
সকাল থেকে আজ জয়দেবের খুব ব্যস্ততা। ‘নব তরুণ সংঘ’ ক্লাবের আজ পঁচিশ বছর পূর্ণ হচ্ছে, তার ওপর আজ ২৬শে জানুয়ারী, প্রজাতন্ত্র দিবস। তাই আজ ক্লাবে সারাদিন ধরে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রভাতফেরী, পতাকা উত্তোলন, অঙ্কন প্রতিযোগিতা, দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। ‘নব তরুণ সংঘে’-র সেক্রেটারী জয়দেব নিজে সব দিক দেখাশোনা করছে। ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকে ও এই ক্লাবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্লাবের গুরু দায়িত্বের ভার তাই জয়দেবের। ক্লাবের ছেলেগুলোও হয়েছে তেমন!! কোনো কাজই ওরা নিজেরা একা করতে পারেনা। যে কোনও ব্যাপারে ওরা ওদের প্রিয় জয়দার ওপর নির্ভরশীল। তাই সব দিক সামাল দিতে গিয়ে জয়দেবের আজ দম ফেলবার ফুরসৎটুকুও নেই।
খুব সকাল সকাল আজ পাড়ার প্রায় সকলে ক্লাবের মাঠে জড়ো হয়েছে। রঙিন কাগজ, ফুল দিয়ে সাজানো শুরু হয়েছে ক্লাব ঘর এবং মাঠের একাংশ। একদল কচিকাঁচা ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক……. বয়স্কদের দল বেশ খুশি খুশি মুখে নিজেদের ছোটবেলার ২৬শে জানুয়ারীর সকালের স্মৃতিচারণ করছেন…… ক্লাবের মাঠটা যেন আজ কোনও এক উৎসবের রূপ পেয়েছে।
অনেকক্ষণ থেকেই জয়দেব একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছে…. ওদের পাড়ার এক পাগল ‘দীপু’ ক্লাব ঘরের পাশের আমগাছটার নীচে এদিক ওদিক করছে আর বিড়বিড় করে কি সব বলে চলেছে নিজের মনে। এমনিতে পাগলাটা কাউকে কিছু করে না। তবে আজ ওর আচরণ যেন কেমন একটু অস্বস্তিদায়ক লাগছে!! আজকের অনুষ্ঠানের জন্য ক্লাবের মাঠে অনেকে জমা হয়েছে। কোনও রকম অঘটন ঘটুক, জয়দেব তা চান না। তাই সে ক্লাবের দু’জন ছেলেকে পাগলা দীপুর ওপর নজর রাখতে বলে, অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
পতাকা উত্তোলনের জায়গাটা ফুল, রং দিয়ে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পাড়ার সব ক্ষুদেদের একটা লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়েছে। সবার পরনে সাদা ড্রেস, বুকে তেরঙা ফিতে, আর সবার হাতে একটা করে ছোট্ট পতাকা।
ওদেরই পাড়ার সব থেকে প্রবীণ সবার প্রিয় মনোরঞ্জন জ্যেঠুর হাত দিয়েই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলো। পতাকা উত্তোলিত হওয়ার সাথে সাথে চারিদিকে ফুল ছড়িয়ে পড়লো। ‘নব তরুণ সংঘে’-র মাঠ প্রাঙ্গণ “জয় হিন্দ্…… বন্দেমাতরম্…..” শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো।
কিছুক্ষণ বাদে, মিষ্টির প্যাকেট ও চকোলেট সব বাচ্চাদের এক এক করে দেওয়া শুরু করলো জয়দেব। এমন সময় হঠাৎ হৈ হৈ একটা শব্দ……..কিছু বুঝে ওঠার আগেই জয়দেব ঘাড় ঘোরাতেই দেখে পাগলা দীপু “বন্দেমাতরম্ বন্দেমাতরম্” বলে চিৎকার করতে করতে মাঠের মাঝে ছুটে আসছে……..। আর ওকে আটকাতে ওর পেছন পেছন ছুটে চলেছে ক্লাবের দু’চার জন ছেলে। আচমকা এমন ঘটনায় সবাই হতবাক! বাচ্চাগুলোও ভয় পেয়ে গিয়েছে!
