ভালবাসার গন্ধ

ভালবাসার গন্ধ ।। লেখা : অতনু কর্মকার

—— এক ——
“আচ্ছা! ভালবাসার কি কোনো গন্ধ হয়? তুই পেয়েছিস কখনও!” অর্কর দিকে না তাকিয়েই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল মানভি।
অর্ক মানে অর্কজিৎ, ওরা দুজনেই একটা স্থানীয় খবরের কাগজে চাকরি করে। অর্ক হল ক্যামেরাম্যান আর মানভি জার্নালিস্ট। ফিল্ডের কাজটা ওরা ইদানিং একসাথেই শুরু করেছে, এর আগে প্রুফ রিডিংয়ের কাজ করত দুজনেই। প্রোমোশনের পরে এই প্রোফাইলটা দু’জনেই একসাথে পেয়েছে ওরা। একত্রে কাজ করার সুবাদে ওদের আলাপটাও অনেকদিনের; ঠিক কলিগ সুলভ নয়, অনেকটা বন্ধুত্বর মতোই ওদের মেলামেশাটা। আজকে ওদের একটা পলিটিকাল ডেমোন্সট্রেশন কভার করার ছিল, কিন্তু পুলিশ লাঠি চার্জ করে সেই সুযোগটা হাতছাড়া করে দিয়েছে। যৎসামান্য কভার করে ভিডিও ফাইলটা অফিসে পোস্ট করে দিয়েছে অর্ক, তাই আজকের মতো কাজ শেষ ওদের।
শহীদ মিনার থেকে হাঁটতে হাঁটতে ওরা এখন ক্যালকাটা প্রেস ক্লাবের লেকের ধারে এসে বসেছে, একটু জিরিয়ে নিতে। যদিও মরশুমটা বর্ষাকাল, বৃষ্টি হয়নি একদমই গত চার-পাঁচ দিন ধরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ময়দানে বিকেলের পর ভ্যাপসা গরমটা আর সেরকম মনে হচ্ছিল না অর্কর। ঠান্ডা হাওয়াতে মাথাটা বেশ হালকা হালকা হচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ বাণের মতন প্রশ্নটা আছড়ে পড়ল।
প্রশ্নটার মাথা-মুণ্ডু তল পেল না অর্ক! কিছু তা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল মানভির দিকে, সে যে কোন দিকে তাকিয়ে আছে সেটাও ঠাওর করতে পারল না অর্ক! কিন্তু মানভি যে ওর উত্তরের অপেক্ষায় আছে, সেটা বুঝতে সময় লাগল না।
“ভালবাসার গন্ধ…” শুরু করে একটু আটকে গেল অর্ক।
“তোকে রিপিট করতে বলিনি, হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর দে।” মানভি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল।
“বাইনারিতে উত্তরটা হয়তো হয় না। তবে ভালবাসা একটা অনুভূতি, একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট সাবজেক্ট আর গন্ধ একটা ফিজিক্যাল সেন্স- দুটোর ইন্টারসেকশন কি সম্ভব?” অর্ক বলে উঠল।
“তবে হ্যাঁ, একটু অন্য ভাবে দেখলে… এই ধর এখন যদি বৃষ্টি নেমে ময়দানের মাটিকে ভেজাতে শুরু করে; বৃষ্টির জলে ভেজা মাটির গন্ধ- সেটা কার‌ও হয়তো ভাল লাগতে পারে। যেমন ধর ছোটবেলায় মায়ের বিকেলে ধুপ-ধুনো জ্বালানোর যে গন্ধ, সেটা আমি এখনও কোনও বাড়ি থেকে পেলে মনটা ভাললাগায় ভরে যায়। এগুলো হল কিছু নির্দিষ্ট গন্ধকে ভালবাসা, যেখানে গন্ধের সাথে স্মৃতি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু ভালবাসার গন্ধ ব্যাপারটা আমি ঠিক হজম করতে পারলাম না!” অর্ক একটু থামল ওর প্রতিক্রিয়াটা বোঝার জন্য।
“দোষটা তোর নয়, আমার বোঝা উচিত ছিল!” মানভি দৃষ্টি না সরিয়েই উত্তর দিল।
“কী?” অর্ক কিছুটা অপ্রস্তুত এখন।
“কিছু নয় রে, বোঝা উচিত ছিল যে উত্তর তো দূর, তুই প্রশ্নটাই নিতে পারবি না!” মানভি এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল।
অর্কর একটু রাগ হল, ভাবল একবার যে বলেই দেয়– কেন? তোমার তমালকে জিজ্ঞেস করো না? তোমরা দু’জনে নিশ্চয়ই পাবে ওইসব গন্ধ, যত সব উদ্ভট চিন্তাভাবনা! কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে মানভির মনটা ভাল নেই, তাই কথাগুলো বলল না; না হলে আজকে একপ্রস্থ হয়ে যেত। অর্ক যুক্তি তর্কে একটু কাঁচা, কিন্তু মানভির সাথে ঝগড়ার সময় নিজের প্রতিভাটা উপভোগ করে খুব।
“আমি জানি তুই কী ভাবছিস!” মানভি আলতো করে বলল।
“না তো! কী?” অর্ক আবার ব্যাকফুটে!
