বিদ্যাং দেহি নমস্তুতে

 

 

 

কোন ‘স’ এর নীচে ‘ব’ বলতে পারাটাই প্রথম ধাপ,

ভাবি বসে আজও, চাঁদা পাওয়াটা ছিল কি দারুন চাপ!

এরপরেও ধেয়ে আসত আরও কত প্রশ্ন বাণ,

প্রস্তুত থাকতাম সবাই রাখতে নিজ সম্মান।

 

হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা সংঘ কিংবা দল,

বিবেক, রবি, নেতাজী নামেতেই ছিল বেশী চল,

আগে থেকে ছাপানো চাঁদার রসিদের পাতা,

তুলতে জুটে যেত বেশ কয়েকটি মাথা।

 

পঞ্চাশ পয়সা থেকে বড়জোর পাঁচ টাকা,

জমলেও মনে হ’ত থলেটা যে ফাঁকা,

পড়াশোনা হচ্ছে কতটুকু বাড়িতে,

কানটা হ’ত ঝালাপালা একই কথা শুনতে।

 

এরপরে হ’ত সেই বাজেট অধিবেশন,

লোকসভার থেকেও ছিল কড়া সেই সেশন,

কোন খাতে কত টাকা করা যাবে খরচা,

ঘাটতি মেটাতে কার দিতে হবে কত গচ্চা?

 

পুজোর আগের রাতে ঠাকুর হ’ত কেনা,

কলহ করা ছিল এক্কেবারে মানা,

সবাই চাইত ঠাকুর আরও হোক বড়,

(বাজেটে কুলোতো না) বুঝেছি তখন থেকেই টাকার জন্য তোমরা এত কেন লড়ো।

 

কি সাজে সাজানো হবে পুজোর মণ্ডপ,

মতামতে অনিবার্য লাগত তান্ডব,

পারিশ্রমিকে থাকত বাতাসা মুড়ি ও জল,

মনে হ’ত গড়ছি মোরা একটা তাজমহল।

 

সবশেষে আসত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ,

দর্শনার্থী আসবে মোট কতজন?

কতক্ষণে মিলবে সেই পুরুতমশাই,

বাগে তাকে পাবার তরে হচ্ছে কত লড়াই।

 

জিভে রস এলে পরেও খাওয়া় যায়নি যাকে,

অঞ্জলিটা মিটলে পরেই খেতে পাবো তাকে।

কুলের মতন তার জন্যেও প্রতীক্ষাতে মন,

হলুদ শাড়ী পড়ে আসতে বাকী আরো কতক্ষণ।

 

ফুল ভলিউমে বাজিয়ে বিবিধ ভারতীর অনুষ্ঠান,

ভাবখানা এমন যেন মাইকেতে বাজছে কত গান,

দুপুরে কে যে কখন বসে পড়ত সটান,

মা কাকিমাদের খিচুড়িতে তখন যেত পড়ে টান।

 

কে যে করেছিল এ প্রথার প্রচলন,

এ পুজোতে পড়াশোনা করাটা যে বারণ,

মন চাইত পুজোটা হোক সারা বছর জুড়ে,

আনন্দেতে মনটা থাকত কত না ফুরফুরে।

 

****

 

ছোট বেলায় বোধকরি সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছে সবাই। অন্তত আমাদের সময়কালে। চাঁদা তোলা থেকে বিসর্জন পর্যন্ত পুরোটাই ছিল ভীষণ আনন্দের। এই আয়োজন থেকেই কিন্তু অনেকের সংগঠক হওয়া শুরু। প্রতিকূল পরিস্থিতি কে অনুকূলে আনার কৌশলের হাতেখড়িও কিন্তু এই আয়োজনের হাত ধরে, আমারও তাই। মনে আছে ক্লাস ফোরে কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের ভাড়া বাড়ির সামনে (সাউথ এন্ড গার্ডেন, গড়িয়া) গলিতে শুরু করেছিলাম সরস্বতী পুজো। সেটাই সম্ভবত প্রথম ও শেষ। আজও স্মৃতিতে গেঁথে আছে চাঁদা তোলা থেকে ঠাকুর আনার সব ঘটনা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো হয়ে আসছে বহু দিন। কোনো  ব্রাহ্মণ নয়, নিজেরাই পুজো করি। বৌদ্ধ শাস্ত্রে সরস্বতী পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। আমার মনে আছে ব্রহ্মদেশের রেঙ্গুন শহরে অবস্থিত পৃথিবী বিখ্যাত সোয়েডাগন প্যাগোডার প্রাঙ্গণে সরস্বতীর মূর্তি দেখেছি, একটু অন্য রূপে।

 

আজকালকার ছেলে মেয়েরা এই পুজো সংগঠিত করার উত্তেজনা থেকে বঞ্চিত। যদিও আজকাল সরস্বতী পুজোর রূপ বদলেছে। সরস্বতী পুজো মানে এখন বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে। আমাদের সময়েও ছিল, হয়ত ভ্যালেন্টাইন নাম নিয়ে নয়। তবে বহু জনের জীবন সাথীর প্রাপ্তিযোগ হয়েছিল কিন্তু এই শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে, বিশেষ করে অঞ্জলি দেবার শুভ ক্ষণে। লেখার শেষ করাটা খুব কঠিন সরস্বতী পুজোকে নিয়ে লিখলে। একটাই প্রার্থনা মা, সবাই কে ডিগ্রীতে নয় সত্যিকারের বিদ্যা দান করো যাতে সবাই মিলে ভালো থাকা যায় ভালো মানুষ হয়ে।

 

 

কলমে – ডঃ ধীরেশ

ছবি – অনন্যা

Author: admin_plipi