মধুচন্দ্রিমা
লেখা – রুমি বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি – নিকোলাস
এটা ওদের দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমা। বিতান আর রুষা বিয়ের দশ বছর পর আবার খালি দুজনে মিলে বেরিয়ে এসেছে ওদের সাড়ে চার বছরের ছেলে তাতানকে প্রথমবার একা রেখে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ছোট্ট একটা রিসর্ট ‘বনপলাশী’। নামটা শুনেই রুষার বড্ড ভালো লেগে গিয়েছিল, নেটে জায়গাটার ছবি দেখে তো এক্কেবারে প্রেমে পড়ে গেল এর নির্জনতার। অবশ্য এই হুজুগের জন্য ওর ননদ নন্দাই দায়ী। সেই জোর করে খানিক ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের। বাগনানে ওদের একান্নবর্তী পরিবার। সবার হেঁশেল আলাদা কিন্তু তাও সবাই বেশ বেঁধে বেঁধেই থাকে। পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণের সিন্নি পিতলের একটা বড় পাত্র থেকে সবাই কাড়াকাড়ি করে খায়, বছরে একবার পুজোর সময় বিশাল দলবল নিয়ে বেড়াতে যায়। এটাই ওদের মুখার্জী বাড়ির রেওয়াজ। তাই শ্বশুর শাশুড়ির কাছে আর্জিপত্রটা নন্দাকেই দিতে হয়েছে আর তাদের টিপছাপেই মঞ্জুর হয়েছে ওদের দুদিনের জন্য শঙ্খচিল হওয়ার ছুটি।
বিতানের অবশ্য নোনাজলের সমুদ্রই বেশি ভালো লাগে। তবে ‘বনপলাশী’ পাহাড় আর জঙ্গলকে সেলাই করে যে আঁকাবাঁকা পথ বানিয়েছে তার খাঁজে খাঁজে মুড়তে মুড়তে গাড়িটা যখন ওদের কটেজের সামনে এসে দাঁড়াল তখন বিতানের চোখেও এমন চমক যেন ব্যস্ত হ্যারিসন রোডের সামনে এক পাল হরিণ দেখেছে! কটেজের ঠিক মাথায় একটা বিশাল চাঁদ, কে যেন গ্যাস বেলুনের মত বেঁধে দিয়েছে, আর জল ফড়িং এর ডানার মতো স্বচ্ছ পাতলা আলো চারিদিক ভেসে যাচ্ছে। কটেজের ডানদিকে ছিল একটা তণ্বী ফুলে ভরা পলাশ গাছ আর বাদিকে মস্ত আফ্রিকান টিউলিপ। এখানে লোকেরা বলে ‘আকাশমনি’। রিসর্টের ভেতরটাও ততটাই পরিপাটি। চকচকে পালিশ করা উডেন ফিনিশ মেঝে, ঝকঝকে ছিমছাম আসবাবে সাজানো। সবকিছু এতটাই নিখুঁত যে রুষা তার কপালের টিপটা খুলে ড্রেসিংটেবিলের আয়নাতে লাগিয়ে রাখবে সেটাও পারল না।
-“পৌঁছে একবারই ফোন করবি, তার বেশি না। তোর শ্বশুর প্রেসারের ওষুধ ভুলে গেল কিনা, তোর শাশুড়ি মশারির চারটে খুঁট ঠিকমতো টাঙ্গাতে পারল কিনা, কাজের মাসি বিকেলটা ডুব দিল কিনা, তোর ছেলে মাংসের বদলে মাছ দিয়ে ভাত খাবে না বলে বায়না ধরল কিনা… থেকে থেকে এসবের একদম খোঁজ নিবি না। সংসারী চিন্তাগুলো তোর ঘরের আলমারিতে তালা চাবি দিয়ে রেখে তবে যাবি। মনে রাখবি এটা তোদের মধুচন্দ্রিমা।” নন্দাই এমনটাই বলে দিয়েছে।
