কাগজের নৌকো।। লেখা : স্বপঞ্জয় চৌধুরী
কালিদাসের বড় দাদা হরিদাস কাগজ দিয়ে নানা ধরনের খেলনা বানাতে পারে। তাই পাড়ার শিশু মহলে তার খুব কদর। স্কুল ছুটি হলেই ছোট্ট ছেলেদের দল পচপচ করে হোমওয়ার্কের কপি থেকে কাগজ ছিঁড়ে নিয়ে আসে হরিদাসের কাছে। কাউকে বানিয়ে দিচ্ছে কাগজের পদ্মফুল, কাউকে কাগজের প্লেন, কাউকে ফাইটার প্লেন, কেউ কাগজের পটকা, কেউ ঘুড়ি, আবার কেউ বা বানিয়ে নিচ্ছে কাগজের নৌকো। আজকের আকাশটা একটু মেঘলাটে ধরনের তাই কালিদাস তার দাদাকে বলছে, “দাদা আমায় একটা নৌকো বানিয়ে দিবি?” হরিদাস মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দেয়। কারণ তার হোমওয়ার্ক কপির আর খুব অল্প কয়েকটা কাগজ অবশিষ্ট আছে। ওগুলো ছিঁড়ে নৌকো বানালে কাল ক্লাসে গিয়ে নিখিল স্যারের বেতের বাড়ি খেতে হবে। কিন্তু ছোট ভাইয়ের মলিন মুখ দেখে স্যারের রক্তচক্ষুকে ভুলে খাতা থেকে কাগজ ছিঁড়ে আনলো। তারপর একটার পর একটা ভাঁজ করে করে বানিয়ে ফেললো নৌকো। পূবদিক থেকে বাতাস ছুটেছে। আজ বৃষ্টি হবে। সবাই যে যার বাড়িতে ছুটে যাচ্ছে। আকাশ ভেঙে ঝম ঝম করে বৃষ্টি নেমে এলো। অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজলো। কিন্তু কালিদাস আর হরিদাস বাড়ি ফিরে এলো। মায়ের বারণ আছে বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না।ঘন্টাখানেক বৃষ্টি হলো। তারপর বৃষ্টি থেমে গেলো। সূর্যটা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে। সারা আকাশেই যেন হলদে, কমলা রঙের গোধূলি ভেঙে পড়েছে। বাড়ির উঠোন ও রাস্তায় বেশ পানি জমেছে। কালিদাস তার কাগজের নৌকোটা পানিতে ভাসালো। তিরতির বাতাস বইছে। মৃদু কম্পনে নৌকোটা ভেসে যাচ্ছে দূরে। কালিদাসের চোখে মুখে হাসি। তার দেখাদেখি পাড়ার অন্যসব ছেলেরাও কাগজ ছিঁড়ে এনে নৌকো বানানোতে মশগুল। সবাই মাঠে জমে থাকা পানির মধ্যে নৌকো ভাসিয়ে দিচ্ছে। বইতে হরিদাস নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের কথা পড়েছে। তার চোখে সামনে যেন ভেসে উঠলো এক কাল্পনিক চিত্র। মাঠের ওপারটা যেন ভিনসেন্ট বন্দর। আর এপাড়টা কোলকাতা। শত শত নৌকো ছুটে যাচ্ছে ভিনসেন্ট বন্দরের দিকে। কে আগে পৌঁছোয় সেটিই এখন দেখার পালা। নৌকো এগোচ্ছে আর সবাই হাতি তালি দিচ্ছে। আবারও ঠান্ডা বাতাস বইছে। বৃষ্টি হবে বোধ হয়। সবাই যার যার স্মৃতিতে নৌকো ভাসার দৃশ্য নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলো।