কাকতালীয়

কাকতালীয়
লেখা: দেবলীনা দে II প্রচ্ছদ : নিকোলাস

কলিং বেল বাজতেই সাহানা বলল, “বোধহয় তিতির এল…” এই বলে দরজা খুলতেই তিতির হাতে বই নিয়ে মায়ের প্রশ্নের মুখোমুখি।
-“বইমেলা আজকের মতো শেষ হল, তাই বাড়ির কথা মনে পড়ল?”
তিতিরের তৎক্ষণাৎ উত্তর, “এবছরের মতো শেষ হল, আবার একবছরের অপেক্ষা। বিজয়া দশমীর দিন যেমন মনে একটা বিষন্নতা ভাব, আজ ঠিক তেমন লাগছিল।” -“নাও, এবার হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, তোমার সঙ্গে বাপির কথা আছে।”
মেগাসিরিয়াল থেকে চোখ সরিয়ে ঠাম্মা তিতিরকে বলল, “তোর হাতে গল্পের বইটি কি রজতশুভ্রর?” মিষ্টি করে হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ গো ঠাম্মা, আমার আগামী কয়েকদিনের সঙ্গী। তবে তুমি পড়তে চাইলে তোমাকেও দেব।” ছন্দাদেবী আড়চোখে ছেলে-বৌয়ের দিকে তাকিয়ে নাতনির দিকে চোখ টিপে পড়ার ইচ্ছেপ্রকাশ জানালেন। তিতির ঘর ছাড়তেই সাহানা বলে উঠলেন, “মা, আপনি জানেন তো আমার ভীষণ ইচ্ছে ছিল তিতির ব্যাঙ্কিং সেক্টরে জয়েন করুক। কিন্তু ওর এই বই পড়ার নেশাটা ওকে এমন পেয়ে বসল যে এম.এস.সি করে বি-এড -এ ভর্তি হল। তার নাকি শিক্ষকতা বেশি পছন্দের। এটা আমি এবং ওর বাপি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি।”
-“দেখ সাহানা, কাউকে কি কোন কিছু জোর করে করানো যায়? আর তাতে ভালো ফল হয় কি? ও যেটা করতে চাইছে সেটা মন দিয়ে করুক, সাফল্য আসবেই।”
নভেম্বর মাস, হালকা হিমেল হাওয়া। গত কয়েক বছর ঠান্ডা তেমন জাঁকিয়ে পড়ছে না, উত্তরবঙ্গ বইমেলা প্রতিবারের মতো এবারও জাঁকজমকপূর্ণ। মেলা চত্ত্বর ধূলোময়, ভিড়ঠাসা আর সেই সঙ্গে ফার্স্টফুডের দোকানের পশরা। তবুও বইমেলা বলে কথা, তিতিরের বইমেলার দিনগুলি যেন মনে হয় দুর্গাপুজো। কলকাতা থেকে নামি-অনামী কত প্রকাশনী সংস্থা, এছাড়া ভিনরাজ্যের বই পাওয়া যাচ্ছে। আর লিটল ম্যাগাজিন, তাদেরও কত উৎসাহ। কবিতা আড্ডা, গান আরও কত মজা। সব শুধু এই দশদিনের জন্য। ভাবতে ভাবতে তিতির সদ্য কিনে আনা গল্পের বইয়ের মলাটে হাত বোলাল, মনে মনে বলল, “আজকাল আপনার গল্প পড়ে আপনি বলতে মন চায়না, তুমিতে চলে এসেছি। সেই কবে যেন প্রথম পড়েছিলাম ‘মাঞ্জা’ আর সেই থেকে রজতশুভ্র, তুমি আমার সঙ্গী হয়ে গেলে। আর তারপর ‘রং ভাঙার শব্দ’, ‘চিলেকোঠায় প্রেম’ আরও কতশত! জানো তো, ফেসবুকে তোমাকে বহুবার খুঁজেছি। গত সপ্তাহে পেলাম বটে তবে প্রোফাইলে তেমন কিছু নেই, শুধু বইগুলির ছবিসহ গল্পের অংশ। নিজের সম্পর্কে কিছুই নেই ওই নামটুকু ছাড়া, এমনকি নিজের ছবিও নেই। বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে গিয়ে দেখলাম সে রাস্তা বন্ধ, কেবল