ঘরে ঢুকেই বিতান অভ্যাস মত টিভিটা চালিয়ে দিয়ে বরফের মত সাদা টানটান বিছানায় নির্বিবাদে এলিয়ে পড়ল। দুদিনের ছুটি নেবে বলে গতকাল একটু বেশি রাত পর্যন্ত জেগে কাজ করেছে সে। বাগনানে নিয়মমাফিক করা ফোনটা রেখেই রুষা বলল, “কিগো গা ধোবে না? শুয়ে পড়লে ওভাবে!” অনেকদিন পর তাতান নেই ওদের মাঝে; কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছিল ওদের দুজনেরই। তাতানকে টপকে আজকাল তেমন আর কথা জোগাড় করতে পারে না ওরা। বিতান একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, “তুমি আগে ফ্রেশ হও, আমি খাবারটা অর্ডার করি।”
রুষার ছোট বোন তুলি ফ্লোরিডাতে থাকে। গতবছর ওখান থেকে বডিওয়াশ নিয়ে এসেছিল। তাতে নাকি আছে দুর্লভ কিসব ভেষজ ফুলের নির্যাস। প্রাণে ধরে কখনো ব্যবহার করতে পারেনি বাহারি বোতলে রাখা ওই মায়াবী তরলটা। আজ খুব আড়ালে সেইটা বার করল, সাথে কলকাতার নিউমার্কেট থেকে বড় স্বাদ করে কেনা আর একবারও পরতে না পারা একটা ঘন নীল রঙের স্যাটিনের রাত পোশাক। গুন গুন করে দুকলি গান গাইতে গাইতে বাথরুমে ঢুকল। আহা শাওয়ার তো নয় যেন ঝর্ণা! সেই জলে মেলে ধরল একখানি অবয়ব, আরেকটি মন। প্রথমে ধুয়ে ফেলল পথের রোদ, ধুলোবালি তারপর সযত্নে তুলে ফেলল গোমড়ামুখো কেজো বরের জন্য জমিয়ে রাখা অভিমান, আর না বলা কথাদের ভিড়। একটা রাতচরা পাখি কি অদ্ভুত একটানা সুরে ডাকছিল। রুষার মনে হলো আজ অনেক মেঘ উড়ে আসুক, তারা নিয়ে আসুক তুমুল বৃষ্টি। সোঁদা গন্ধে ভরে উঠুক ওর আর বিতানের ব্যক্তিগত বাসর ঘর। ধবধবে টাওয়েল এ কোঁকড়া চুলের গোছা জড়িয়ে যে বেরিয়ে এলো সে অন্য রুষা। তার আসল ঠিকানা ‘বনপলাশী’ আর আসল নাম বনকুসুম।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচুস্বরে কথা বলছিল বিতান। ফোন তো নয় যেন সতীন। ইদানিং একটু বেশি ব্যস্ত হচ্ছে সে। একটা গার্মেন্ট কোম্পানিতে সেলস্ ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদে চাকরি করে বিতান। দিনরাত অফিসের ফোন এসেই চলে। কিন্তু আজ রুষা রাগ করল না। বরং পা টিপে টিপে পিছনে গিয়ে দাঁড়াল তারপর হরিণীর ক্ষিপ্রতায় কান থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে সুইচ অফ করে দিল। বিতান বলল, “কি ছেলেমানুষি করছ? দরকারী ফোন ছিল হেড অফিস থেকে, শিগগিরই দাও।”
-“দেব না.. কিছুতেইই দেব না। আজ তোমার এই ফোনটা আমি ভেঙেই ফেলব।” উতরোল তোলা গলায় বলল রুষা। বিতান আর রুষা বহুকাল ঝগড়া করে নি। লক্ষ্মী বউটার এমন রূপ দেখে বিতানও অবাক হল। তবে অবাক হওয়ার মুহূর্তরা জাঁকিয়ে বসার আগেই বেরসিক রুমসার্ভিসের ছেলেটা ডিনার নিয়ে হাজির। বেশি কিছু না নরম নরম রুমালি রুটি, মাখামাখা শাহী চিকেন, স্যালাড আর শেষ পাতে একটু ক্যারামেল পুডিং। অন্য দিন প্রায় যুদ্ধ করে ছেলেকে খাইয়ে পাতকুড়ানি খেয়েই অর্ধেক পেট ভরে যায় রুষার। তাই আজকে নিজেকে বেশ মহারানী মনে হল ওর। বিতানের খুব খিদে পেয়েছিল, তাই হাউমাউ করে খেয়েই বাথরুমে ঢুকলো। রুষার নিজের ক্যারামেল পুডিং এর এক টুকরো মুখে দিতেই মনে পড়ে গেল বিতান মিষ্টি খেতে কত ভালোবাসে!
কলেজে ওর থেকে দু’বছরের সিনিয়র ছিল বিতান। নিজের টিউশনি করা টাকা জমিয়ে রুষার জন্মদিনে যে ছোটখাট উপহারগুলো দিত তার মধ্যে রঙিন কাগজে মোড়া একটা ক্যাডবেরি অবশ্যই থাকত। ওদের ক্যান্টিনে একটা ভাঙ্গা বেঞ্চ ছিল। সেখানে বসে খসখসে কাগজের ভিতর থেকে টলটলে প্রেমের এক টুকরো খাওয়াত রুষাকে আর দু’টুকরো চালান করত নিজের মুখেই। রুষা কপট রাগ দেখাত বটে তবে মনে মনে হাসত বিতানের ছেলেমানুষিতে। ওই ছেলেমানুষিগুলো হারিয়ে গেছে, তবে আজ ও সেসব টেনে বার করে আনবে পরতের পর পরত সরিয়ে। তাই ক্যারামেল পুডিংটা অমৃতের মত খেতে হলেও রুষা সরিয়ে রাখল বিতানের জন্য। একদিন যেমন সরিয়ে রেখেছিল নিজের ভাগের বুক ভাঙ্গা কান্না শুধুমাত্র তার বিতানকে সামলানোর জন্য।
বিয়ের চার বছর পরেও ওদের কোনো বাচ্চা হচ্ছিল না। তখন ওরা একসাথে একটা লড়াই করেছিল। দুজনেরই কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। অনেক ওষুধ, ইনজেকশন, উৎকণ্ঠার বিপদসংকুল জঙ্গলে হাত ধরাধরি করে বেরিয়েছে একটা বছর। ব্যয়বহুল চিকিৎসার পর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে প্রথমবার মা হচ্ছিল সে। তখন ওর আড়াই মাস চলছিল। হঠাৎ সর্বনাশী এক মাঝরাত রক্তের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ছোট্ট প্রাণটা। সেদিন ওই অসহায় রাতে নিজের গর্ভের ভাঁজে একটি অসম্পূর্ণ সন্তানের মৃত্যুশোকের থেকে ওর পায়ের কাছে গুটিয়ে বসে থাকা তিরিশ বছরের ছেলের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না তাকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল। যেমন করে বন্যার জল হু হু করে ঢুকে পড়ে জীবনের উপত্যকাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, সেই ভাবে তছনছ হয়ে গিয়েছিল রুষার ভেতরটা। তারপর সব ভুলিয়ে তাতান এল। আর তাতান আসার সাথেই বিতানের মধ্যে এল এক বিশাল পরিবর্তন। সে হলো বাবা, আর শুধুই এক কর্তব্যপরায়ন বাবা! তার জীবনের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু তাতান আর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান সেই তাতানের জন্যে এক নিটোল ভবিষ্যত গড়ে দেওয়ার স্বপ্ন। এই স্বপ্নের পিছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একে একে সাফল্যের ছোট ছোট দ্বীপ দখল করেছে সে। তবে ওই দ্বীপের মাঝখানের জলে হাবুডুবু খেয়েছে ওর আর রুষার গা ঘেষাঘেষি করা দাম্পত্যের সহজ সমীকরণটা।
ইদানিং ‘অনন্যা’ বলে কারও ফোন এলেই বিতান খুব তাড়াহুড়ো করে ফোনটা ধরে, এবং ফোন নিয়ে দূরত্বে যায়। তবে বিতানের চোখের দিকে তাকিয়ে কখনো কোন অশনিসংকেত লক্ষ্য করেনি রুষা। তাই এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। এমনিতেও ওর কাজের জগতে রুষা অনুপ্রবেশ করে না তবে আজ ফোনটা কিছুতেই সে অন করবে না। বিতান বাথরুম থেকে বেরোনোর আগে রুশা হালকা করে চোখে দেয় ঘন কাজলের টান, ঠোঁটে মেখে নেয় মিষ্টি গোলাপি রং, গলায় পরে বিয়ের প্রথম বছর বিতানের দেওয়া হৃদপিন্ডের আকৃতির একটা সোনার পেন্ডেন্ট, ওর মাঝখানে একটি রুবি ঠিক যেন জমানো একফোঁটা রক্তবিন্দু। ঘরের আলো এমনিতেই মৃদু, চাঁদের আলোটা আতিশয্যের মত ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিজে চুলে থেকে টাওয়েলটা খুলে বাইরে মেলে দিতে গিয়ে ওর চোখ আটকে গেল উল্টো দিকের কটেজের বারান্দায়। দুটো ছেলেমেয়ে হাতে হাত দিয়ে ঘন হয়ে আসছিল দুজন দুজনের কাছে। ছেলেটার হাতে সিগারেট; মেয়েটা ওর হাত থেকে মাঝে মাঝে সিগারেটটা নিয়ে ধোঁয়ার রিং ছুঁড়ছিল পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার মুখে। তারপর খিলখিল করে হেসে এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছিল। এরমধ্যে মেঘ মেঘ গলায় ছেলেটা গান ধরল আর মেয়েটার মনে মাদল বেজে উঠল। কোমর দুলিয়ে,শরীর হেলিয়ে, দুজন মিলে যেন চেটে পুটে খেল নেশাধরানো রাত আর জ্যোৎস্নার সবটুকু। হাঁ করে দেখতে দেখতে রুষার মনে হল এরা বোধহয় তাদের মত স্বামী স্ত্রী নয়। সংসারের ডালে বাসা বাঁধা পাখিদের এমন মোচ্ছব থাকে না!
