হলুদ পাখি।। লেখা : রঞ্জনা বসু
হলুদ পাখিটা কী সুন্দর! লাল ঠোঁট, হলদে, কালো ডানা।
পাখিটা রোজ সকালে এসে বসে তোতনদের জামরুল গাছে। তোতন তখন পড়ার টেবিলে বসে খোলা জানালা দিয়ে পাখিটাকে দেখে। তোতন ছোট থেকেই পাখি ভালোবাসে। তাই বলে, তোতন যে খুব বড়ো হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। ওর বয়স মাত্র দশ।
সেদিন সন্ধ্যায় আকাশ জুড়ে মেঘ জমেছে। বাতাস বইছে জোরে। ফুলের ডালগুলোর অবস্থা এলোমেলো। ঝোপের ভেতর থেকে মাথা তুলে ফুটে ছিল যে ফুলগুলো, নুয়ে পড়েছে মাটির ওপর। বন্ধ জানালায় এসে হলুদ পাখিটা শব্দ করলো, ঠক্ ঠক্। তোতন উঠে ওর কাছে এল।
বলল, “ও পাখি… তুমি আমায় ডাকছো?”
-“হ্যাঁ গো, ঐ জামরুল গাছে আমার ছানারা রয়েছে। ওদের জন্য একটু খাবার চাই। এই ঝড়, বাদলে ছানাদের রেখে দূরে কি করে যাব? তুমি কিছু দিলে, ছানারা খেয়ে বাঁচে।”
-তোতন, একছুটে রান্নাঘরে গিয়ে কিছু মুড়ি নিয়ে এলো। পাখি ঠোঁটে করে সেই মুড়ি নিয়ে ছানাদের উড়ে উড়ে খাওয়ালো।
-রাত পেরিয়ে গেছে। থেমে গেছে বৃষ্টি। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তোতনকে এসে ডাক দিল, তার মা।
–“ওঠো, উঠে পড়ো এবার। বাইরে তাকিয়ে দেখো, কি সুন্দর সকাল!”
ও কি তবে এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিল?
বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে সোজা বাইরে এল। অনেক দিন পর কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। গাছ- পাতার গায়ের সমস্ত ধুলো আবর্জনা ধুয়ে দিয়েছে।একটা মিষ্টি সোঁদা গন্ধ ভেজা মাটি থেকে উঠে এসে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সে সব কোন দিকেই খেয়াল করছে না, তোতন। জামরুল গাছটার নিচে গিয়ে খুঁজে যাচ্ছে, হলুদ পাখিটাকে। কিন্তু না, কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
তোতনের খুব মন খারাপ। মা, তাকে বোঝাতে থাকে।
-“সেই পাখিটা কোথায় হারিয়ে গেল, মা?”
-মা বলে, “আছে কোথাও, ওর বাচ্চাদের কাছে।”
-কয়েক দিন পর, এক সকালে তোতন দেখে হলুদ পাখিটা জামরুল গাছে। কিন্তু আজ ও একা নয়, সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি পাখি। এডালে, ওডালে উড়ে উড়ে বসছে। তোতন বাইরে এসে হাত নেড়ে মিষ্টি হেসে ওদের অভিনন্দন জানালো।