আলোর বিচ্ছুরণ

আলোর বিচ্ছুরণ।। লেখা : অমিত কুমার জানা

দুপুর থেকে মেঘ কালো হয়ে প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো। অষ্টম শ্রেণীর সায়ন প্রতিদিন বিকেলে তাদের গ্ৰামের মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। আজ তার ছোট্ট ভাই সানু বায়না ধরলো সেও মাঠে যাবে। সায়ন সানুকে বললো যে ও খুব ছোট্ট, ওকে বন্ধুরা খেলতে নেবে না। তবুও সানু বললো যে খেলা দেখতে যাবে। সায়ন তার মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে নিল। বিকেল চারটের দিকে বৃষ্টিও থেমে গেলো। ওরা মাঠে পৌঁছে দেখলো তখনো কেউ উপস্থিত হয়নি। সায়ন ফুটবলে লাথি মারা শুরু করলো এবং সানু বল কুড়িয়ে আনতে থাকলো। হঠাৎ সায়ন লক্ষ্য করলো সানুর পকেট থেকে ত্রিকোণাকার কাঁচের জিনিস পড়ে গেল। সে সানুকে জিজ্ঞেস করলো যে ওটা কি। সানু বললো যে সে ওটা বাড়ির পুরানো জিনিসগুলোর মধ্য থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে, সে ওটা নিয়ে খেলা করে।সায়ন দৌড়ে গিয়ে ঐ জিনিসটা উঠিয়ে নিয়ে দেখলো। ওটা একটা ত্রিমাত্রিক কাঁচের প্রিজম। তার মনে পড়লো জড় বিজ্ঞানের স্যার ক্লাসে প্রিজম সম্বন্ধে পড়িয়েছিলেন। প্রিজমের সাহায্যে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো যায়। সে লক্ষ্য করলো মাঠের পশ্চিম দিকের বটগাছটা থেকে একঝাঁক পাখি উড়ে যেতে। তার চোখে পড়লো বটগাছের ফাঁক দিয়ে সরু আলোক রশ্মি মাঠে এসে পড়েছে। সে তখনই ওখানে গিয়ে প্রিজমটাকে এমনভাবে ধরলো যে আলোকরশ্মি ওর ওপর পড়লো। আরও নিখুঁতভাবে ধরতে আলোকরশ্মি প্রিজমের উপর একটি বিন্দুতে পতিত হলো এবং বিপরীত পৃষ্ঠতল থেকে সাতটি মৌলিক বর্ণে ভেঙে গেল। বেগুনী, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল এই সাতটি বর্ণ। সায়ন তার ভাইকে বোঝালো যে বৃষ্টির পরে আকাশে যে রামধনু দেখা যায় তা হলো প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্ট আলোর বিচ্ছুরণ এবং এই প্রিজমের সাহায্যে যা দেখালাম তা হলো কৃত্রিম উপায়ে আলোর বিচ্ছুরণ। সূর্যের আলো (সাদা আলো) যে সাতটি বিভিন্ন বর্ণের আলোর সমষ্টি তা এই বিচ্ছুরণ থেকে প্রমাণ করা যায়। স্কুলের স্যার যেটা ক্লাসে পড়িয়েছিলেন সায়ন তা বাস্তবে পরীক্ষা করতে সক্ষম হলো। অতঃপর সায়নের পাড়ার বন্ধুরা এসে গেলে সায়ন তাদেরও এই সুন্দর আলোক পরীক্ষাটি করে দেখালো। সবাই ভীষণ খুশি হলো। তারপর তারা ফুটবল খেলতে শুরু করলো।

Author: admin_plipi