জীবন যেমন

 

 

১ ।

জিনিয়া আজও সকালে উঠতে পারে নি। কখন যে মেয়েটা স্কুলে  চলে গেছে জানেই না। শাশুড়ি খুব ভালো। সকালে উঠে সব ব্যবস্থা করে দিয়ে নাতনি কে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছে।

মা পারে না। পায়ে সেই কবেকার পুরনো হাঁটুর ব্যাথা। সকালে উঠতে খুব কষ্ট। তাও করে।  তিন্নি টা খুব দুষ্টু ছিল। আজকাল হঠাৎ করেই কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে। এখন কতই বা বয়স। গত বছরই তো পাঁচ এর জন্ম দিন করলো। আজকাল চুপ চাপ থাকে। বেশি কারো সাথে মেশে না। নতুন কেউ বাড়িতে এলে এক মিনিট একটু দাড়িয়ে দুটো মিষ্টি হেসেই আবার হাওয়া। চুপচাপ থাকার স্বভাব বেড়েই যাচ্ছে ওর মধ্যে। ঠাম্মা ও তাই খুব চিন্তিত।

বাবা সময় পায় না। তাও রাতে কোনো কোনো দিন ডিসপেনসারি থেকে ফিরে বসে মেয়েকে নিয়ে। পড়াবে কি? ঘুমে ঢুলতে থাকে ত্রিদিব। সকালে উঠে মেয়ের টিউনিক কোথায় , ইউনিফর্ম ইস্ত্রী নেই কেনো? তিন্নি মোবাইল রাখো। অনেক ক্ষন থেকে দেখে যাচ্ছি। হটাৎ তিন্নি বলে উঠলো বাবা আজ তো একটা এক্সট্রা খাতা লাগতো। এনে দিতে পারবে? বলতে ভুলে গেছি, সরি বাবা। বাবা দৌড়ুলো খাতা আনতে। হোপলেস মেয়ে একটা!

বাবা কাল কিন্তু দশটা ইকোয়েশন জমা করতে হবে। আজ প্লিজ চেম্বার এর ফাঁকে ফাঁকে লিখো। রাত এর বেলায় বুঝিয়ে দেবে। আজ কিন্তু বসেই ঘুমাবে না। বাবা দেখ এই বইটার মধ্যে পাঁচ টা পাতা নেই।আজকে লিখে দেবে?

আমি কোথায় পাবো?

বাবা সানিভের মা কে ফোন করে বলো না বই টা দিতে। তুমি চেম্বার করতে করতে লিখে দিও। জুতো টা ছিড়ে গেছে কি করবো বাবা?

দাড়াও দেখি মোড়ে মূচিটা বসেছে কিনা। আগে বলতে পারো না? আমার আজ তাড়া থাকে তুমি তো জানো।

আচ্ছা থাক তাহলে। কাল করে দিও।

ত্রিদিব এর মনের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। সরি তিন্নি। দে দেখি। যাই একবার।

কি আর করবে ত্রিদিব। এটাও তো দায়িত্ত্ব। হঠাৎ তিন্নির মনটা কোথায় যেন ভেসে যায়। ত্রিদিব বোঝে। চাপা তো! ঘাঁটিয়ে কি লাভ!

 

২।

মা, ওষুধ টা আজ থেকে বন্ধ থাকবে। আগে দেখবো দুদিন তার পর। না রে বাবা আমি ওই ওষুধ ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার ঘুম হবে না। সকালে উঠতে না পারলে যে মামনির কাল স্কুল যাওয়া হবে না। কি যে বলিস!

ত্রিদিব বোঝে। কি আর করবে। আজ আর চেম্বারে  মন বসে না। জীবন টা খুব সোজা! ওর না। ওর বন্ধু দের। রাতে  যখন ওর কলিগরা মেডিসিন কোম্পানির দেওয়া পার্টিতে যায়, সকালে খবরের কাগজে মুখ গুজে দুটো হালফিলের খবর পড়ে আর গুগলে তার ওপর রিসার্চ করে চায়ের আসরে বসে মতামত এর বন্যা বইয়ে দিয়ে ডেরেক ও ব্রায়ান বা সুমন এর মতো জ্ঞানগর্ভ হতে কার না ভালো লাগে। জীবন টা তো সোজা! ওর না।

 

৩।

আজ সকাল থেকে সবার মন খারাপ। এই দিনে কত হইচই হওয়ার কথা। ফ্রাইড রাইস, আর পনির মাস্ট। সাথে আরো কতকিছু। বিকেলে আউটিং। নতুন কেনা চাদর দিয়ে বিছানা গুছানো। কত কাজ। আজ ত্রিদিব আর জিনিয়ার এনিভর্সারি। সকালে উঠে উইশ। মাকে প্রণাম। কত কাজ। দুপুরে রিক আস্তে পারে অফিস থেকে। রিক জিনিয়ার থেকে ছোট। তিন্নির মামা। আসলেই তিন্নির কিছু একটা গিফট পাওয়া পাক্কা। ও তো বসে থাকে দরজার দিকে তাকিয়ে। ঘোরা ফেরা করতে থাকে। এই  বুঝি এলো মামা।

তিন্নি আর আজ তেমন নেই। সেই উতল ব্যাপারটাও অনেক কম। গত দুবছর ধরে এই দিনে বিকেলের দিকে একবার পার্ক এ গিয়ে মায়ের খুব প্রিয় ওই লেকের ধারে বাবার সাথে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে নীরবে ডুবতে থাকা সূর্যটাকে দেখা। জীবনটা খুব সোজা। ওদের না।

আজকে শুধু বাবা, দিদার সাথে দুপুরে শোবার ঘরে তিন্নি মা কে একটা গিফট দিয়েছে। ক্যাডবেরি চকোলেট। প্রতিবার দেয়। দিদার কিছুক্ষন নিরবতা, রজনীগন্ধার গন্ধ আর মায়ের ছবিকে আগলে ধরা বাবার হাতের মালাটা ছাড়া ঘরে আর কোনো সেলিব্রেশন এর প্রস্তুতি নেই।

 

লেখাঃ কৌশিক

ছবিঃ কুণাল

 

Jibon Jemon     |     Kaushik     |    Kunal    |     www.pandulipi.net     |    Bengali     |     Stories

Author: admin_plipi