সে তবে কে ? [পঞ্চম পর্ব] লেখা – শান্তনু দাস
আগে যা হয়েছে…
স্কটিশচার্চ কলেজের হোস্টেলে প্রায় আমাদের সামনে খুন হয়ে যায় অলীক। পরদিন নাইটগার্ড, হোস্টেলের রাঁধুনি আর প্রধান সন্দেহভাজন হীরা কে জেরা করেও বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না। অলীকের ওয়াকম্যান থেকে বোঝা গেল খুনির নাম সম্ভবত সুমি। অলীকের বান্ধবী সুমিলি এবং বন্ধু রজককে জেরা করার পর হীরার উপর সন্দেহ যেন আরো বাড়লো। কিন্তু হীরা বেপাত্তা। তমলুকে অলীকের বাড়ি যাওয়া হল। সেদিন সন্ধ্যায় এক ছায়ামূর্তির আবির্ভাব এবং এক ধমকিভরা চিঠি। তারপর…
ফাঁদ
-“তাতে কি হয়েছে? তোমার যা ভাল লাগবে তাই করবে ইন্দ্রজিৎ।”
-“আমি এখানে থাকলেও আপনাদের উপর হামলা হবে, না থাকলেও হবে মাসীমা। তাই আজকের দিনটা থেকে কাল সকালে যাব।”
পরের দিন সকালেই কথা হচ্ছিল অলীকের মায়ের সঙ্গে। ইন্দ্রদাকে ঐ একদিনেই আপন মনে হয়েছিল ওনার। বেশ সাবলীল ভাবেই কথা বলছিলেন ইন্দ্রদার সাথে।
সারাটা দিন আর উল্লেখ করার মত তেমন কিছু ঘটে নি। রাত এগারোটা পর্যন্ত দোতলার ঘরে জেগে ছিলাম, তারপর ঘুমিয়ে গেছি। আকাশে চাঁদের আলো থাকা সত্ত্বেও খাবলা খাবলা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে অলীকদের ফ্ল্যাটের সামনেটা। অন্ধকারে ছেয়ে গেছে ঘাসের লন, নিস্তব্ধ ফোয়ারা। গাছগুলো অন্ধকারে ভুতের মত দাঁড়িয়ে আছে। তবে ভোরের আলো ফুটতে আর বেশি দেরি নেই। একতলার ঘরে একটা দরজা খুলে গেল। সাদা কাপড়ের ঘোমটা দেওয়া অলীকের মা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। অন্ধকারের মধ্যে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিলেন। কিছুক্ষণ পর সমীরণবাবুর ঘরের দরজাটা খুলে গেল অদ্ভুত ক্যাচ শব্দ করে। ভেতর থেকে কালো চাদরে আপাদমস্তক আবৃত হয়ে বেরিয়ে এল কেউ একজন। চারপাশে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল সে। এবার খুলে গেল তৃতীয় ঘরের দরজাটাও। দরজার কাছে পর্দাটা দিয়ে উঁকি মারছে প্রমিলা। চোখদুটো ভয়ে তার গোল গোল হয়ে গিয়েছে।
বাইরে ভোরের আলো তখনও ঠিকভাবে ফোটেনি। তবে চাঁদের আলো আবছা হয়ে গেছে। চারপাশে পিন পড়া নিস্তব্ধতা। হঠাৎ একটা আর্ত চিৎকার …।
-“বাঁচাও, বাঁচাও কে আছো… বাঁচাও আমাকে।”
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ইন্দ্রদা অবশ্য তার আগেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে।
-“সীমন্তিনী দেবীর গলা না?”