অনুসরণ করা যেতে পারে। তাই মেনে নিলাম। ছদ্মনামে লেখে তাই নিজের ছবি ফেসবুকে দেয়নি, হবে হয়ত। আমি যে তোমার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে প্রতিক্ষণে মনে মনে ভাবি, বসন্তের দুপুরে ক্লাসের শেষে ইউনিভার্সিটির কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে যদি গল্প শুনতে পেতাম! হালকা চৈতালি হাওয়ার তালে ফুলের পাপড়ি আমার চুল বেয়ে গালে গড়িয়ে পড়ত, কিংবা ঝিরিঝিরি পাতা তোমার মাথায়। তুমি খেয়াল করো নি, গল্পে মশগুল, আমি আলতো হাতে সে পাতা সরিয়ে দিতাম।” হঠাৎ সাহানা ডেকে উঠল, “কিরে তিতির, একা-একা কি বিড়বিড় করছিস? ফ্রেশ হয়েছিস, নাকি আবার বইয়ে মুখ গুজেছিস?” মায়ের চিৎকার শুনে তিতিরের সম্বিৎ ফিরল, “এই রে, মা শুনে ফেলল বুঝি আমার সব কথা। আমিও হয়েছি… সব সময় কল্পনার জগতে ওঠা-বসা। শেষকালে ধরা না পড়ে যাই মায়ের কাছে।” তিতির উত্তর দিল, “আসছি মা, এইতো ফ্রেশ হয়ে গেছি।”
রাতে খাওয়ার টেবিলে সপরিবারে বসেছে। তিতিরের বাপি, মানে অভিষেক মিত্র, তিনি ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মী, স্বল্পভাষী, গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ।
-“আজ একটা কথা বলার আছে…” তিনি বললেন, “তিতির, তুমি মন দিয়ে শোনো।” তিতির ছোটবেলা থেকেই বাপির এই আচরণের সঙ্গে অভ্যস্ত, তাই সেও শান্তভাবে বলল, “বলো বাপি।”
-“আগামী রবিবার আমার এক পরিচিত, বন্ধুও বলতে পারো, তার ছেলে সহ তোমাকে দেখতে আসবে। ওনারা কলকাতায় থাকেন, এখানে তাদের আত্মীয় আছেন। ওনার ছেলে মানে সাগ্নিক, ব্যাঙ্গালোরে নামী সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত। এক ছেলে, বেশ ইন্টেলিজেন্ট, তোমার ফোটো দেখে ম্যাট্রিমনি সাইটে। তারপরে যোগাযোগ করে, পরে অবশ্য জানতে পারি উনি আমার পূর্ব-পরিচিত।”
সমস্ত কথা শোনার পর তিতির ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছিল না। তার অজান্তে সব কাজ তো বাপি সেরেই ফেলেছে, এখন তার ভূমিকা পাত্র পক্ষের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নগুলো কেমন নিঃশব্দে ভেঙ্গে গেল। অভিষেকবাবু আবার বললেন, “সেইদিন বাইরের কোন কাজ রেখো না। আমি ওনাদের বলেছি তোমার শিক্ষকতার ইচ্ছে আছে, তাতে ওনাদের আপত্তি নেই।” তিতির ছোট্ট করে উত্তর দিল, “ঠিক আছে বাপি, সেদিন বাইরের কাজ কোনো কাজ রাখব না।” তার ঠাম্মা মনে হয় তিতিরের মনের কোনে জমে ওঠা অভিমান আঁচ করতে পেরেছেন। সাহানা যে বুঝতে পারছে না তা ঠিক নয়, তবে এ বাড়িতে অভিষেক মিত্রর কথা শেষ কথা।