“ভাবছিস যে তমাল নিশ্চয়ই পায় গন্ধটা, তাই না?” মানভির স্বরটা বহু দূর থেকে আসছিল মনে হল!
“কেন? তুই পাস না?” অর্ক জিজ্ঞেস করল।
“নাহ!”
“আগে পেতিস, তাই তো?”
“না, আগেও পাইনি কখনও ওর সাথে, ভাবতাম যে হয়তো পরে সেন্স করব! সেই পরেটা আর এল না!”
“ঝগড়া হয়েছে তোদের মধ্যে, তাই না?” অর্ক একটা কুইক কনক্লুশনে আসার চেষ্টা করল।
“তুই বুঝবি না, ছাড় এই টপিক। আর তমাল এমনিতেও পরের সপ্তাহে স্টেটস-এ পার্মানেন্টলি শিফট করে যাচ্ছে, বাঁচা গেছে! গায়ে পড়া আর পেছনে পড়া ছেলেদের এবার থেকে স্ট্রীক্টলি এড়িয়ে চলব। যদি দেখিস এরকম কার‌ও দিকে আবার ঢলতে শুরু করেছি তবে আমাকে ওয়ার্নিং দিবি। তোর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল রে!” মানভির কথায় মনে হল না যে ও খুব একটা আঘাত পেয়েছে পুরো ঘটনাটাতে, অর্ক একটু আশ্বস্ত হল। আবার একটু ঘাবড়েও গেল এই ভেবে যে ও কেন মানভির অনুভূতিগুলোকে নিয়ে ভাবা শুরু করেছে? না কি মানভিকে নিয়ে?

—— দুই ——
কিছুক্ষণের নীরবতা কাটিয়ে উঠে মানভি বলল, “এই বাদাম ভাজা খাবি নাকি? গরম গরম! আমার ব্যাপক লাগে; খাবি?”
