সোজা বাড়ি ছুটলেন।

 

বিকেলে শ্যামলবাবুও দেখা  করতে এলেন। মন্দিরাকে চায়ের অর্ডার দিয়ে রুদ্র আর শ্যামল বসলেন কিছুক্ষন। চা এলো। সাথে নানা মিষ্টি। ঘন্টা খানেক পর শ্যামলবাবু বাড়ি ফিরে গেলেন। মনটা ছেলের জন্য খুব টানছিল। আজ ফোন করেই ফেললেন। সীমাদেবীও কথা বললেন। খুব অনুরোধ করলেন আসার জন্য একবার বৌমা আর দাদুভাইকে নিয়ে। ফোনে  রাহুল স্পষ্টই বলে দিল, “কাজটা খুবই ভালো পেয়েছি, ছাড়তে তো পারবো না। এর মধ্যে আসা হবে না। আর তাছাড়া এদিকে খরচটাও খুব বেশি। তোমরা ওদিকটা ম্যানেজ করে নাও, আমার পক্ষে এখানে চালানো প্রব্লেম হয়ে যাচ্ছে। সামনের মাস থেকে আমি আগের মতো আর তেমন কিছু পাঠাতে পারবো না। তোমরা পারলে একবার ঘুরে যেও।”

 

রাতের ওষুধ গুলো খেয়ে ছাদ এসে দাঁড়ালেন শ্যমলবাবু। বুকের ভেতর কেমন যেন চাপা একটা ভাব। হঠাৎ শ্যামলবাবুর বেশ কয়েকবছর আগের একটা টুকরো ঘটনা মনে ভেসে এল! অফিস ফিরতি বাসে রুদ্রবাবুকে তিনি বলেছিলেন, “আপনার তো দুই কন্যা! বুঝবেন, বুঝবেন !

আমার আর কি! এক ছেলে,  বিয়ে দিয়ে দেব, ব্যাস!

রুদ্রবাবু, আপনি আর কি বুঝবেন পায়ের ওপর পা রেখে অবসর কাটানো কাকে বলে!”

 

 

 

 

[ www.pandulipi.net is a one of a kind web portal where readers can spend few time to read Bengali short  story / Bengali poem / Bengali travelogue / Bengali articles / Bengali series / Bengali Thriller / Bengali Detective story  etc. everything complemented with some beautiful photographs or illustrations etc. therefore not only literature www.pandulipi.net also showcases the wide arena of photography and art. Not only Bengali but  www.pandulipi.net also publishes English short  story / English poem / English travelogue / English articles / English series / English Thriller / English Detective story. Remember we have best Bengali short story and English short story in our kitty.Because we believe every story should have its own photograph as well as every photograph has a story to tell. We at www.pandulipi.net thrive to build a link between them.Viewers can read our about us segment https://pandulipi.net/about-us/ ‎ for more details.One more thing to tell that readers can also get in touch with us to get their literary or photography works get published in www.pandulipi.net to showcase their passion to the world. Contact details can be availed at https://pandulipi.net/contact-us/ ‎ ]

 

Author: admin_plipi