খুব কষ্টে খাওয়া শেষ করে তিতির নিজের ঘরে গেল। রাস্তায় লোক চলাচল প্রায় কমে এসেছে, এক-দুটো বাইক সজোরে আওয়াজ করে বাড়ি ফিরছে। আজ রাতের আকাশ পরিষ্কার, তারারা জ্বলজ্বল করছে। জানালার গ্রিলে গাল ঠেকিয়ে তিতির তাই দেখছে, নাকি আনমনে কিছু ভাবছে। আচ্ছা এই সময় রজতশুভ্র কি তার আগামী গল্পের প্লট ভাবছে, নাকি লিখছে কিংবা বই হাতে কিছু পড়ছে? ঠিক কি করছে এখন? কি হবে এইসব ভেবে, আমার তো আর কিছু করার নেই, তাহলে তো নিজের বিয়েটা আটকাতে পারতাম। সেটা যখন পারলাম না তাহলে বাস্তবের সঙ্গে তালেতাল মিলিয়ে চলাই ভাল।
আজ রবিবার, সকাল থেকেই বাড়ির সবার মধ্যে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। একমাত্র তিতিরের কোনো ব্যস্ততা নেই। সে নিজের ঘরে কখনো পড়ার বই নিয়ে আবার কখনো তার প্রিয় লেখকের গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে রয়েছে। একবার তার মা এসে বলে গেল, “বিকেলে ওনারা তো আসবেন, কি পরবি কিছু ঠিক করেছিস?” কথাটা তিতিরের কানে যে পৌঁছোয় নি তা নয়, কিন্তু আমল দিচ্ছে না। আবার সাহানা বলল, “কিরে শুনতে পেলি কি বললাম?” তিতির আস্তে করে জবাব দিল, “শুনেছি তো, হুম কাবার্ডে রাখা আছে।” দুপুরে খাওয়া সেরে নিজেদের ঘরে সবাই বিশ্রামরত। ঠিক সেইসময় তিতিরের ঠাম্মা ওর ঘরে গিয়ে দেখলেন পড়ার টেবিলে বসে তিতির গল্পের বই খুলে কি যেন ভাবছে।
-“ব্যস্ত আছিস তিতির? কথা বলা যাবে রে এখন?”
-“না ঠাম্মা, কোন ব্যস্ততা নেই। বলো কি বলবে।”
-“দ্যাখ, তোর বাপি তোর জন্য যে ছেলেকে পছন্দ করেছে সে ভালোই হবে। তুই এই নিয়ে মন খারাপ করে কয়দিন গুম মেরে আছিস, আমি বেশ বুঝতে পারছি। দেখবি ওনারা তোর পছন্দসই মানুষ হবেন। আর বিয়ে ঠিক হলে আমি আমার নাতজামাইকে বলে দেব, আমার নাতনি লেখক রজতশুভ্রর একনিষ্ঠ অনুরাগী। তুমি ওকে তার গল্পের বই পড়া বঞ্চিত করো না, আমার নাতনি বড় লক্ষী মেয়ে।”
-“থাক ঠাম্মা, তোমার আর এ বিষয় নিয়ে বলতে হবে না। দেখলে হয়তো বাংলা পড়তেই জানে না, আর গল্পের বই পড়ায় ভীষণ এলার্জি। আমি তো বাপির কথা মেনে নিয়েছি, আপত্তি করি নি। তুমি চিন্তা করো না, আমি চেষ্টা করব সবকিছু মানিয়ে নিতে।”
কলিং বেলের আওয়াজ শুনতেই সবাই কেমন তঠস্থ হয়ে গেলেন। সাহানা এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলেই বলল, “আসুন, আসুন। বাড়ি চিনতে অসুবিধে হয় নি তো?” -“একদম অসুবিধে হয় নি। মিস্টার মিত্র যেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেইমতো চলে এসেছি।” বললেন মিস্টার বসু, মানে সাগ্নিকের বাবা, শুভঙ্কর বসু। দুই পরিবারের মধ্যে আলাপপর্ব শেষ হলে তিতিরের বাবা সাহানাকে বললেন, “তিতিরকে একটু আসতে বলো, ওনাদের তো কথা বলার আছে।” শ্রীরূপা, মানে সাগ্নিকের মা বললেন, “দেখুন এখন তো সম্বন্ধ করে দেখে বিয়ের রেওয়াজ তো প্রায় নেই, সেইজন্য আমরাও চাই না স্বরলিপিকে এভাবে দেখতে। আপনি ওকে ওর সময় মতোই আসতে বলুন। বুবকার সঙ্গে নিজেদের মতো কথা বলাই ভালো, কারণ সংসার তো ওরা দুজনেই করবে।”
