অচিনপুর

অচিনপুর ।। লেখা : শ্রেয়া বাগচী

মায়ের ফোন হারিয়ে গিয়ে জুঁইয়ের মন খারাপ। তার এখন দাদু-ঠাম্মি, লাটুদাদু আর সবুজ বাড়ির কথা মনে পড়ছে। দুর্গাপুজোয় একবারই ঠাম্মির বানানো মুড়ির মোয়া, কুলের আচার আর ছাদে দেওয়া বড়ির স্বাদ পায় জুঁই। জুঁই তখন সবুজ বাড়ির দীঘিতে পদ্ম পাতার উপর শিশিরের ফোঁটা গুনে নিয়ে শিউলি কুড়োতে যায়। পুজোর দিনগুলোতে মা লাল শাড়ি, লাল টিপ আর বড় দুল পরে একদম ঠাকুরের মতো সাজে। কিন্তু এখানে এলেই মা সাদা কালো পোশাক পরে অফিসে চলে যায়। আর পাপা তো ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ঢাক বাজায়। জুঁইয়ের তখন মনেই হয় না এই পাপাই জুঁইকে আদর না করেই ঘুমিয়ে পড়ে। ছুটির দিনগুলোয় পার্টি থেকে আসলে জুঁইয়ের দাদুর কথা মনে পড়ে। দাদু সন্ধে হলেই টেনিদা, ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কুর গল্প বলে। ঠাম্মিও মুড়ি-চানাচুরের বাটি হাতে দিয়ে সাত ভাই চম্পা, বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর গল্প শোনায়। জুঁইয়ের মনে পড়ে সেই একবার মায়ের সাথে গেল সবুজবাড়ি আর ঝড়ের বিকেল বেলায় লাটুদাদুর সাথে আম কুড়োতে গিয়ে হাঁফিয়ে পড়েছিল ও। জুঁই যখন স্কুপে আইসক্রিম খায় তখন সবুজবাড়ির সামনে দিয়ে হেঁকে যাওয়া কাঠি আইসক্রিম আর লাল-হলুদ-কালো পেপসির কথা মনে পড়ে। ভোর হলেই তো ঠাম্মির সাথে ফুল তুলতে চলে যায় বাগানে। টগর, কল্কে, দোপাটি, অপরাজিতা, জবা কত যে ফুল, সাজি উপচে পড়ে যায় জুঁইয়ের। লাটুদাদু ওকে নিয়ে বিকেলবেলা বাগানে গিয়ে পাখি চেনায়। দোয়েল, টিয়া, ফিঙে, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা খঞ্জনা, সব চেনে জুঁই। তাইতো ফ্লাওয়ার আইডেন্টিফিকেশন আর বার্ড আইডেন্টিফিকেশনের ক্লাসে জুঁই রোজ গুড পায়। এখানে ফ্ল্যাটের সামনে জায়গা নেই বলে মা একটা ক্যাকটাস লাগিয়ে রেখেছে শুধু। ওখানে মাঝেমাঝে চড়াই আর শালিক আসে। কিন্তু দাদু বলেছিল ফোনে কথা বললে ওরা চলে যাবে আর আসবে না। পুজোর দিন গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়ে জুঁই। সকালে মায়ের ধাক্কায় উঠে জানতে পারে জুঁই আজ থেকে নাকি আর স্কুলে গিয়ে স্কুল নেই। সব ফোনে স্কুল। মা পাপারও ঘর থেকে কাজ কাল থেকে। তাই আজ ওরা চলে যাচ্ছে সবুজবাড়ি। কবে ফিরবে জানা নেই। জুঁইয়ের স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে সব কিছু। ছুট্টে গিয়ে ক্যাকটাসের টবটা নিয়ে আসে জুঁই। পাপা গাড়ি স্টার্ট দেয়। জুঁই চলেছে অচিনপুরের উদ্দেশে।

Author: admin_plipi