আমার ছোট্ট চড়ুই পাখি
লেখা: রাহুল পাল ।। ছবি: কুণাল
গ্ৰীষ্মের এক ঝিমঝিমে দুপুরে হঠাৎ ই ফোনটা বেজে উঠল। ওদিক থেকে, “হ্যালো, কি করছিস? চল একটু গল্প করি।” এদিক থেকে আমি বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে।” আসলে আমরা দুজনে খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমি আর বৃষ্টি। আমরা এক উদ্ভট কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। দুজনেই Suspense and Thriller এর কৌতুহলী শ্রোতা বটে, কিন্তু mystery solved না হওয়া পর্যন্ত দমবন্ধ হয়ে আসা এক ভয় বিরাজ করত আমাদের মনে। গল্প শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। এসে দেখলাম যে একটা ছোট্ট চড়ুইয়ের বাচ্চা মাটিতে পড়ে আছে। ওদিকে ওর মা চড়ুই কিচিরমিচির করে সাহায্য প্রার্থনা করছে আর ওর চারপাশে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি সেখানে গেলাম, ব্যাপারটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার মধ্যেই ওদিক থেকে বৃষ্টি বলে উঠল, “কি হল রে? তুই চুপচাপ হয়ে গেলি কেন?” আমি বললাম, “আরে দেখ না, একটা চড়ুইয়ের বাচ্চা বাঁচার জন্য ছটপট করছে।” সে বলে, “তো কি হল, ওকে বাঁচা।” ছোট্ট চড়ুইকে হাতে নিয়ে একটু ঝেড়ে নিয়ে পাঁচিলের উপর উঠিয়ে দিলাম। দেখলাম ওর মা ওকে আদর করছে আর কিচমিচ করে পাখিদের ভাষা কি যেন বলল। ঠিকই বুঝতে পারলাম, মা সন্তানকে বারণ করছে যে ওইভাবে আর কক্ষনো উড়তে যাবি না। কিছুক্ষণ পরেই ছোট্ট চড়ুই অত্যন্ত সাহসিকতার সহিত মায়ের পিছন পিছন উড়তে লাগল। ফোনটা কেটে গিয়েছিল। ফোন লাগালাম। রিং হচ্ছে। ওদিক থেকে, “হ্যাঁ বল। প্রথমেই বল পাখিটার কি হল, ঠিকঠাকভাবে বাঁচাতে পারলি তো?” আমি বললাম, “হ্যাঁ রে বাবা, তোর পাখিকে বাঁচাতে পেরেছি, সে এখন বাসায় ফিরে গেছে মায়ের সঙ্গে।”
-“বাহ্ রে বন্ধু, তুই আজ একটা ভালো কাজ করলি। I really appreciate you.”
আজ প্রায় তিনমাস, আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়না। যদিও তাকে আমি miss করি না সেটা ঠিক নয়। আজও তার ফোন কলের অপেক্ষায় থাকি। তবে জানি যে সেটা আর কোনদিনও আসবে না। এবার গল্পে আসি, সে এখন অন্য কারোর শ্রাবণের শীতল বৃষ্টি, তাকে ছাড়া এই জীবন বৃথাই সৃষ্টি। আসলে বন্ধুত্বটা এতোটাই গভীর হয়ে গিয়েছিল যে তাকে বেঁধে রাখার জন্য সম্পর্কের প্রস্তাব দিতে হয়েছিল। আর আমিও তো ওর প্রতি আগ্ৰহ সেভাবে দেখাতে যাই নি। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম ভালোবাসা হল একটি পাখি যাকে খাঁচায় বন্দী করে লাভ করা যায় না, সুবিশাল গগনে পবনে মুক্তি দিতে হয়। তার যদি এই আশ্রয়দাতা বৃক্ষের আর আশ্রয় প্রয়োজন হয় কিংবা সে যদি আবার আশ্রয় ভালোবাসা চায়, তাহলে সে নিশ্চয়ই পাবে।
ছোট্ট চড়ুইটা এখন একটু বড়ো হয়েছে। সে মাঝেমাঝে আসে আমার বাড়ি, চাঁপা ফুলের গাছে বসে। আবার কিচিরমিচির করতে করতে রওনা হয়। ভালো লাগে। আমাকে বলতে পারেন এটা আমার একটা অবসর যাপনের বিনোদন। কিন্তু সেই ছোট্ট চড়ুই যাকে আমি আমার মন বৃক্ষে আশ্রয় দিয়েছিলাম সে আর ফিরে আসে না। বন্ধু, এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও তোকে খুব miss করি। ইতি, “ভালো থাকিস মোর ছোট্ট পাখি,
আজও তোকেই ভালোবাসে মোর দুটি আঁখি।”