-“হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি চল, কিছু একটা হয়েছে মনে হচ্ছে।”
সিঁড়ি দিয়ে নিমেষের মধ্যে নিচে একতলায় নেমে এলাম আমি ও ইন্দ্রদা। দেখলাম একতলার তিনটে রুমেরই দরজা খোলা। আমার ত্বকের ভেতর দিয়ে একটা অস্বস্তিকর কনকনে শিহরন বয়ে গেল। দেখলাম সমীরণবাবু ঘরের ভেতর থেকে ছুটতে ছুটতে এসে বলছেন, “কি হয়েছে ইন্দ্রজিৎ বাবু, আমার স্ত্রী কোথায়?”
-“ওনার চিৎকার শুনেই তো আমরা নিচে নেমে এলাম।”
দরজা দিয়ে বাইরে এসে দেখলাম এক ভয়ানক দৃশ্য। একটা আরামকেদারায় অলীকের বয়স্কা মা পড়ে আছেন, চোখদুটো বন্ধ, মাথাটা একদিকে হেলানো। তার পাশে মাটিতে দুজন দুদিকে পড়ে আছে। একদিকে চাকরানী প্রমিলা, চোখদুটো যেন তার ঠেলে বেরিয়ে আসছে, মুখ দিয়ে জিভ বেরিয়ে পড়েছে। আর এক পাশে সীমন্তিনী সেন, মুখের উপর একটা সাদা রুমাল। সমীরণবাবু ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আমাকে ধরে ফেলেছেন।
দেখলাম সীমন্তিনী দেবী এবং অলীকের মায়ের তখনও পালস চলছে। কিন্তু প্রমিলা যে মারা গেছে সেটা বুঝতে এতটুকু দেরি হল না। ঘড়িতে তখন চারটে বেজেছে। আকাশে আস্তে আস্তে ভোরের আলো স্পষ্ট হচ্ছে। সকাল ছটা নাগাদ অলীকের মায়ের জ্ঞান ফিরল। সীমন্তিনী দেবী তখনও সেন্সলেস অবস্থায় বিছানায়। অলীকের বৃদ্ধা মা বিছানাতে উঠে বসলেন। পাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি, ইন্দ্রদা, তমলুক থানার ওসি, একজন ফ্যামিলি ডক্টর। অলীকের মা বলতে শুরু করলেন, “আমি বুড়ি মানুষ বাবা, রাতে ভাল ঘুম হয় না। ভোর ভোরই আমি উঠে পড়ি। তারপর বাইরের ঐ আরামকেদারায় বসে ভোরের সূর্য ওঠা দেখি।”
সমীরণবাবু বললেন, “হ্যাঁ ইন্দ্রজিৎ বাবু, মায়ের ওটা দীর্ঘদিনের অভ্যেস। এত করে বলি অত সকাল সকাল উঠে তুমি কি করবে? অলীকের কথা যদি বা শুনতো, আমাকে তো পাত্তাই দেয় না। প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ মা উঠে পড়ে। তারপর টেবিলের উপর রাখা এক গ্লাস জল খেয়ে বাইরে ঐ আরামকেদারায় গিয়ে বসে থাকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত।”
অলীকের মা একটু খুকখুক করে কেশে আবার বলতে শুরু করলেন, “প্রত্যেকদিনের মতই আমি ঐ আরামকেদারাটায় বসে আছি সামনের দিকে তাকিয়ে, এমন সময় মনে হল পেছনে কেউ আসছে। দেখি কালো চাদরে ঢাকা অবস্থায় কেউ একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে। পেছন দিকে অন্ধকারে ঐ অবস্থায় ওরকম একজন মানুষকে দেখে আমি ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”
তমলুক থানার ওসি বললেন, “আমাকে তো এবার উঠতে হবে ইন্দ্রজিৎবাবু। প্রমিলার ডেডবডিটা পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি এদিকটা সামলে নিয়ে কাইন্ডলি আমাকে একটু জানিয়ে দেবেন ফোনে।”
-“অল রাইট, তবে মনে হয় শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে কারন গলায় একটা কালো দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।”
আরো অনেকক্ষণ পর সীমন্তিনী সেনের জ্ঞান ফিরল। সমীরণবাবু বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এখনো সঠিক কি ঘটেছিল জানা যায়নি। এখানে সীমন্তিনী দেবীর বক্তব্য শুনব বলে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।
-“মা কোথায়? মা ভাল আছে তো?”
