পিছু টান।। কলমে : পীযূষ বসু চৌধুরী
অবনী হাঁটতে হাঁটতে প্রায় পার্কের কাছাকাছি চলে এসেছে। কিছুটা দূরে একটা চায়ের দোকান দেখে অবনী এগিয়ে যায়। কয়েকজন বসে চা খাচ্ছে। অবনী একটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে বসে পড়ল। দোকানীর দিকে তাকিয়ে বলল – এক কাপ চা, একটা বিস্কুট। অবনী চা খেয়ে বাজার যাবে। বসে থাকা দু এক জন মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। একজন ঠোঁট বাঁকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলতে চাইলো- কি জানি, আমি চিনি না। অবনী পেপারের হেডিং গুলো পড়ে ফেলল। সব নীরবতা ভঙ্গ করে যে ছেলেটা চা বানাচ্ছিল সে বলল – এই যে কাকু দুধ চা না লেবু? অবনী বলে – না না ভাই লেবু চা। পাশে বসা ভদ্রলোকটি বলে – দাদা, এ পাড়ায় নতুন নাকি। অবনী মাথা ঝাঁকিয়ে বলে – হ্যাঁ, কেন বলুন তো? গতকাল এসেছি, সানি রকের বি- ব্লকের সেকেন্ড ফ্লোরে। একটু বাজারে বেড়িয়েছি, শাক- সবজি আর মাছের জন্য। ডান পাশ থেকে আর এক ভদ্রলোক বললেন – কমপ্লেক্সের ভেতরেও তো একটা বাজার আছে। অবনী বলে – বলবেন না মশাই, আগুন, আগুন! প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। একদম চোর। পাশের জন বলে ওঠে – আমিও তাই শুনেছিলাম। তা মশাই রিটায়ার্ড না ব্যবসাপাতি করেন। অবনী বলে, আরে না না, রিটায়ার্ড। পেনশনের টাকায় চলছে। সরকারি অফিসের সিনিয়র ক্লার্ক। চাকরির শেষ দিকে সুপারিনটেন্ডেন্ট। এখানে আসার আগে অবনী থাকতো নাগের বাজারের কাছে দু’ঘরের ছোট একতলা বাড়িতে। একটা ঘরে বাবা মা, আর একটায় দাদা আর অবনী।বারান্দায় এজবেস্টরের শেডের রান্না ঘর, সামনে কিছুটা জমি। অবনীর বাবা ছিলেন পাড়ার স্কুলের ইতিহাসের মাষ্টার, কোন রকমে সংসার চালাতেন। দাদা মেধাবী ছাত্র, বিদেশে ভালো চাকরি পেয়ে বিয়ে করে ওখানেই থেকে গেলেন। আর কোন যোগাযোগ নেই। ভালোদা’র মুখটা এখন ছোটবেলার ছবি না দেখে মনে করতে পারে না অবনী। অবনীর বাবার পেনশনের সামান্য টাকা আর অবনীর মাইনের টাকার কিছু অংশ দিয়ে সংসার চলতো। তারপর স্ত্রী আর মেয়ে এলো, সংসার আরো একটু বাড়লো। মাইনে সাতশো সাতাত্তর থেকে বেড়ে হলো চৌদ্দশ। এরপর পর্ণার পড়াশুনার খরচ বাড়তে লাগলো। স্কুলের মাইনের চাইতে বেশী খরচা হতে লাগলো বাড়ীতে রাখা মাষ্টারদের জন্য। অবনী কিন্তু রিক্সোয় না চড়ে স্টেশন থেকে হেঁটে হেঁটে অফিস যেত, গায়ে সেই এক হালকা নীল সার্ট আর খয়েরি প্যান্ট, পায়ে বেল্টের কাবুলি জুতো। যদিও এই সবটাই অবনী পয়সা বাঁচাবার জন্যই করতো এটা কারো অজানা ছিল না। মেয়ে পর্ণাকে পড়াশুনা করাতে গিয়ে অবনীর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। চাকরি জীবনে অবনী যে খুব বেশি কিছু একটা জমাতে পেরেছে তা নয়। অবনীর মেয়ে পর্ণার একটা চাকরি হয়েছে, সে এখন কোলকাতার একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে এইচ আর ডি এর কাজ করে। বেশ ভালো মাইনের চাকরি। বিদেশে যাবার অফারও পেয়েছে পর্ণা। কিন্তু সে যেতে চায় নি। কাজের সূত্রে প্রোজেক্ট ডেভলপার কুশলের সাথে পর্ণার আলাপ হয়।