চারুবালা (দ্বিতীয় পর্ব) || লেখা : শুভাশীষ দে
প্রথম পর্ব : https://url1.io/jlBeF
হতচকিৎ হয়ে সামনে তাকাতেই তার চোখ গেল ঠিক সামনেই দাঁড়ানো অতি সুপুরুষ, সুদর্শন ডঃ পরমব্রত হালদারের চোখের দিকে। এবং অবাক বিস্ময়ে সে দেখল পরমব্রতর চোখেও এই একই নীরব, মুগ্ধ প্রনয়ের আর্তি যা এতক্ষণ সে রেললাইনের ধার থেকে বাড়িতে আসা পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের চোখে দেখেছে ।
১২
এরপরের দিনগুলোয় যা ঘটলো, তা শুধু চারুবালার নয় সবাইকার কাছেই স্বপ্নেরও অতীত, অচিন্তনীয়! প্রথমে চারুবালার কথাতেই আসা যাক। কলকাতার বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডঃ সমরেশ হালদারের বাড়িতে তাঁর বিবাহযোগ্য ছেলে বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন ডঃ পরমব্রত হালদারের বিবাহের জন্য পাত্রীর সম্বন্ধের অনুরোধ নিয়ে গিয়েছিল জনৈক ঘটক। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতার অভিজাত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের ডাকসাইটে সুন্দরী বিবাহযোগ্যা পাত্রীদের ছবি। তাদের অধিকাংশই গৌরাঙ্গী,তণ্বী, পেলব, স্নিগ্ধা, আকর্ষনীয়া। প্রকৃতির যাবতীয় রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণ সমন্বিত যাঁদের কুসুম কোমল তনু। তাদের সেই ছবির মধ্যে ভুলক্রমে চারুবালার ছবিও চলে এসেছিল। এর কারণ ওই ঘটক চারুবালার বাবারও পরিচিত এবং চারুবালার বাবা ওই ঘটককেই তাঁর নিজের মেয়ের জন্যও একজন পাত্র দেখে দিতে বলেছিল। ঘটনাচক্রে চারুবালার ওই ছবি অন্যান্য পাত্রীদের ছবির সঙ্গে পরমব্রত দেখে। সেদিন দেখে সে সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন অর্থাৎ যেদিন সকালে চারুবালা আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রেললাইনের ধার থেকে নিজের ঘরে ফিরছিল, সেইদিনই খুব সকালে ঘুম থেকে ধড়মড় উঠেই পরমব্রত বাড়ির সবাইকার ঘুম ভাঙ্গিয়ে পাত্রীদের ছবির মধ্যে থেকে চারুবালার ছবি বেছে নিয়ে তাকেই জীবনসঙ্গিনী করবে এই বিষয়ে জেদ করতে থাকে। কেবলমাত্র তার জেদেই সকালবেলা ওই ঘটকের বাড়িতে গিয়ে চারুবালার ডঃ ঠিকানা জেনে নেন ডঃ সমরেশ হালদার। তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা পিতা-পুত্র চলে আসেন চারুবালাদের বাড়িতে। সেই দিনের পর থেকে প্রতিদিনই চারুবালাদের ঝুপড়ির সামনে থামতে লাগলো একের পর এক দামি দেশী ও বিদেশী গাড়ি। সেখান থেকে প্রতিদিন নামতে লাগলো ধনী, অভিজাত, সম্ভ্রান্ত,সুবেশা, সুশিক্ষিত, জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত একের পর এক পাত্রপক্ষের দল। স্বনামধন্য পুঁজিপতির একমাত্র সন্তান, বিদেশে কর্মরত এন আর আই, আইএএস, সফল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার। তাদের সকলের একই অভিলাষ। চারুবালার পানিগ্রহণ। চারুবালার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে শুনেও অনেকে মানতে চাইলো না। হত্যে দিয়ে পড়ে রইল ওদের ঝুপড়ির সামনে।