ফ্রেশ বাদাম জিনিসটা অর্কের কাছে খুব টেম্পটিং, কিন্তু সবসময় হজম হয় না ; তাই হ্যাঁ বা না বলতে সময় নিল। এই সব ক্ষেত্রে নীরবতাকেই সম্মতি ভেবে মানভি নিজের মতন এগিয়ে চলে। বাদামের ঠোঙাটা অর্কের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “খা খা; অত ভাবিস না, এমনিতেও গ্রে-ম্যাটার কম তোর মস্তিষ্কে।”
কথা না বাড়িয়ে হাতের তালুটা এগিয়ে দিল অর্ক বাদাম নেওয়ার জন্য, ঠোঙাটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মানভি আবার চুপ হয়ে রইল; খানিকটা অন্যমনস্ক ভাবে। “ঘোড়ার গাড়ি চাপবি? আমার অনেক দিনের ইচ্ছে, আজ তো সময়ও আছে আমাদের হাতে।” অর্ক ওর মনোযোগটা অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করল।
“আচ্ছা, তুই কোন‌ওদিন প্রেমে পড়েছিস কার‌ও? ক্রাশের ওপর প্রেমে পড়া নয়, হঠাৎ করে কার‌ও ওপর অকারণেই প্রেমে পড়া। কিংবা ধর বহুদিন ধরে নিজেকে আটকে রেখেও শেষ অবধি আটকে না রাখতে পেরে তার প্রেমে পড়া। এসেছে কখনও এরকম ফিলিংস?” মানভি ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে কথাগুলো শেষ করল, এতটাই স্পষ্ট যে প্রতিটা যতিচিহ্নকে অর্ক অনুভব করতে পারল।
আবার একটা মারাত্মক প্রশ্ন অর্কর সামনে। এর উত্তর অর্ক কিছুতেই দেবে না ঠিক করল, কারণ উত্তরটি অর্কর সামনেই বসে আছে! গত তিন বছরের আলাপে অনেকটাই চিনেছে মানভিকে বাইরে থেকে, কিন্তু ওর মনের তল সব সময় পাওয়া যায় না। কখনও পুরোপুরি এড়িয়ে যায়, হোয়াটস্যাপ-এর মেসেজও ইগনোর করে দিনের পর দিন; আবার কখনো আজকের মতন উদ্ভট প্রশ্নবাণে উড়িয়ে দেয়।
“তোর তো প্রসেসর বসে গেল মনে হচ্ছে? এত ডাটা, এরকমই হওয়ার কথা।” মানভি বিরক্ত হয়ে বলে উঠল।
“না ঠিক তা নয়, আসলে প্রসেসর এত কম ডাটা বলে কাজ করতে পারছিল না।” বলে হেসে উঠল অর্ক।
“সত্যি বলতে কি, আমরা তো বাংলা মিডিয়াম-এর ছেলেদের স্কুলে পড়া ব্যাকগ্রাউন্ডের; কোনও মেয়ে তাকালেই প্রেম-প্রেম ভাব চলে আসত! ইনফ্যাক্ট শুধু দেখে দেখেই কত প্রেমে পড়ে গেলাম টিউশনে গিয়ে।” অর্ক এবার অবলীলায় বলে উঠল।
“এক্ষুনি তো বলি প্রসেসর ডাটা পাচ্ছে না! এ তো আস্ত ডাটাবেস বস! এত ক্যাবলা হয় বাংলা মিডিয়াম-এর ছেলেরা, আমার জানা ছিল না! শুধু চোখ তুলে তাকালেই প্রেম হয়ে যায়, কী স্যাম্পল জিনিস মাইরি তোরা।” মানভি এই সুযোগটা যে ছাড়বে না সেটা অর্কর বোঝা উচিত ছিল, যাইহোক ও থামল না।
“তখন আমাদের দৃষ্টিগুলো খুব পিওর ছিল, জানিস তো! মানে সৌন্দর্য বলতে চোখ, গলার স্বর-সুর, হাতের আঙ্গুল এই সবই বুঝতাম, কোনোদিন আমাদের নজর মুখের থেকে নীচেতে নামত না। এখন তো পুরোটাই ওপেন প্যাকেজের মতন। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল এরকম কিছু নয়; ইট ইস মোসল্টি আ জেনারেশন গ্যাপ।” আপাতত একটা বিরতি নিল অর্ক।
“জিও দাদা! কী দিলেন আপনি। একদম দাদার কীর্তির তাপস পাল তো! আর আমরা, আমাদের ইত্যাদি বলে সবাইকে তো দলে নিয়ে নিলেন, বাজারে কিন্তু শক্তি কাপুরেরা গুনতিতে অনেক বেশি।” মানভি বলতে বলতে ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছিল সেটা ওর চোখমুখ দেখে অর্ক বেশ বুঝতে পারল।
“কিন্তু এই সবই হয় ইনফাচুয়েশন অথবা একতরফা।” মানভি বলল।
“হ্যাঁ, কিন্তু আমার দৌড় এতদূরই ছিল।” অর্কর স্বগতোক্তি।