-“ঠিক আছে, আমি মেয়েকে আসতে বলছি।”
একটু পরেই তিতির এ ঘরে প্রবেশ করতেই সবার চোখ তিতিরের দিকে, একমাত্র সাগ্নিক মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। সাহানা ওনাদের সঙ্গে পরিচয় করাতেই প্রণাম করল তিতির। সামনে বসতেই এক ঝলক চোখ তুলে দেখে নিলো সাগ্নিক। সেটা অবশ্য তিতিরের চোখ এড়িয়ে যায় নি। সেই সুযোগে সেও একঝলক সাগ্নিককে দেখে নিয়েছে। কিছুক্ষন দুই পরিবারের কথাবার্তা চলার পর ছন্দা দেবী, তিতিরের ঠাম্মা, বললেন, “একটা কথা বলার ছিল, আপনারা যদি অনুমতি দেন একটা প্রস্তাব দিতে পারি।” শুভঙ্কর বাবু বললেন, “নিশ্চয়ই, বলুন নির্দ্বিধায়।”
-“বলছি ওরা দুজনে আলাদা করে কথা বললে ভালো নয় কি? আমাদের মাঝে দুজনে তেমন কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। আমরা বরং এখানে গল্প করি আর ওরা দুজনে তিতিরের বেডরুম লাগানো ব্যালকনিতে কথা বলুক।” সম্মতি দিলে ঠাম্মা তিতিরকে বললেন, “তিতির, তুই সাগ্নিককে নিয়ে তোর ঘরে গিয়ে কথা বল।” ওরা একটু ইতস্ততবোধ করছিল, তারপর দুজনেই তিতিরের ঘরের দিকে গেল।
ঘরে ঢুকেই সাগ্নিকের বেশ ভালো লাগলো। ছিমছাম, সাজানো-গোছানো, পড়ার টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দেখল একটি গল্পের বই। তিতির বলল, “আপনি এখানে বসবেন নাকি বাইরে ব্যালকনিতে?” সাগ্নিক সে কথার উত্তর না দিয়েই বলল, “গল্পের বই পড়া হয় বুঝি? তিতির এক প্রকার বিরক্তির সঙ্গে উত্তর দিল, “আমি গল্পের বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। বলতে পারেন নিজের পড়াশুনা, গুটিকতক বন্ধু ছাড়া আমার জীবনে বিশাল অংশ জুড়ে গল্পের বই। আপনার নিশ্চয়ই এটা পছন্দের বাইরে?” সাগ্নিক মুচকি হেসে বলল, “কেন এটা মনে হলো?”
-“শুনেছি আপনি ইঞ্জিনিয়ার, তাই মেকানিজমটাই বেশি পছন্দের হবে, এটা স্বাভাবিক নয় কি?” সবটুকু শুনে কোন উত্তর দিল না। পরিবর্তে প্রশ্ন করল, “কার লেখা বই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আপনার, সেটা জানতে পারি কি?”
-“রজতশুভ্র। ওয়ান অফ মাই ফেভারিট রাইটার। আমার তো মনে হয় শুধু আমার কেন, এ প্রজন্মের যারা গল্পের বই পড়তে পছন্দ করে একবার তার লেখা পড়লে বারবার পড়তে ইচ্ছে করবে। কি অসাধারণ লেখা! পড়তে পড়তে মনে হয় আমি সেই মেয়ে, যাকে ভেবে লেখা।” নিজেকে সামলে নিয়ে তিতির বলল, “ওহ সরি, এসব কথা আমি আপনাকে কেন বলছি? আপনি নিজের কথা কিছু বলুন, এই যেমন… কাজের বাইরে কি ভালো লাগে?”