শুধু চারুবালা নয়। গোটা দেশেই যেন একই অবস্থা। সাধারণ বিচারে যারা কুৎসিত অর্থাৎ চারুবালার মতই রুগ্না, কৃশ , কৃষ্ণবর্ণা, কুরূপা, জৌলুষহীন ও নীরস, সেই নারীরাই যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে পুরুষ জাতির একান্ত কাম্য হয়ে উঠলো। আর সাধারণভাবে যাদের সুন্দরী বলে মনে করা হতো তারা হয়ে উঠল ব্রাত্য। দৈনিক খবরের কাগজের বিবাহ ও ঘটকালির পাতায় ‘গৃহকর্মনিপুনা, গৌরাঙ্গী,তণ্বী, পাত্রী চাই’ এই শিরোনামকে সরিয়ে স্থান পেতে লাগলো ‘কৃশ, কৃষ্ণাঙ্গী, কাষ্ঠসদৃশ, সকল রকম পেলবতা বর্জিত সুন্দরী পাত্রী চাই’ এই শব্দগুলি। গোটা দেশে যেন বিবাহযোগ্যা পুরুষের রুচির আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। সাধারণ বিচারে কুৎসিত, কুরূপা মেয়েদেরই বিয়ের বাজারে বাজারদর তুঙ্গে হয়ে উঠলো। সেইসব মেয়ের বাবারা বুক ফুলিয়ে ঘুরতে লাগলো। অপরদিকে দুধে-আলতা বর্ণের, মসৃণ ও পেলব ত্বকের মেয়েদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। তাদের বাবাদের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হলো। এখন অতি সাধারণ পাত্রও এমন মেয়ে নিতে চায় না। এদের পার করতে এখন পাত্রীর বাবাকে দিতে হয় মোটা বরপণ। এই যন্ত্রনায় দগ্ধ হয়ে পারিবারিক লাঞ্ছনায় কত এইরকম পাত্রী যে আত্মঘাতিনী হল তার কোন হিসেব রইল না।
১৩
আমাদের চারুবালা কিন্তু তার শ্বশুরগৃহে স্বামী- পুত্র -সংসার নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছে। হ্যাঁ, যেই ডাক্তার পরমব্রত হালদারকেই যে তার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছে। ডক্টর সমরেশ হালদারের পরিবারের সকলের চোখের মনি এখন সে। অর্থের, স্বাচ্ছন্দ্যের, সুখের, বিলাসের, নিরাপত্তা বোধের আর কোন অভাব নেই। জীবন সম্বন্ধে আর নেই কোথাও কোন অভিযোগ। হ্যাঁ, শ্বশুরগৃহের সবাইকার মত ওর মা -বাবারও নয়নের মনি এতদিনে হয়ে উঠতে পেরেছে সে। ওর বিয়ের পর ওর মা -বাবারও আর্থিক উন্নতি যথেষ্টই হয়েছে। আর এই ব্যাপারে যে চারুবালার একেবারেই হাত নেই এটা হলফ করে বলা যাবে না। ওকে খাইয়ে-পড়িয়ে বড় করার ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি করে নি সে। এখন হারান সাহা আর রিকশা চালায় না। এখন সে নিজেই একটা টোটো আর দুটো অটোরিক্সার মালিক। প্রতিদিন এগুলোকে লোক দিয়ে ভাড়া খাটায় সে। তাতে আমদানি কিছু মন্দ হয় না। চারুবালার দুই ভাই স্কুলের পাঠ শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। হারান সাহার বংশে এই প্রথম। চারুবালার নিচের বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে। পাত্র বেশ স্বচ্ছল। অর্থাৎ সব দিক দিয়ে জীবন একটা স্থিতাবস্থায়। এইরকম একটা নিশ্চিন্ততা ও চিন্তাহীনতার নিরবিচ্ছিন্ন স্রোতে গা ভাসিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছে চারুবালার জীবন তরী ঠিক এইরকম সময় ওর জীবনে নেমে এলো অকস্মাৎ বজ্রাঘাত।
১৪
এক ভোররাতে হঠাৎ ওর মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল চারুবালার। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাইল স্ক্রিনে উঁকি মেরে দেখে ওর মা। কল ধরতেই শুনতে পেল ওঁর কান্নাভেজা গলা।
-‘ হ্যালো চারু বলছিস?’