-“ভেতরে এসো.. কি একটা পরেছ, তাই পরে আবার বাইরে দাঁড়িয়ে আছ!” টান খেল রুষার চাঁদিয়াল ঘুড়িটা বিতানের ধমকের ঠেলায়। তবে দমল না, ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল বিতানের তারপর সোহাগ শিকলের মত নিজের হাতগুলো ওর ঘাড়ের উপর তুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেমন দেখাচ্ছে আমায়?” শুধু চোখ অনাবৃত মন দেখতে পায় না। দেখতে পারলে বিতান দেখত রুষার সেই মরিয়া ডুব সাঁতার যা দিয়ে ও পার হতে চায় ওদের মাঝখানের জলটুকু; পৌঁছাতে চায় বিতান নামক দ্বীপে। বিতান উত্তরে বলল, “এক প্লেট ক্যারামেল পুডিং এর দাম সাড়ে তিনশ টাকা। নষ্ট করেছো কেন?” এবার রুষার গলায় সত্যিই কান্নারা দলা পাকাল। ছেলেমেয়েগুলোর বানভাসানী প্রেম দেখে ঈর্ষায়, বিতানের তার অভিনব নীল পোশাক আর আনুষঙ্গিক সাজসজ্জায় প্রতি উদাসীনতায়, এবং সর্বোপরি ক্যারামেল পুডিং এর ভিতরে রেখে দেওয়া ভালোবাসা বুঝতে না পারার অক্ষমতায় রুষার মন জুড়ে নিম্নচাপের প্রবল ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হল। ছিটকে গেল সে।
-“জঘন্য খেতে, তাই পারিনি পুরোটা শেষ করতে। ফোন নেবে না? দাঁড়াও এনে দিচ্ছি।” নিজের হ্যান্ড ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছিল বিতানের ফোনটা; নিজেই সেটা অন করতে গিয়ে দেখল নীল কাঁচটাতে ভেসে উঠেছে অনন্যার চোদ্দটা মিসড কল! সংসারের গোপন দেওয়া-নেওয়ার খেলায় কে যে কখন মেতে ওঠে কে জানে। মাথা তার আগেই গরম ছিল কিন্তু এবার যেন বুকের মধ্যে কি সব বেঁকেচুড়ে গেল, বর্শা বল্লম দিয়ে খাঁমচে খুবলে দিল কেউ নরম মাটি। মুহুর্তের মধ্যে পেরিয়ে গেল মাঝের দশটা বছর, পেরিয়ে গেল তাদের বাগনানের বনেদি বাড়ি, পেরিয়ে গেল তাতানকে। ওর মনে পড়ে গেল ওর এক বান্ধবী সৌমিকে। বিতান ফিজিক্স নোট এর সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট দিয়েছিল ওকে। “আমার পরাণ যাহা চাই তুমি তাই” ..সেদিন যেন ওর গায়ে এক বালতি লাল কাঁকড়া ছেড়ে দিয়েছিল কেউ আর প্রথমবার বুঝেছিল যে বিতানদাকে ও ভালোবাসে। তবে আজ কাঁকড়ার বদলে যেন শরীরে এসেছে শঙ্খচূড়ের বিষ। বিতান কিছু বোঝার আগেই পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর বুকে, বড় বড় নখের আঁচড়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল হতবাক তরুণকে।
-“অনন্যা কে? কার সাথে প্রেম করছিস তুই বিতানদা?” বিতান হো হো করে হেসে চিচিং ফাঁকের গুহা যেভাবে আলিবাবাকে ঢুকিয়ে নিত সেই ভাবে বুকে গুঁজে নিল ওর পুরনো বউকে। আদর মাখা গলায় বলল, “পাগলী! ওটা অনন্যা নয়, অনন্য। ইংরেজিতে দুটো বানানই এক। অনন্য উপাধ্যায় আমাদের এইচ.আর এর হেড। আমার ট্রান্সফারের অর্ডার এসেছিল এক মাস আগে। এক বছরের জন্য দুবাই পাঠিয়ে দিচ্ছিল তোর বরকে ওরা। ওকে ধরেই কোনমতে আটকালাম ব্যাপারটা, এখনো যে থাকতে পারিনা একদিনও তোকে না দেখে; এক বছর কি করে কাটাব? আসার সময় দেখলাম আমাদের কটেজের পাশে একটা বেঞ্চ আছে কিন্তু ভাঙ্গা না। কাল একটা ক্যাডবেরি কিনে ওখানে বসে খাওয়াব তোকে কেমন?”
অনেকদিন পর বিতান আর রুষা তুই-তোকারি করল। রুষা কিছুতেই মুখ তুলল না, বিতানের বুকের অরণ্য ভিজতে লাগল রুষার চোখের জলে। দুটো কপোত-কপোতীর ডানার ঝটপটানিতে ঝরে পড়ল প্রেম। আটপৌরে ভালোবাসার রাত গাঢ় হল মধুর মত, জেগে রইল হাজার নক্ষত্র আর একলা চাঁদ।