-“প্লিজ কুল ইওরসেলফ মিসেস সেন। আপনার মা পাশের ঘরে আসেন, সুস্থই আছেন। আচ্ছা এবার বলুন তো ঠিক কী হয়েছিল?”
-“সে এক ভয়ংকর দৃশ্য, ভাবলেও আমার গা শিউরে উঠছে। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। চাদরমুড়ি দেওয়া কেউ একজন বারান্দায় পায়চারি করছিল। একটা আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জানলার দিকে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারে কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশে সমীরণকে ডাকার চেষ্টা করিনি, কারন তাতে সময় নষ্ট হত অনেক। কিন্তু পরে বুঝলাম, কি ভুলটাই না করেছি। বাইরে বারান্দায় এলাম, দরজা খুললাম । প্রথমেই চোখ পড়ল আরামকেদারার দিকে। মায়ের দেহটা চেয়ারের একপাশে এলিয়ে আছে। পাশে সেই চাদরমুড়ি দেওয়া লোকটা ততক্ষণে একটা সরু নাইলন দড়ি দিয়ে প্রমিলার গলা চেপে ধরেছে। আমাকে দেখেই ছুটে পালিয়ে গেল। দেখেছেন তো আমাদের বাড়ির চারপাশে কোনো পাঁচিল বা বেড়া নেই, তাই পালানোটা খুব সহজ। আমি প্রমিলার নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে দেখলাম নিঃশ্বাস চলছে না। আরামকেদারাটার দিকে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম সেই চাদরমুড়ি দেওয়া মানুষটা তখনও পালায় নি। পেছন থেকে আমার নাকে রুমাল চেপে ধরল। আমি জ্ঞান হারালাম।” একটানা এতগুলো কথা বলে উনি দুবার বেশ জোরে জোরে দম নিলেন।
ইন্দ্রদা বলল, “এই দুরবস্থার জন্য আমি দায়ী ভেবে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কাল রাতে হীরা আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিল। হুমকি চিঠিতে লেখা ছিল, এখান থেকে চলে না গেলে কিছু একটা ঘটাবে, এই দেখুন।” ইন্দ্রদা লেখাটা বের করে সবাইকে দেখাল।
ইন্দ্রদা বলল, “সমীরণবাবু আজ এখনই আমরা চলে যাচ্ছি। তবে একটা কথা বলে রাখি, খুনিকে আমরা ধরবই। আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন। আমি তমলুক থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে আপনাদের সিকিউরিটির ব্যবস্থা করছি। আপনার মায়ের সঙ্গে একটু পারসোনালি কথা বলতে চাই।”
শুধু আমি আর ইন্দ্রদা অলীকের মায়ের কাছে এলাম।
-“আমরা আসছি মাসীমা। আপনার ভালোর জন্যই বলছি, উইলটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি করে নেওয়ায় ভালো।”
-“ঠিকই তো বাবা। আমি আজ আছি, কাল নেই। আজই দেখি উকিল বাবুকে ফোন করব। কাল সকালের মধ্যে সব ব্যবস্থা করেই আমার শান্তি।”
আমরা ফিরে যাবার জন্য তৈরি হলাম। সিমেন্টের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ইন্দ্রদা একজায়গায় থমকে দাঁড়াল। দেখলাম ঝাউগাছগুলোর একটার নিচে মাঝারি সাইজের একটা শিশি পড়ে রয়েছে। আমি ঝুঁকে হাত দিয়ে তুলতে যেতেই ইন্দ্রদা আমাকে বাধা দিল। পকেট থেকে রুমাল বের করে ইন্দ্রদা শিশিটা রুমালে মুড়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিল।
কোলকাতায় এসে ইন্দ্রদাকে দেখলাম বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। মনে হয় সবকিছু জানতে পেরে গেছে। দুপুরে কালীচরণ সমাদ্দারের ফোন এল“হ্যালো, ইন্দ্রজিৎ সান্যাল বলছি।”
-“শুনলাম কোলকাতায় ফিরে এসেছেন। কোনো তথ্য পাওয়া গেল?”