“হ্যাঁ, যে বিরিয়ানি খেয়ে প্রেমে পড়ে যায়, তার এর থেকে বেশি কিছু হওয়ার নয়।” ময়দানের রোদ হালকা হয়ে আসছে বেলা যত পড়ছে, আর তারই একফালি মানভির চিবুক স্পর্শ করছে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে; ফ্রেম বন্দি করতে খুব ইচ্ছে করছিল। তারপর ভাবল থাক না মনের ফ্রেমে, ওখানে স্মৃতি নষ্ট হয় না; অনেক রাখা আছে শেষ তিন-চার বছরের।
কী কুক্ষনে যে অর্ক এই বিরিয়ানির গল্পটা শুনিয়েছিল আগের সপ্তাহে, রোজই আওয়াজ খাচ্ছে তারপর থেকে। অর্কদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়দের বাড়ি বাংলদেশের নারায়ণগঞ্জ বলে একটা গ্রামে; সেখানে গিয়ে একটি মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল ওর। তখন অর্ক ক্লাস এইটে পড়ে। মেয়েটি একবার ওকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে মায়ের হাতে বানানো বিরিয়ানি খাইয়েছিল। সারাদিন ওরা প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করত যে কদিন ছিল, একটা বন্ধুদের দল ও তৈরি হয়ে গেছিল। যেদিন ফিরে আসছিল, মেয়েটি ওদের বাস স্ট্যান্ডে ছাড়তেও এসেছিল; মন খারাপ ছিল কিছুদিন অর্কর বাড়ি ফিরে এসে। এই ঘটনা কেউ জানে না, অনেক দিন হয়েও গেছে- কিন্তু যবে থেকে এই মহিলা গল্পটি শুনেছেন, ব্যাস তবে থেকে সুযোগ পেলেই আওয়াজ দিয়ে চলেছেন!
যাই হোক, অর্ককে আওয়াজ দিয়ে যদি ওর মনটা ভাল হয়ে যায় তাহলে চাপ নেই। কিন্তু এদিকে সন্ধ্যে নামছে, আরও দেরি করলে এবার পাড়ার ঠেকটা মায়া হয়ে যাবে। কিন্তু মানভির এবং ওর সান্নিধ্য এই দুটোকে অবলীলায় উপেক্ষা করার মতন মানসিকতা ওর কোন‌ও দিনই ছিল না, আর হবেও না। তবুও বলে উঠল “তুই বাড়ি ফিরবি না? একটু পরেই কাকিমার ফোন আসা শুরু হবে কিন্তু, এখন প্রচুর ট্রাফিকও পাবি রাস্তায়।”
“অলরেডি মেসেজ চালু হয়ে গেছে, আমি বলেছি তোর সাথে আছি আর তুই আমাকে ড্রপ করে দিয়ে যাবি।” মানভি উত্তর দিল।
“আচ্ছা, আচ্ছা। কিন্তু, আমি তো আজ বাইকে ফিরব, আর এক্সট্রা হেলমেটও নেই আজ।”
“রিপোর্টারদের ট্রাফিক পুলিশ ধরে না, একবার বাইক থামিয়ে দেখুক না।”
মানভি কিছুটা হলেও নিজের ফর্মে ফিরছে। একদিন এরকম ঘটেছিল, ওরা একটা স্ক্যাম কভার করার জন্য বাইক নিয়ে একটা মারুতিকে চেজ করছিল আর ট্রাফিক সার্জেন্ট ওদেরকে আটকে দিয়েছিল; সেদিন ওরা কেউই হেলমেট পরেনি। মানভি নিজের আইকার্ড দেখিয়ে ওইখানেই নেমে পড়ে স্ক্যাম কভার করতে শুরু করে দিয়েছিল, সার্জেন্টকে বলল, “আপনি একটু গুছিয়ে নিন নিজেকে, আমরা অন লাইভ যাব এখন- আপনি যে রিপোর্টারদের হ্যারাস করছেন, সেটা সবাই দেখবে। আগেই জানিয়ে রাখলাম, পরে আবার বলবেন না যে কেন আপনাকে আগে থেকে জানাইনি।” এটা বলার পরে সার্জেন্ট ওদেরকে সাথে নিয়ে ফলো করেছিল, শেষে বলল, “ম্যাডাম, যদি স্ক্যাম প্রমান হয়, আমার নাম একটু মনে রাখবেন – সুদীপ তরফদার, এন্টালি জোন।”

—— তিন ——
“হ্যাঁ, লোকটার নামটাও মনে আছে।” অর্ক হেসে বলল। “কিন্তু হেলমেট তোর সেফটির জন্য বলেছিলাম আসলে।”
“ওই তো গরুর গাড়ির স্পিড, তার আবার সেফটি। মাথায় একটা স্কার্ফ আটকে নেব, নাহলে ধুলোয় চুল সাদা হয়ে যাবে।” মানভি হাওয়াতে উড়ে যাওয়া চুল ঠিক করতে করতে কথা বলছিল।
“তুই হেলমেটটা পরে নিস।” অর্ক মানভির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল। মানভির ওই এলমেল চুল, তার ফাঁক দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের বেলাশেষের আলো; চোখ ফেরাতে পারল না অর্ক। কিছুক্ষণের জন্য দুজনের দৃষ্টি এক হল। একজোড়া চোখে প্রবল মুগ্ধতা, অন্য জোড়াটি তার অঙ্গীকারে!