কুশল বেশ বড়লোকের ছেলে, কোলকাতায় থাকে। আস্তে আস্তে দুজনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কাজের সুত্রে পর্ণাকে কুশলের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলতে হয়। অফিসের গাড়ীতে কুশল রোজই পর্ণাকে বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। কুশলের সাথে পর্ণার একটা ভালোলাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পর্ণার পাশের কাউন্টারে বসে সৌম্য। সৌম্য বাগচী। শান্ত প্রকৃতির মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাবা রিটায়ার্ড শিক্ষক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের। এখন পেনশনে সংসার চলে। অফিস থেকে কুশলকে প্রোজেক্টের মিটিং-এ দু’দিনের জন্য বেঙ্গালুরুতে পাঠায়। ফোনে পর্ণার সাথে কুশল দুপুরেও একবার কথা বলেছে প্রোজেক্টের বিষয়ে। আজ দক্ষিনবঙ্গ জুড়ে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। সাড়া দিন ধরে বৃষ্টি পড়েই চলেছে সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় জল জমেছে। পর্ণা ল্যাপটপ বন্ধ করে, ফাইলপত্র তুলে, পিঠের ব্যাগ নিয়ে লনে আসতেই দেখল বৃষ্টি পড়ছে। অফিসের ড্রাইভার এসে বলল ম্যাডাম, গাড়ীটা নিয়ে আসি। পর্ণা বলল – হ্যাঁ, সুবলদা নিয়ে আসুন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল সৌম্য। এগিয়ে এসে বলল – পর্ণা, যদি কিছু মনে না করো তো, আমাকে ফেরার পথে একটু কাশিপুরে নামিয়ে দিলে খুব ভালো হতো, দেখছো তো ওয়েদার কেমন খারাপ হয়েছে। আরও রাত হলে হয়তো ফেরার মতো কিছুই পাওয়া যাবে না। পর্ণা আর না করে না। গাড়ী ছুটে চলে কাশীপুর হয়ে নাগের বাজার। সৌম্য যেতে যেতে তাদের পরিবারের কথা পর্ণাকে বলে। পর্ণার খুব একটা খারাপ লাগেনি সৌম্যর কথাবার্তা। পরের দিন সৌম্য পর্ণাকে তার মায়ের বানানো টিফিন শেয়ার করে। দুদিনেই সৌম্যের সাথে পর্ণার একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আজকে টিফিনের পর সৌম্যের মাকে ফোন করে পর্ণা টিফিনের খুব প্রশংসা করেছে। কুশল ফিরে এসেছে, আজ দুপুরে মিটিং ডেকেছিল; আরও একটা নতুন প্রোজেক্ট আসছে সেটা নিয়ে আলোচনাও হয়। সকলকে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তাড়াতাড়ি কাজটা তুলে দিলে কোম্পানির হাতে আরো কাজ আসবে। সেদিন রাতের খাবার খাওয়ার সময় পর্ণার মা পর্ণাকে বলেন – তোর মামা তোর জন্য একটা পাত্র দেখেছে, তুই যদি রাজী থাকিস তো রোববার ওরা দেখতে আসবে। আর তোর যদি পরিচিত কেউ থাকে তাহলেও আমাদের বলতে পারিস। আমরা তাদের সাথে কথা বলবো। পর্ণা বলে- আচ্ছা মা, যারা এতদিন আমাদের কোন খোঁজ খবর রাখতো না হঠাৎ আমার বিয়ের জন্য ওরা এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেন। তুমি মামার কাছে আমার বিয়ের জন্য লাখ খানেক টাকা চেয়ে দেখ তো। আবার দেখবে পাঁচ বছর কোন যোগাযোগ রাখবে না। আর আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমরা কি খুব আনন্দে থাকতে পারবে? আমি তোমাদের একমাত্র মেয়ে। আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমরা তো একলা হয়ে যাবে। তোমাদের অসুখ বিসুখে দেখার কেউ থাকবে না। বাজারের ব্যাগ বইতে বাবার কষ্ট হয়, তোমার একটা রান্নার লোকের দরকার, সেই ছোটবেলার থেকে রোজ দুবেলা খুন্তি নেড়ে চলেছো। তোমরা কোন কথা শুনবে না, বললেই বলবে কাজ করলে শরীর সুস্থ থাকে। তাই আমাকেই সাথে থেকে তোমাদের কে ভালো রাখতে হবে। আমি মেয়ে হয়েও তো তোমাদের ছেলে, মা। আমাকে ক’টা দিন ভাববার মতো সময় দাও। তারপর তোমাদের জানাবো। কয়েকদিন পর বাড়ী ফেরার পথে পর্ণা কুশলকে বলে – আমার বাড়ীতে আমার বিয়ের সমন্ধ দেখতে শুরু করছে, তুমি যদি আমাদের বিয়েতে রাজি থাকো তো, আমাদের বাড়ীতে একদিন বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে এসে কথা বলতে পারো। তাহলে রোববার মামা আমার জন্য যে বিয়ের সমন্ধটা এনেছেন তাদের আসতে না করে দেব। কুশল বলে- ঠিক আছে, আমাকে দুটো দিন সময় দাও।আমি বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দেখি। দুদিন পর কুশল বলল – মা-বাবা রাজী হয়েছেন। তারা আগামী রোববার, তোমার বাবা-মার সাথে কথা বলতে যাবেন। রোববার পর্ণা, বাড়ীঘর যথাসাধ্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখলো। কুশল আর তার বাবা মা ঠিক সন্ধ্যায় গাড়ী নিয়ে চলে এলো। বাবা-মা তাদের সকলকে আদর আপ্যায়ন করে বসালেন। এখন বারান্দার এক দিকটা রান্নাঘর আর অন্য দিকটা কাঁচের জানালা দেওয়া বসার ঘর। বাবা মিষ্টির দোকান থেকে গরম সিঙ্গাড়া, আর কয়েক পদের মিষ্টি এনে রেখেছেন। মা গল্প করতে করতে উঠে চা বানাতে গেলেন। মা বললেন – কি হলো দাদা, দিদি আপনারা তো কিছু খেলেন না, নিন শুরু করুন। কুশল, নাও তুমি শুরু করো। আমি মেয়েকে দিয়ে সকলের জন্য চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। কুশল ও তার বাবা মা সিঙ্গাড়া মিষ্টি খেতে খেতে পর্ণার বাবার সাথে কথা বলছিলেন। পর্ণা সকলকে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। চা দিয়ে পর্ণা তার মায়ের পাশে বসে। খাওয়া দাওয়া শেষে কুশলের বাবা মা বলে – আপনার মেয়ের কথা কুশলের কাছে অনেক শুনেছি। অফিসের কাজে আপনার মেয়ে খুবই দক্ষ। বিদেশে যাবার সুযোগ পেয়েও যেতে চাইছে না। কেন যে যেতে চাইছে না তা বুঝতে পারছি না। আপনাদের মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে, একটা ভালো দিন দেখে কুশলের আর পর্ণার বিয়েটা… কথা শেষ করতে না দিয়েই পর্ণা বলে, কুশল আমার কয়েকটা কথা বলার আছে। পর্ণার বাবা বলেন – তুই আবার কি বলবি রে মা। আমাদেরও কুশলকে পছন্দ হয়েছে। পর্ণা বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলে- আমার কিছু বলার আছে বাবা, আমি ও কুশল দুজনে দুজনকে ভালোবাসি। আপনাদের পরিবারের কুশল যেমন একমাত্র ছেলে তেমন আমাদের পরিবারে আমি একমাত্র মেয়ে। কুশল যেমন বৃদ্ধ বয়সে আপনাদের একমাত্র যষ্টি, আমার মা-বাবার বৃদ্ধ বয়সে আমি তাদের একমাত্র যষ্টি। আমার বাবা-মা নিঃস্ব হয়ে আমাকে পড়াশুনা করিয়ে বড় করেছেন। এই জন্য আমি অসময়ে তাদের পাশে থেকে সাহায্য করতে চাই। তা সেটা আর্থিক হোক বা মানসিক ভাবে। আশা করি আপনারা আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছেন। আপনারা যদি এমনটা মেনে নিতে পারেন তবেই আমি বিয়ে করবো নয়ত এই সম্পর্ক না হওয়াই ভালো। কুশলের মা চায়ের কাপটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলে – ঠিক আছে আমরা সবাই তোমার কথা শুনলাম, বাড়ীতে গিয়ে সকলের সাথে আলোচনা করে, কিছুদিন পরে সব জানিয়ে দেবো কেমন। আজ তবে চলি। পর্ণার বাবা বললেন – আচ্ছা মা, তুই আবার এসব কথা ওনাদের বলতে গেলি কেন? কেউ এসব কথা শুনলে কি তোকে ছেলের বৌ করে নিয়ে যাবে। পর্না বলে- জানি বাবা,আমার এই প্রস্তাবে হয়তো কেউ আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না, কিন্তু আমার বিয়ের জন্য আমি তোমাদের অসহায় অবস্থায় ফেলে যেতে পারি না বাবা। তাতে যদি আমার বিয়ে হয় তো ভালো, আর বিয়ে, না হলে না হবে। আমি তোমাদের আর কষ্টে রাখতে পারবো না বাবা। পরের দিন অফিসে গিয়ে দেখে কুশল নানা অজুহাতে পর্ণাকে এড়িয়ে চলছে। বেশীর ভাগ সময় ব্যস্ততার ভাব করেই কাটিয়ে