-“হ্যাঁ। আপনার সাথে কথা ছিল। বিকেলে আপনাদের বাড়ি যাব, রজকের সাথে একটু দরকার আছে।”
-“আসুন না। হ্যাঁ, শুনুন ভালো খবর, হীরা ধরা পড়েছে, লক আপে রেখেছি।”
-“জানতাম।”
-“আপনি জানতেন?”
-“মানে বলতে চাইছি কতদিন আর এইভাবে পালিয়ে বেড়াবে।”
-“শুনুন ইন্দ্রজিৎ বাবু, প্রথমে কিছু বলছিল না। দু ঘা লাগাতেই বলে ফেলল যে রিভলবারটা ওরই। খুন করতেই হীরা হোস্টেলে গিয়েছিল। কিন্তু হীরা বলছে যে, সে খুন করে নি।”
-“হুম। আপনি একটা কাজ করুন, সুমিলির মোবাইলে একটা কল করে বলুন, বিকেলে থানায় দেখা করতে। ওর সাথে জরুরী কথা আছে।”
ফোনটা রেখে ইন্দ্রদা আমাকে বলল, “দুপুরে ঘুমিয়ে নে, আজ রাত জাগার প্ল্যান আছে।”
ইন্দ্রদা আমার মুখ থেকে কেন প্রশ্নটা আশা করছিল। আমি জানতাম ওকে এখন কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলবে না। তাই ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম। যাইহোক দুপুরে ঘণ্টাখানেক ভালই ঘুম দিলাম। বিকেলে সময়মত ইনস্পেক্টর সমাদ্দারের বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
উনি একটা নতুন খবর দিলেন। সুমিলি বাবা মায়ের সাথে তমলুকে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেছে। উনি অবশ্য ফোনে সুমিলিরা যেখানে আছে তার ঠিকানা জেনে নিয়েছেন। ইন্দ্রদা ঠিকানাটা নোট করে পাশের ঘরে একা রজকের সঙ্গে কিছু কথা বলল। প্রায় কুড়ি মিনিট পর ইন্দ্রদা বেরিয়ে এসে সমাদ্দারবাবুকে বলল, “আজ রাতেই অলীকদের বাড়ি যেতে হবে, ওখানেই খুনি আসবে।”
-“বলেন কি মশাই? আমি তো এখনো অথৈ জলে।”
-“মোটামুটি রাত আড়াইতে নাগাদ পৌছাতে হবে আমাদের। আমি কিন্তু আগেই চলে যাব। আপনি সৌমাভকে নিয়ে ঐ টাইমে পৌঁছে যাবেন।”
-“কিন্তু…”
-“আপনাদের কাজ হল ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা। সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলে ফলো করবেন। আমি ঠিক সময়েই পৌঁছে যাব। একটা সুন্দর নাটকের প্ল্যান আছে। বেস্ট অফ লাক।”
সন্ধ্যে সাতটা। অলীকদের বাড়িতে দেওয়াল ঘড়ির সাতটা ঘণ্টা বাজা শেষ হতে না হতেই কলিংবেল বাজল। সীমন্তিনী সেন দরজা খুলে দিলেন।
-“এই সময়ে তুমি?”
-“হ্যাঁ, একটু দরকারেই… ভেতরে আসতে পারি কি?”
