বসুন্ধরার নবজাগরণ (পর্ব ৫)
শিপ্রা মজুমদার তরফদার
অমিয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত। সকাল থেকে এতো দিন পর পর্নার একটু কাজের চাপ বেশি। অমিয় আজ দশটার দিকে বের হয়ে যাবে মাটিগাড়ার দিকে। সেখানে ওদের সংস্থা থেকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে গরিব মানুষদের। দুমাসের লকডাউন এ অনেক মানুষ এখন কাজ হারিয়েছে। যাদের দিনমজুরি করে পেট চলত তাদের সংসারের খুবই করুণ দশা। খুব গরীব লোকজনদের সরকার থেকেও কিছু সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত লোকদের অবস্থা খুবই করুণ।
মাটিগাড়ার একটি ক্লাবের সামনে এই অভাবী মানুষদের লম্বা লাইন পড়েছে। সবাই যাতে সবার চেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে ত্রাণ নেয় সেদিকে অমিয়দের দেখতে হচ্ছে। হঠাৎ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অখিল এর দিকে চোখ পড়ে। ছেলেটি পর্নার স্কুলের ছাত্র, বাবা টোটো চালায়। অখিল দু’একবার পর্নার কাছে পড়ার জন্য এসেছে। পর্ণা ছেলেটিকে খুব ভালবাসে, কারন গরীব এই ছেলেটি খুব মেধাবী। পর্ণা ওকে অনেক বইখাতা দেয় মাঝে মাঝে। অখিল অমিয়কে দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। হয়তো বাবা এখন ঘরে বসে যাওয়ায় খাবার ঠিকমতো জুটছে না ওদের। অখিল অমিয়কে জানায় যে তার বাবা সবজি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছে। মাঝে মাঝে ওকেও বসতে হচ্ছে সবজি নিয়ে। পড়াশোনা কিছুই হচ্ছে না। ছেলেটিকে দেখে অমিয়র মায়া হয়। বাড়ি ফিরে পর্ণাকে বলে অখিলের কথা। পর্ণা বলে, “তুমি ওর হাতে কিছু দিয়ে আসতে পারতে।”
-“দিয়েছি, ৫০০ টাকা। কিন্তু ওই দিয়ে ওদের এতগুলো মানুষের কদিন পেট ভরবে পর্ণা? আর শুধু অখিল তো না আমাদের এই দেশে অসংখ্য মানুষের আজ এই অবস্থা। কতজনকে তুমি দেখতে পারবে? এটাও ঠিক এই মারণ রোগের জন্য লকডাউন ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু বেশি দিন এভাবে চললে মানুষ না খেতে পেয়ে বিদ্রোহ করবে। রাস্তায় বেরোনো এরপরে কঠিন হয়ে যাবে। চুরি-ছিনতাই শুরু হতে বেশী দেরী নেই।” পর্ণা চিন্তিত হয়, ঠিকই বলেছে অমিয়।
তোর্ষা আজ সকাল থেকে একটু বেশি ব্যস্ত। বারবার ইউটিউবে কিছু একটা দেখছে, কিন্তু পর্নাকে দেখতে দিচ্ছে না। ওর আবার সারপ্রাইজ দেবার খুব শখ। হঠাৎ খেয়াল হয় পর্নার, ও বলেছিল মাদার্স ডে তে কিছু একটা করবে ও। ঠিকই তো… আজ মাদার্স ডে। বিকেলে তোর্ষা মাদার্স ডেতে উপহার দেয় সুন্দর একটি কেক নিজে হাতে বানিয়ে। নতুন কিছু তৈরি করার নেশা পেয়ে বসেছে তোর্ষাকে। সব সময় বাড়িতে থাকায় এখন অফুরন্ত সময় সবারই হাতে। কিছু একটা কাজের মধ্যে যদি আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় সেটা করুক ওরা। পর্ণা কখনো বাধা দেয় না ওদের ইচ্ছেকে। এই বয়সে পর্না পড়াশোনার সাথে সাথে বাইরের অনেক কিছু এনজয় করেছে। অথচ এরা এমনিতেই এখনকার পড়াশোনার সিস্টেমে বাইরে মেশার সুযোগ পায় খুব কম। তারপর আজ কতদিন হল স্কুল বন্ধ, বন্ধুদের সাথে মেশার সুযোগ নেই। এরাই বা আর সবসময় কত বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকবে?
চলবে …