-“বেশ বলছিলেন, শুনতে ভালো লাগছিল। থামলেন কেন? বলুন। আচ্ছা রজতশুভ্র পদবি নেই? মানে কভার পেজ এ দেখছি শুধু নাম… তাই মনে হল।” এবার তিতির মনে মনে ভাবল, “যতটা কৃত্তিম ভেবেছিলাম ঠিক ততটা নয়, নাকি নিছক কৌতহল বশে এই কথা?” তারপর বলল, “না উনি শুধু নামেই লেখেন, বোধহয় ছদ্মনামে। আমার জানেন একবার ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয়।” সাগ্নিক একমনে শুনছিল তিতিরের কথা। ঠাম্মা তিতিরের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একবার ঘরের দিকে চোখ ফেরালেন, মনে মনে বললেন, “দুটিতে মানিয়েছে বেশ। মুখোমুখি বসে গল্পও করছে।” মলিনা পিসি ঘরে ঢুকে বলল, “তিতির, তোমাদের চা এখানেই দিয়ে যাই?” সাগ্নিক উত্তর দিল, “হুম, এখানেই দিয়ে যান।” চা-স্ন্যাক্স দিয়ে যাওয়ার পর সাগ্নিক বলল, “স্বরলিপি, আপনার সঙ্গে ওনার দেখা হলে কি বলতেন সেটা জানতে ইচ্ছে করছে, বলা যাবে কি?” তিতির অবাক দৃষ্টিতে তাকাল, তারপর মিষ্টি করে হেসে বলল, “থাক, আর শুনে কি করবেন… আমি কেবল নিজের কথাই বলে চলেছি, আপনি কিছু বলুন।”
-“আমার আর কি কথা, অফিস করে নিজের কিছু কেনাকাটা থাকলে কিনে বাড়ি ফেরা আর উইকএন্ডে কোন বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা দেওয়া, এর বেশি কিছু না।”
-“এতো ডেলিরুটিন, ভালো লাগার মতো কিছু নেই?” সাগ্নিক মনে মনে ভাবছে, তার ভালোলাগাটা জানালে যে তিতিরকে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে না। নিজের কথা এড়িয়ে আবার প্রশ্ন, “আপনি বললেন না তো, রজতশুভ্রর সঙ্গে দেখা হলে কি বলতেন?”
-“কি করবেন জেনে? আমার তো মনে হয় এরপর বই পড়াটাই হবে কিনা জানা নেই আর দেখা তো দূর অস্ত।” একটু অভিমানের সুরে তিতির কথাগুলো বলল। সাগ্নিক খেয়াল করল, তিতিরের দীঘির মতো চোখ ছলছল করছে। ভিতরে ভিতরে যে কষ্ট পাচ্ছে তা বুঝতে বাকি নেই। না আর মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। সাহানার গলার আওয়াজ পেয়ে দুজনের সম্বিৎ ফিরল।
দুই পরিবারের মধ্যে একপ্রকার কথা পাকা হয়ে গেল, কেবল বিয়ের দিন দেখার পালা। সাগ্নিক নিজের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। তিতির কেমন গুম মেরে আছে, সেটা সাগ্নিক লক্ষ্য করেছে। শেষে সে ঘর থেকে বেরোনোর আগে আস্তে করে বলল, “স্বরলিপি, বেশ কয়েকবছর যাবৎ কম-বেশি লিখছি। তবে তোমার মতো অনুরাগী যে আমার জীবন সঙ্গী হবে সেটা কখনো ভাবি নি। আজ আসি, টেবিলের উপর আমার ভিজিটর কার্ড রেখেছি। ইচ্ছে হলে কথা বলো কেমন, ভালো থেকো।”

Author: admin_plipi