-‘ হ্যাঁ মা। কি বলবে বলো।’
-‘ সব্বোনাশ হয়ে গেছে চারু মা আমার! উমি বিষ খেয়েছে।’
এক মুহূর্তের জন্য জন্য তড়িৎস্পৃষ্ট হয়ে গেল চারুবালা। উমি মানে উর্মিলা ওর ছোট বোন। বড় আদরের বোন। ফুটফুটে ডল পুতুলের মত দেখতে। অসাধারণ ফর্সা। অনেকটা মেমদের মত। শুনেছে ঠিক ওর দিদিমার মত রং পেয়েছে। সেই কারণে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের খুব আদরের। একই সঙ্গে ওরও। সাধারণভাবে উর্মিলার জন্য চারুবালার মনে একটা হিংসার ভাব হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ওর প্রতি একটা অদ্ভুত স্নেহ অনুভব করে চারুবালা। সেটা অবশ্য এই জন্য হতে পারে যে চারুবালার মা রুগ্না হওয়ায় খুব ছোটবেলাতে থেকেই উর্মিলাকে ঠিক মায়ের স্নেহ দিয়েই মানুষ করেছে সে। হয়তো ওর অবচেতন মনে এটাই চেয়েছিল যে জীবনে ও যা পায় নি, উর্মিলা সেটা পেলেই ওর সাধ অনেকটা পূর্ণ হবে। সেই উর্মি আজ বিষ খেয়েছে। আর ভাবতে পারছে না সে। অবশ্য শুনেছে উর্মির বিয়ে দিতে ওর বাবাকে খুব বেগ পেতে হয়েছে। পাত্র প্রচুর বরপণ চেয়েছিল। ওর বাবাকে নিজের বাড়িটা বাঁধা রাখতেও হয়েছে। হ্যাঁ এখন আর ঝুপড়িতে থাকে না ওর বাবা। অবস্থা কিছুটা ফেরাতে কাছাকাছি একটা জমি কিনে তার উপর একটা ছোট একতলা বাড়ি করেছে । উর্মিলার বিয়ে দিতে এই বাড়িটাই বাঁধা দিতে হয়েছে ওর বাবাকে। তারপরও হয়তো বিয়েটা হতো না চারুবালার তরফ থেকে সাহায্য না এলে। কিন্তু জামাই শুনেছে মনোমতো হয়নি। উর্মিলার দিকে টান নেই । সম্প্রতি কাছাকাছি এলাকাতেই একজন কালো, রোগা, সাঁওতাল মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে । সেই কারনেই উর্মিলার এই পদক্ষেপ গ্রহণ। আর ভাবতে পারছে না। চোখের সামনে সব শুন্য হয়ে যাচ্ছে। আত্মহননের যে পদক্ষেপ ও নিতে গিয়েও নেয় নি ওরই প্রাণাধিক প্রিয় সহোদরা আজ সেই পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। একটা তীব্র বুক ফাটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো ওর মুখ থেকে।
-‘না -আ -আ -আ! ঠাকুরে এ কি করলে তুমি? উর্মিকে বাঁচাও তুমি! যে কোন মূল্যে বাঁচাও! দরকারে আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও!’ বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো চারুবালা।
১৫
চোখের সামনে আবার এক বিস্তীর্ণ ঘনায়মান অন্ধকারের মধ্যে চারুবালা দেখছে সেই জ্যোতির্পুঞ্জ। সেই অগ্নি বলয়ের মধ্যে শ্বেত শ্মশ্রু সমন্বিত দিব্য, জ্যোতির্ময় পুরুষ। এবার আর এক চোখ নিমীলিত নয়। দুই চোখের পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তার দিকে চেয়ে আছেন। মুখের স্মিত হাসিটি অবশ্য এখনো আছে। অকস্মাৎ তার কানে গেল ওনার দিব্য কণ্ঠস্বর।
-‘ তুই এখনো কাঁদছিস! এখনো তোর দুঃখ গেল না! আমি তো তোর সব ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছি।’
-‘ না বাবা! আমি চাইনি!বিশ্বাস কর। আমার ক্ষনিকের সুখের জন্য আবার উমির এত বড় সর্বনাশ হবে এ আমি কখনোই চাইনি।’
ওনার মুখের হাসি আরো দীর্ঘায়িত হল।
-‘ মনে করে দেখ! ওই সময় তুই কি ভেবেছিলিস।’
অকস্মাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো চারুবালার মনে পড়ল সব কথা। সেই ভোর রাতে আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রেল লাইনের ধারে আমগাছের নিচে নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়ার আগে তার দুই চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে এসেছিল জল। তার সঙ্গে বুক চিরে যেন বেরিয়ে এসেছিল এই কথাগুলি:
-‘ হে ভগবান! তুমিই যদি বিধাতা পুরুষ হও তবে বলো আগের জন্মে কি পাপ করেছিলাম যে এই জন্মে তুমি আমাকে গরিবের ঘরের মেয়ে করে জন্মগ্রহণ করালে? শুধু মেয়ে না, গরিবের ঘরের কালো মেয়ে!’
