রূপসার একদিন

রূপসার একদিন ।। লেখা : অদিতি ঘটক

-“এসব কি হচ্ছে টুকুন? ক্লাস করতে করতে আবার গেম খেলা! তোমাকে বলেছি না এভাবে ফোনের ব্যাটারি শেষ করবে না। আর যেন না দেখি! ওহ! তোমাকে নিয়ে আর পারি না। খাবার আনছি… আজ কিন্তু তোমার ফেবারিট খাবার নয়।” ছোট্ট রূপসা পুতুল নিয়ে নিজের মনে একা একা খেলা করছে।মা, দিদিকে যা যা বলে শুনে শুনে তাই বলছে, ও ওয়ানে পড়ে। নার্সারীতে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। একটা আবছা স্মৃতি মনে পড়ে। স্কুলের ছোট ছোট চেয়ার। ম্যাম, আয়া দিদিদের মুখ। ছুটি হওয়ার সময় লাইন দিয়ে এর, ওর ব্যাগের ওপর হাত দিয়ে যাওয়া। তারপর দু বছর স্কুল বন্ধ। ঘরে থেকেই এক ক্লাস, এক ক্লাস করে উপরে উঠে গেল। আগের বছর থেকেই ম্যামরা হোয়াটস‌অ্যাপে পড়া পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে সেগুলো সলভ করে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলেই ব্যস। পড়া শেষ। দিদি অনেকক্ষন মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। ম্যামরা ক্লাস নেয়। আর ব্রেকের মাঝে মাঝে দিদি মোবাইল ঘাঁটে। রূপসা, ঠামকে গিয়ে মাঝে মাঝেই নালিশ করে। ঠাম প্রায়ই খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে দিদিকে দেখে যায় কিন্তু কিচ্ছু বলে না।আজ রূপসা মাকে ফোন করবেই করবে। দিদি একবারের জন্যও মোবাইল দেয়নি! ওর পড়া হয়ে যাবার পরও! মাকে বলবে, বাবা দিল্লি থেকে যেন রূপসার জন্য গেমে ভর্তি একটা বিরাট বড় ল্যাপটপ কিনে আনে। বনিদের থেকেও বড়। কিন্তু মা যে ফোন ধরছে না! -“ঠাম, মা ফোন ধরছে না কেন গো? সেই কাল সকালে গেছে! বাবাও আসছে না! ঠাম, বাবা কবে আসবে?” -“ট্রেন তো চলছে না। কিসে আসবে তাহলে?” -“বাবাদের কোম্পানি আর বাবাকে রাখবে না! একবার মাকে দেখো না, ফোনে পাও কি না!” এক্ষুনি শুয়ে পড়লে মনি পিসি রূপসাকে একটা সত্যি ভূতের গল্প শোনাবে। এর পরে ঘুমলে আর পারবে না, ওর অনেক কাজ আছে।অনিচ্ছাসত্ত্বেও রূপসাকে চলে যেতে হল।পাড়ার লোকেরা খুব চিৎকার করছে। মাকে ঢুকতে দিচ্ছে না! মায়েদের হসপিটালটা কোভিড হসপিটাল হয়ে গেছে বলে।বাবার করোনা হয়েছে। দিল্লির হসপিটালে ভর্তি। রূপসা ঘরে ঢুকে ওর পিগি ব্যাংকটা ভেঙে ফেলেছে। এখন অনেক কাজ…।

Author: admin_plipi