হলুদ পরী ।। লেখা : তনিমা সাহা
ঋতমের আজ খুব মনখারাপ। ক্লাস ফোরে পড়ে সে। বার্ষিক রেজাল্টটা এবার একটুকুও ভালো হলো না। বাড়িতে মা-বাবা, কাকু, দাদু-ঠাকুমা সবাই আশা করে বসে আছেন ঋতমের ভালো-রেজাল্টের জন্য। বাড়ির একদম কাছেই স্কুল… তাই ঋতম একাই যায় স্কুলে। রেজাল্ট নিয়ে এসেই সে দীঘির পাড়ে মনমরা হয়ে বসে আছে। দীঘির চারদিক ঘিরে রক্ষণাবেক্ষণ করা ঝোপগাছ আছে। তাতে খুব সুন্দর হলুদ রঙের ফুল ফোটে। বড় ঠাকুরদা বলতেন, এই জায়গাটা নাকি তার মন ভালোর জায়গা। কই ঋতমের তো মন ভালো হচ্ছে না। খালি কান্না পাচ্ছে। কি করবে সে এখন… চলে যাবে দূরে কোথাও… বাড়ির সকলে তো নাহলে এই রেজাল্ট দেখে ছিঃছিঃ করবে। কেউ আর ভালোবাসবে না।
-“উঁউঁউঁ… ওসব একদম মাথায় আনবে না।”
-হকচকিয়ে এদিক-ওদিক তাকায় ঋতম। কে কথা বলে, কেউতো নেই এখানে!
–“ওফ্! আজকালকার ছেলেদের নিয়ে এই এক জ্বালা…. সামনে দেখো, সামনে।”
শব্দকে অনুসরণ করে সামনে তাকালো ঋতম। ঝোপের ফুলগুলো থেকেই শব্দটা আসছে। ভালো করে তাকাতেই ঋতম দেখে একটা হলুদফুল ধীরে ধীরে একটা ছোট্ট মেয়ের আকার নিল। হলুদ রঙয়ের পোশাক পরা, পিঠের দিকে দুটো ছোট্ট পাখা… ঠিক পরীর মতো। সবে আলমোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে ঝোপের ডালে বসলো সে। বড়ো বড়ো চোখে ঋতমের দিকে তাকালো। ঋতমের হাঁ-করা মুখটা দেখে সে বললো, “আমি হলুদপরী…।” অবাক হয়ে ঋতম বলে, “পরী… মানে সত্যিসত্যি পরী?” হেসে হলুদপরী বলে, “একদম… সত্যিকারের পরী… এবার বলো তো কেন তুমি মন খারাপ করে আছো?” চোখের সামনে একটা জলজ্যান্ত পরীকে দেখে ঋতম কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। পরে হলুদপরীর কথায় সম্বিৎ ফিরলে সে মনের সব দুঃখের কথা বলে। সব শুনে হলুদপরী বলল, “তুমি ‘ভুল’ করাকে এতো ভয় কেন পাও? ভুল না করলে সঠিকটা কিভাবে শিখবে?” চোখের জলে ঋতম বলে, “কিন্তু বাড়ির সবাই আমার ওপর আশা করে আছে… আর আমি কিনা…।”
-“একটা পরীক্ষা তোমার ভবিষ্যৎ-নির্ণয় করবে না ঋতম… ভবিষ্যৎ সেটাই হবে যেটা তুমি নির্ণয় করবে। হ্যাঁ চলার পথে অনেক কঠিন সমস্যা আসবে, সাহসের সাথে তার মোকাবিলা করবে, ভুল হবে… নিশ্চয়ই হবে… কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। বাড়ি যাও ঋতম… সবাই যে তোমার চিন্তা করছেন।” দীঘির পাড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ঋতম। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো… তবে এতক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিল… এইতো… ঝোপের হলুদফুলটা তো সাধারণ ফুলের মতোই দেখতে… পরীর মতো তো নয়… নাহ্! স্বপ্নই দেখছিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে দেখে ঋতম বাড়িমুখো ছুট লাগালো। বাড়ি ফেরারপথে কেউ যেন কানেকানে বললো, “ভুল করতে ভয় পেয়ো না… সবাই ভুল করেই শেখে… শুধু ভুলটা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।”