-‘ না!শুধু কালো মেয়ে হয়ে জন্মানোর দুঃখ তোর ছিল না। এটা তোর মনের কথা ছিল না। আমি যে শুধু তোর উচ্চারণ করা শব্দ নয়, তোর মনের ভেতরটাও পড়তে পারি। কালো মেয়ে বলে সকলের তোকে অবজ্ঞা করাটাই তোর আসল দুঃখের কারণ ছিল।’
-‘ কিন্তু কেন বাবা? কেন তুমি একজনকে সুন্দর করবে আর একজনকে অসুন্দর করবে? কেন একজন সবাইকার কাছে আদর পাবে আরেক জনের ভাগ্যে থাকবে শুধুই অবজ্ঞা আর অপমান।’
-‘ এটাই তো আমার সৃষ্ট মায়ার খেলা রে পাগলি! এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আমার মায়ার অধীন। কেউ এর বাইরে নয়। এই মায়ার প্রভাবেই তো কেউ হয় ভালো,কেউ মন্দ, কেউ হয় কালো, কেউ সাদা, কেউ সুন্দর, কেউ কুৎসিত। কিন্তু আসলে এই সাদা -কালো, সুন্দর-কুৎসিত অবয়ব সবটাই তো মায়া, সবটাই মিথ্যা। তোদের দৃষ্টিতে এই সুন্দর আর কুৎসিত যে দেহটা, সেই দেহের অন্তরালে যাঁর নিবাস সেই রূপহীন, গুনহীন, বর্ণহীন নিরাকার, নিরাবয়ব আত্মা যা আসলে আমারই প্রকাশ, সেই তো আসল সত্য রে! সেদিকে না তাকিয়ে তোরা শুধু বাইরের খোলসটার দিকে তাকাস। আর তাতেই তো যত বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তি মুক্ত করতে চাই বলেই তো তোদের একেক জনকে আমি একেক রকম করে গড়ি। আজ যে রূপে গড়েছি কাল আবার তা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে নতুন রূপ দিই। তাই আজ যে সুন্দর কাল সে কুৎসিত। আবার আজকের কুৎসিত আবার কোনদিন অন্য কোন জন্মে সে সুন্দর। এই ভাঙ্গা গড়ার খেলার মধ্যে দিয়েই যাতে তোরা তোদের রুপের, তোদের বাহ্যিক অস্তিত্বের অনিত্যতা বুঝতে পারিস এই জন্যই তো আমার এত আয়োজন। আর যে কালো রঙের জন্য তুই একদিন দুঃখ করছিলিস সেই কালোও তো আমারই সৃষ্টি রে। সৃষ্টির খাতিরেই আমাকে যেমন সাদা তেমনি কালোও সৃষ্টি করতে হয়েছে। এই বৈপরীত্যই তো আমার সৃষ্টির চালিকাশক্তি রে! এই বৈচিত্র না থাকলে আমারই সৃষ্ট নিয়মে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এক মুহূর্তও থাকবে না। এই বৈচিত্রের কারণেই তো আমি সৃষ্টি করেছি পাপ-পুণ্য, আলো – অন্ধকার’, বৃহৎ-ক্ষুদ্র, জ্ঞানী-মূর্খ, উষ্ণতা-শৈত্য,সাধু-তস্কর। একটা না হলে আরেকটা যে অসম্পূর্ণ রে!’
-‘ কিন্তু আমি যে আর পারছিনা বাবা। উর্মি আমার প্রাণ। তুমি ওকে বাঁচিয়ে দাও। আমার আর কিছু চাইনা। তুমি আবার সব কিছু আগের মতো করে দাও। আমি কুৎসিত আমাকে কুৎসিতই থাকতে দাও। তাতে যদি আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেয় তাহলেও। আমি বুঝেছি বাবা তুমি আমাকে কুৎসিত করেছো এটাও তোমার একটা দয়া। এটা একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে যাতে আমি আমার এই বাইরের রূপটাকে ভুলে আমার হৃদয়ের অন্ত:স্থলে আত্মা রূপে যে তুমি আছো তাতেই যাতে মনোনিবেশ করতে পারি। আমার আগেকার প্রগলভতা তুমি ক্ষমা কর বাবা!’
আরেকবার সেই মনোরম, নিষ্পাপ, মধুর, স্মিত হাসি ফুটে উঠলো তাঁর মুখে। তাঁর সেই দিব্য আনন থেকে বেরিয়ে এলো কেবলমাত্র একটাই শব্দ :
‘ তথাস্ত!’