আগেও অর্ক একবার বলেছিল মানভিকে, “তুই যখন হাতের আঙ্গুল দিয়ে চুল ঠিক করিস, ব্যাপারটা বেশ ফটোজেনিক। একবার ফ্রেমিং করব ভাবছি।” সেই শুনে মানভি পাক্কা দুই মিনিট ধরে হেসেছিল, সেটাও বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। তারপর হাসি থামিয়ে বলেছিল, “বাজে বকিস না অর্ক! বাড় খেয়ে যদি তাল গাছে উঠে যাই, নামবার সময় মই খুঁজে পাব না।”
“হেলমেটটা তুই কবে কিনেছিস?”
“তা চার-পাঁচ বছর হয়ে গেল।” অর্ক বলল।
“ওই চার-পাঁচ বছরের জার্ম আমার মাথায় গেলে, এই চুল আর থাকবে? এমনিতেই রোজ চুল পড়েই যাচ্ছে। আমার মাথার চুল বোধহয় তোর সহ্য হয় না, না! আগেও লক্ষ্য করেছি আমি।” মানভি তেড়েফুঁড়ে বলে উঠল।
“জানি, একটা হেলমেট কিনতে হবে।” বলে প্রসঙ্গটা এখানেই শেষ করতে চেষ্টা করল অর্ক, খুব কম কনভার্সেশনই ওর ফেভারে যায়।
“এবারে হাফ হেলমেট কিনবি, পরতে সুবিধে হয়।” মানভি ঠোঙাটা নিচে নামিয়ে রেখে, একটা বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল।
“আচ্ছা!” অর্ক এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারল না। একটা মৃদু ঘ্রান ওর অনুভূতি হতে শুরু করল ধীরে ধীরে, যদিও আশেপাশে এমন কিছু নেই যেখান থেকে এটার উৎস হতে পারে। একটু পরে বুঝতে পারল অর্ক যে খুব অচেনা নয় এই ঘ্রান ওর কাছে- কিছুটা ছোটবেলার স্মৃতিতে মেশানো, একটু ভয়ের, খানিকটা ভাললাগার আর অনেকটা মানাভির চুলের এবং শরীরের।
“তুই কি কোনও গন্ধ পাচ্ছিস?” অর্কর মুখ থেকে বেরিয়ে এল কথাটা!
“জানি না রে, হবে হয় তো! বাড়ি চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে। মা চিন্তা করছে।”
অর্ক আর মানভি পাশাপাশি হাঁটছিল, ময়দানকে পেছনে ফেলে রেখে। এখন ওরা অনেকটা কাছাকাছি, মানভিকে লাল আকাশের ফ্রেমে অপরূপ মায়াবী লাগছে। অর্কর ময়দানটাকে একটা আস্ত মেঘের স্তর মনে হচ্ছে, ওরা দুজনে যেন মেঘের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
পড়ন্ত সূর্যকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ময়দানের প্রান্তরে, হারিয়ে গিয়েছে দিগন্তের শেষে আজকের মতো। ক্ষতি কী? সূর্য তো কালকে আবার উঠবে! কিছু পাওয়ার সাক্ষী তো আজ ময়দানও থাকল!
—— সমাপ্ত ——

Author: admin_plipi