বন্ধু ।। লেখা : শ্রাবণী সেনগুপ্ত
সুন্দরবনের ছোট্ট একটি গ্রাম। ছোট্ট রেহানা আর তার মা সেখানে থাকে। তার বাবা ভিনদেশে কাজে গিয়ে আটকে পড়েছে। মা সাতসকালে বেরিয়ে যায় গাঁয়ের মিনতি মাসির সাথে কাঁকড়া ধরতে। রেহানা আগের দিনের আমানি খেয়ে ছোট হাতে ঘরের কিছু কাজ সারে। আগে গাঁয়ের প্রাইমারি ইস্কুলে যেতো, এখন করোনার জন্য ইস্কুল বন্ধ। শুধু মাঝে মাঝে খুলে মিড ডে মিলের চাল ডাল দেয়। মায়ের আসতে আসতে সেই বিকেল। তখন আবার মা মেয়েতে বসে কুঁচো মাছের ঝাল দিয়ে ভাত খায়। ঘরের কাজ সেরে খানিক পড়তে বসে সে। তারপর সামনের দাওয়ায বসে কত কথা বলে শ্যামলী গাইয়ের সাথে, চৈ চৈ হাঁসের সাথে। এখন তো আর বন্ধুদের সাথে খেলা যায়না। তবে এই সুযোগে এইসব পশুপাখিরা বেশ বন্ধু হয়ে গেছে। মা’র ফিরতে কোনো কোনো দিন দেরি হলে, যখন তার খুব ভয় করে, তখন শ্যামলী গাই হাম্বা হাম্বা করে তাকে সাহস জোগায়, বলে, “ভয় পেওনা বন্ধু, মনে জোর রাখো।” রেহানা তখন ইস্কুলে শেখানো রবি ঠাকুরের গান খুব জোরে জোরে গায়, আর বুক ভরা বল পায় ।রেহানাদের পাড়ায় একজন বইদাদু আসেন। ঝোলা ভর্তি কতো না তার পুঁথি। তার কাছ থেকে রেহানা, শোভন, গদাধর, মালিনী সবাই বই নেয়। আবার পড়া হয়ে গেলে দিনকয়েক পরে এসে বইগুলি ফিরিয়ে নিয়ে যান তিনি। এই সময়েও হাঁটতে হাঁটতে এসে বেশ খানিকটা দূরে বই রেখে যান, আর তিনি চলে গেলে রেহানা বই নিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়। বইদাদু বলেন, “সব থেমে গেলেও বই পড়া থামালে চলবেনা, এ যে সবচেয়ে বড়ো বন্ধু।” সত্যিই তাই, ভাগ্যিস এই বন্ধু ছিলো, তাইতো সে এর মধ্যে দিয়েই এখন বাড়িতে বসেই দেখতে পায় জগৎটাকে। কত জায়গায় ঘুরতে পারে, আলাপ হয় কত গুণী মানুষজনের সাথে।তাইতো বলি, তোমরা, ছোট্ট সোনারাও রেহানাদের মতো বন্ধু করে নাও বইকে। দেখবে আস্ত পৃথিবীর দরজা খুলে যাবে তোমাদের সামনে। আর বইদাদু? তিনি তো সবজায়গাতেই আছেন, বাবা, মা, দাদু, দিদা, কাকা, জ্যেঠু, পিপি, পিশুয়ার মাঝে।