
ঝিমলির শখ
কলমে – সুদেষ্ণা মণ্ডল
ছবি – অনিন্দিতা রায় কর্মকার
মানুষের জীবনে কত রকমের না শখ হয়৷ সেইরকম ঝিনুকেরও একটা শখ ছিল৷ নৃত্যশিল্পী হওয়ার শখ৷ অনেক বড় নৃত্যশিল্পী হবে ও ৷ দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসবে শুধু ওর নাচ দেখার জন্য৷ অভাবের সংসারে মেয়ের এই শখ পূরণ করতে পারেননি ওর বাবা-মা৷ তাও পাড়ার ক্লাবের দৌলতে একটু-আধটু নাচ শিখেছিল৷ পাড়ার ছোটখাট অনুষ্ঠানে আর সবার সাথে ঝিনুকও নাচে অংশগ্রহণ করত৷ কিন্তু এই শখ যে ওর জীবনটাকে অন্য খাতে বয়ে নিয়ে যাবে সেটা ওর জানা ছিল না৷
এরকমই পাড়ার একটা অনুষ্ঠানে ওর সাথে আলাপ হয় রমেশের৷ দেখতে সুন্দর হওয়ায় প্রথম দেখাতেই ঝিনুককে ভাল লাগে রমেশের৷ রমেশও দেখতে যথেষ্ট ভালই৷ তাই অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ওদের এই ভালো লাগা ভালবাসায় পরিণত হয়৷ ওর শখ পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয় রমেশ৷
সেদিনের কিশোরী ঝিনুক যদি উঠতি বয়সের ভাললাগাকে ভালবাসা ভেবে ভুল না করত, তাহলে হয়তো ওর জীবনের রেখাচিত্রটা অন্য রকম হত৷ যাকে ভালবেসে দেবতার আসনে বসিয়ে ছিল, সে যে আসলে মানুষরূপী শয়তান সেটা ও বুঝতে পারেনি৷ যখন বুঝেছিল, তখন আর করার কিছুই ছিল না৷ যে রমেশকে ভালবেসে নিজের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে বাড়ি-ঘর, আত্মীয়স্বজন সব ছেড়েছিল, সে যে শুধু ওর শরীরটাকেই ভালবেসে ছিল, ওকে নয়, সেটা ও বুঝতেই পারে নি৷ ও কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি যে রমেশের চাহিদা মিটে গেলে ও তাকে এই নরকের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়ে যাবে, ওর জায়গা হবে এই বেশ্যাপাড়ায়৷ আর ও হয়ে উঠবে আজকের ঝিমলি৷ যে এক নজরেই সমস্ত পুরুষের মনে ঝড় তুলে দিতে পারে৷ ওর শখ অবশ্য পূরণ করেছে রমেশ৷ এখন ও প্রতিদিনই নাচে, ওর নাচ দেখতে লোকও আসে৷ শুধু একটাই তফাত৷ ও হতে চেয়েছিল নৃত্যশিল্পী ঝিনুক আর হয়ে গেছে এই কোঠাবাড়ির ঝিমলি৷
ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে এতক্ষণ ধরে এসবই ভাবছিল, হঠাৎ চম্পার ডাকে ওর হুঁশ ফেরে৷ চম্পা এসে বলে নীচে এক ভিখারী এসেছে, সে অনেকক্ষণ ধরে ঝিনুক নামে কাউকে খুঁজছে৷ ওকে অনেকবার বলা হয়েছে এই নামে এখানে কেউ থাকে না, কিন্তু সে শুনছে না৷ এই নামটা শুনে প্রথমে ঝিমলি অবাক হলেও সেটা মুখে প্রকাশ না করেই বলে, “ওই ভিখারীকে বল ঝিনুক অনেকদিন আগেই মারা গেছে, এখানে শুধু ঝিমলি আছে, ঝিমলি৷” চম্পা কিছু বুঝতে না পেরে চলে যায়, কিন্তু ঝিমলির চোখের কোণটা না চাইতেই ভিজে যায়৷ কিছুক্ষণ পরে চম্পা এসে বলে ওই ভিখারীটা নাকি ঝিমলিকে একবার দেখতে চায়৷ কাজের সময় এসব অদ্ভুত আবদার শুনে ঝিমলির মাথা রাগে গরম হয়ে যায়, তাও নীচে গিয়ে দেখে কে সেই ভিখারী যে ওকে দেখতে চায়৷
গিয়ে যাকে দেখল তাকে যে এতবছর পরে দেখবে তাও আবার এই বেশে সেটা ও ভাবেনি৷ যে শয়তানটা ওর জীবনটা এইভাবে তছনছ করে দিল তাকে আজ এই অবস্থায় দেখে ওর তো আনন্দ হওয়ার কথা, কিন্তু ওর কেন যে কষ্ট হচ্ছে কে জানে৷ তাহলে কি আজও ও রমেশকে ভালবাসে সেই প্রথমদিনের মতই৷ ও এসব কি ভাবছে… নিজের মনেই বলে ওঠে৷ এই শয়তানটা ভালবাসার কিছু বোঝে নাকি, এ তো শুধু নারী শরীরটাকেই বোঝে৷ যতটা সম্ভব মুখটা কঠিন করেই জিজ্ঞেস করে, “কি চাই আপনার?” রমেশ এরকম একটা ব্যবহার আশা করেনি৷ ও ভেবেছিল ঝিমলি ওকে চিনতে পারবে৷ তাই প্রথমে হকচকিয়ে গেছিল৷ কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে, “আমাকে চিনতে পারছ না?” ঝিমলি ততটাই রেগে গিয়ে বলে, “কি চাই বলবেন তো? কাজের সময় এসব ফালতু কথা ভাল লাগে না৷ আমার তাড়া আছে, তাড়াতাড়ি বলুন তো কি চান?” রমেশ এবার ব্যঙ্গের সুরে বলে ওঠে, “কি এমন কাজ কর যে একটু দেরী হলে গোটা পৃথিবী উল্টে যাবে?” ঝিমলি মনে মনে ভাবে রমেশ হচ্ছে ‘ভাঙব তবু মচকাব না’, এমন ধরনের মানুষ৷ পকেটে ফুটো কড়ি নেই তাও তেজ কমেনি এক আনাও৷ ঝিমলি আবার জিজ্ঞেস করে, “কি চাই?” এবার রমেশ নরমভাবেই বলে, “একটু জল দেবেন? খাব, আর তার সাথে যদি কিছু খাবার দেন তো ভাল হয়৷ আসলে দুদিন ধরে কিছু খাইনি তো৷” এতক্ষনে ঝিমলি বুঝতে পারে ওর এখানে আসার আসল কারনটা৷ ওকে বসতে বলে ঝিমলি ভেতরে যায় ওর জন্য খাবার আনতে৷ ঝিমলি মনে মনে ভাবে ভাগ্যের কি পরিহাস!
কিছুক্ষণ পরে ঝিমলি খাবার নিয়ে আসে৷ খেয়ে দেয়ে রমেশ চলে যায় আর যেতে যেতে বলে যায়, “আবার আসিব ফিরে, তোমার এই কোঠাবাড়ির দোরে৷” ঝিমলি মনে মনে শুধু হাসে৷ রাস্তায় যেতে যেতে রমেশের মাথাটা সামান্য ঘুরে যায়, চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা লাগে৷ হঠাৎ কি হল কে জানে, এতক্ষণ তো সবকিছু ঠিকই ছিল- নিজের মনেই বলে ওঠে রমেশ৷ টলতে টলতে এলোমেলোভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে সামনে থেকে আসা লরিটা কখন যে ওর একদম সামনে এসে গেছে সেটা ও খেয়ালই করেনি৷ এক সেকেন্ডের মধ্যে সব শেষ৷ রাস্তায় রক্তাক্ত শরীরে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রমেশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷
পরের দিন চম্পা এসে ঝিমলিকে বলে, “কালকের ওই ভিখারীটাকে কাল রাতে লরিতে ধাক্কা মেরেছে, মুখ দিয়ে নাকি গেঁজাও বেরিয়েছে, বডিটা এখনও রাস্তায় পড়ে আছে৷ পুলিশ এখনও বডিটা নিয়ে যায়নি৷ রাস্তার কুকুরগুলোও ধারে ঘেঁষছে না৷” ঝিমলি মনে মনে ভাবে, ওর মত শয়তানকে কুকুর কেন চিল শকুনেও ছুঁয়ে দেখবে না৷ এরপর তাকের ওপর রাখা বিষের খালি শিশিটা জানলা দিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়৷ আজ ও ভীষণ খুশি৷ যে ওর জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছিল, তাকে মৃত্যুর কোলে পাঠিয়ে ও যে তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছে৷ এবার ও শান্তিতে মরতে পারবে৷
Baah, প্রচ্ছদ এবং গল্প সমান সুন্দর
ধন্যবাদ
274821 922029Thanks for all your efforts that you have put in this. quite fascinating info . 438023
451262 746661An intriguing discussion will be worth comment. Im sure which you need to write a lot more about this topic, it may not be a taboo subject but typically consumers are too few to chat on such topics. To another. Cheers 94142
747930 707637bathroom towels really should be maintained with a great fabric conditioner so that they will last longer:: 108970
801171 298025Cheapest speeches and toasts, as well as toasts. probably are developed building your own at the party and will likely be most likely to turn into witty, humorous so new even. greatest man toast 881894
Like!! I blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.
745268 115641I recognize there is undoubtedly an excellent deal of spam on this blog. Do you want help cleansing them up? I might aid in between classes! 422064