হঠাৎ মাঠের একটা জায়গায় গিয়ে উপুড় হয়ে কিছু একটা কুড়োতে শুরু করেছে ওই পাগলটা। জয়দেবও দৌড়ে গিয়েছে ততক্ষণে সেখানে। সেখানে গিয়ে ও এবং বাকিরা যা দেখলো, তাতে সবাই ভীষনভাবে আশ্চর্য, বলা ভালো লজ্জিত হলো!!
পতাকা উত্তোলনের সময় যখন একদল পুঁচকে হাতে ছোট ছোট পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, পতাকা উত্তোলনের পর কোনও কারণে ওদেরই মধ্যে থেকে দু’এক জনের হাত থেকে পতাকা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। সবাই সবার মতো ব্যস্ত থাকায় ব্যাপারটা খেয়াল করেনি। কিন্তু মাঠের কিছুটা দূরে বসে থেকে পাগলা দীপু ঠিক খেয়াল করেছে। আর তাই আমাদের দেশের পতাকাকে ভূ-লুণ্ঠিত হতে দেখে ওর অন্তরের দেশাত্মবোধ ওর পাগল মনকে নাড়া দিয়েছে। দৌড়ে গিয়েছে ধূলো মাখা মাঠে পড়ে থাকা থেকে আমাদের ‘তেরঙা’-কে বাঁচাতে।
পাগলা দীপু দেশের গর্বের জাতীয় পতাকা দু’টো মাটি থেকে তুলে নিজের পরনের নোংরা শতছিন্ন চাদরটা দিয়ে মুছে, ডানহাত কপালে ঠেকিয়ে, বামহাতে পতাকা দু’টো উঁচু করে ধরে চিৎকার করে এক নাগাড়ে “বন্দেমাতরম্ সুজলাং সুফলাং…..” গেয়ে চলেছে আপন মনে।
পাগলটার এই দৃশ্য দেখে, মাঠে উপস্থিত প্রায় সকলের এবং জয়দেবের চোখ ভিজে উঠেছে, নিজেদের অজান্তেই সকলের ডানহাত সেল্যুট ভঙ্গিমায় নিজেদের কপালে ঠেকে গিয়েছে।
হোক না সে বদ্ধ উন্মাদ, কিন্তু সেই পাগল মনেও যে স্বদেশপ্রেম বিরাজ করছে খুব স্বাভাবিকভাবে, দেশের বাকি সুস্থ সবল মানুষগুলোর মতোই, হয়তো বা তাদের থেকে কিছু বেশিই। সে প্রেমে নেই কোনও খাদ। পুরোটাই শুদ্ধ এক দেশপ্রেম। জয় হিন্দ্।
লেখাঃ রাজনন্দিনী
ছবিঃ দেব
Obeykto Swadeshprem | Rajnandini | Dev | www.pandulipi.net | Patriotic | Motivational | Story | Bengali
দেশাত্মবোধ উপলদ্ধি হলো , দারুন হয়েছে এই রকম গল্পের আশায় আরো রইলাম ।
ধন্যবাদ। আপনাদের ভালোলাগা, আমার লেখার অনুপ্রেরণা।
সুন্দর গল্প। লেখিকার দেশপ্রেম ও অনুভূত হচ্ছে পড়তে পড়তে।
ধন্যবাদ দাদা।
Sudhu golper jonyo noi, thik aajker dine eto bhalo lekha peye abhibhuto, aamra samanya anupranita holey lekha sarthak hobey.Rajnandini aapnar chintashaktik anek samman janai.
ধন্যবাদ।একদম ঠিক বলেছেন। পাঠকের ওপরই নির্ভর করে লেখার সার্থকতা।সঙ্গে থাকুন।
ভালো লাগলো
ধন্যবাদ দাদা ?
Khub valo laglo pore☺️.
Thank you ?
অসাধারণ লেখা
ধন্যবাদ ?
I like this presentation. This is a beautiful story.
Thank q…?
খুব সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক লেখা ।
ধন্যবাদ দিদি ?
Like!! Thank you for publishing this awesome article.
761468 290147I like your writing style truly loving this web site . 609006
849493 660912forty individuals that work with all of the services Oasis provides, and he can be a very busy man, he 703869
197076 518281Usually I do not read post on blogs, nevertheless I would like to say that this write-up extremely forced me to take a look at and do so! Your writing taste has been surprised me. Thank you, quite wonderful post. 192538
748329 189884You ought to be quite astute at research and writing. This shows up within your original and exclusive content. I agree together with your primary points on this subject. This content should be seen by more readers. 362734