দিল। সৌম্য টিফিনের সময় পর্ণাকে ডেকে নিয়ে যায়। টিফিন খেতে খেতে পর্ণা বলে – তোমাদের ওদিকে ভালো একতলা বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে কিনা দেখো না। সৌম্য বলে – তোমাদের বাড়ী আছে তো আবার ফ্ল্যাট দিয়ে কি করবে। পর্না বলে- মা ভীষণ বিয়ে বিয়ে করছে। একটা ভালো বাড়ী ঘর না হলে কি কেউ মেয়ে পছন্দ করবে। সৌম্য চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে – কেনো, কুশল? পর্ণা সৌম্যের কথা এড়িয়ে গিয়ে বলে – দেখো না একটা বাড়ী কিম্বা ফ্ল্যাট। কয়েকদিন হয়ে গেল, খুব প্রয়োজন ছাড়া কুশল পর্ণার সাথে কথা বলে না। টিফিনে একসাথে যায় না, মিটিং এর ফাইল বা কিছু লাগলে পর্ণাকে ফোন করে বেয়ারা দিয়ে পাঠাতে বলে। রোববার দিন রাত নটা নাগাদ কুশলের ফোন আসে বলে – পর্ণা, আমি আগামী বুধবার প্রোজেক্ট ইনচার্জ হয়ে কানাডা চলে যাচ্ছি। বাবা-মা তোমার শর্তে রাজী হতে পারে নি তাই কলেজের বান্ধবী শ্রীজিতার সাথে আমার রেজিষ্ট্রি করে বিয়েটা হচ্ছে। আগামী মাসে শ্রীজিতা কানাডা পৌঁছবে। পর্ণা কুশলের কথার কোন উত্তর দেয় না শুধু বলে – কনগ্র্যাচুলেশন কুশল। পর্ণা ফোনটা বন্ধ করে দেয়। সৌম্য পর্ণাকে বলে – কুশল যে বিদেশে যাচ্ছে এটা তুমি আগে জানতে না? পর্ণা মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে। সৌম্য বলে – শুনলাম আজ নাকি শ্রীজিতার সাথে ওর রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ। পর্ণা কোন উত্তর দেয়না। সৌম্য পর্ণাকে টিফিন বাক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলে – তোমার ফেভারিট ডিশ বানিয়ে দিয়েছেন মা। খেয়ে দেখো, মা রাতে ফোন করবে। পর্ণা দু’চামচ খেয়ে বলে – দারুন। দারুন হয়েছে। রাতে বাবা আমার বিয়ের ব্যাপারে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন। ফোন শেষে বাবা এসে আমায় বললেন – কুশল কি তোমায় কিছু জানিয়েছে পর্ণা? পর্ণা বাবাকে বলে – না, আজ অফিসে শুনলাম বুধবার ও কানাডা চলে যাচ্ছে শ্রীজিতাকে বিয়ে করে। ও আচ্ছা, এ কথা বলে চলে গেলেন পর্ণার বাবা। কি চিন্তা করে ফিরে এসে বললেন – রোববার তোমাকে পাত্রের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে। এবার আর তুমি আগের বারের মতো বোলো না কেমন। পর্না ঘাড় নেড়ে না বলল। রোববার পর্না খুব ভালো করে সেজেছে। তাকে একবার দেখেই যেন পাত্র পক্ষের পছন্দ হয়ে যায়। পাত্র পক্ষের লোকজন এসে বসে আছেন বাবা মায়ের সাথে পরিচিত হচ্ছেন। মা তাদের খাবার দিয়েছেন। পাশের বাড়ির ময়না এসে চা বানিয়ে দিয়ে গেছে। বাবা, মাকে বললেন – পর্ণাকে চা নিয়ে আসতে বলো। পর্ণা চা নিয়ে ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল – একি সৌম্য তুই। তুই তো আমায় আগে কিছুই বলিস নি রে। সৌম্যর মা চায়ের কাপ নিতে নিতে বললেন – আমি তোমাকে চমকে দেবো বলে বলতে মানা করেছিলাম। শুনুন দাদা দিদি, পর্ণাকে আমাদের আগের থেকেই পছন্দ ছিল। পর্ণা বলে – মাসিমা আমার যে একটা শর্ত আছে। পর্নাকে থামিয়ে দিয়ে সৌম্যের মা বলেন – তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমরা সব শর্ত মেনে নিয়েছি। এনারা সৌম্যর মামা মামি, মামা প্রোমোটার। তোমার শর্ত তোমার হবু মামা শ্বশুর ব্যবস্থা করে দেবে। সৌম্যর মা বলেন – কি হলো পর্ণা, এবার সৌম্যকে বিয়ে করতে রাজী আছো তো। পর্ণা আর কিছু বলতে পারে না। এক পলক সৌম্যর দিকে তাকিয়ে, মাথা নিচু করে বসে থাকে।