-“এসো, কিন্তু এত দূর থেকে…”
-“বৌদি, অলীকের কাছে আমার একটা ডায়রি রয়ে গেছে, সেটা হোস্টেলে নেই। এখানে হয়তো থাকতে পারে তাই এলাম, খুবই জরুরী।”
-“কেউ কি বাড়ি নেই বৌদি?”
-“না। তোমার দাদা এখনো বাড়ি আসে নি, আর মা ঐ ঘরে শুয়ে পড়েছেন। ভোর ভোর ওঠেন তো তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন।”
-“আমাকে একটু জল দেবেন বৌদি?”
-“বোসো, সরবত করে আনছি।”
রজক সমাদ্দার এবার সোফা ছেড়ে উঠে পড়ে অলীকের মায়ের ঘরের দিকে মুখ বাড়াল। সীমন্তিনী সেন জল খাবার নিয়ে আসার আগেই আবার সোফায় এসে বসে টেবিলের উপর পড়ে থাকা একটা ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে লাগল। সীমন্তিনী সেন এলেন।
-“তুমি খাও। আমি দোতলার পড়ার ঘরে দেখে আসি ডায়রিটা আছে কিনা? কি রঙের ডায়রি?”
-“লাল রঙের, ওপরে আমার নাম লেখা আছে।”
বৌদি চলে যেতেই রজক সমাদ্দারের চোখের চাহনিটা কেমন রহস্যময় হতে লাগল। সে সন্তর্পণে অলীকের মায়ের ঘরে পা টিপে টিপে ঢুকে পড়ল। উনি তখন খাটে নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শুয়ে আছেন। পাশে টেবিলে এক গ্লাস জল রাখা। দুপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে রজক একটা সাদা বড়ি গ্লাসে মিশিয়ে দিল। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ওদিকে সীমন্তিনী সেন অলীকের ঘরে কোনো ডায়রি না পেয়ে নিচে নেমে এলেন।
-“রজক, রজক… ভাই রজক, কিছুই তো পেলাম না। আমার মনে হয়… রজক, রজক কোথায় গেলে?”
রজকের আকস্মিক আগমন এবং রহস্যজনক পলায়ন সীমন্তিনী সেনকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিল। ওদিকে ঘড়িতে তখন রাত দশটা। তমলুকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সুমিলির বাবা মা, সুমিলি ও আরও কয়েকজন গল্প করছিল। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। সুমিলির বাবা দরজা খুললেন।
-“কে আপনি? আপনাকে তো ঠিক… ”
গম্ভীর গলায় সিগারেট মুখে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আগন্তুক বলল, “আমাকে আপনি চিনবেন না, দরকারটা সুমিলির সাথে।”
-“কে বলুন তো আপনি, এত রাতে…”
-“সুমিলির সাথে কথা বলব… মে আই কাম ইন?”
আমি আর ইনস্পেকটর কালীচরণ সমাদ্দার অলীকদের ফ্ল্যাটের কাছে পৌঁছলাম ঠিক দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিটে। চারদিক অন্ধকার নিস্তব্ধ। শহরের উপর লাইটপোস্টের আলোগুলো কেমন টিমটিম করছে। বন্ধ রেস্তোরা ও দোকানগুলো চকচক করছে চাঁদের আলোতে। অলীকদের বাড়ির ঝাউগাছের চারপাশে অন্ধকার আরও বেশি করে জমাট বেঁধেছে। আমরা একটা ঝাউগাছের আড়ালে এসে দাঁড়ালাম। ইন্দ্রদা এখন কোথায় কে জানে? ইনস্পেকটর বারবার ঘড়ি দেখছেন। দেখতে দেখতে তিনটে বাজল। আমার খুব ঘুম আসছিল। ইনস্পেকটর হাই তুলতে তুলতে বললেন, “হায়, কোথায় তোমার খুনি? কোথায় বা তোমার ইন্দ্রদা? কোনো বিপদ হল না তো আবার?”
ইন্সপেক্টরের মুখ দেখে মনে হল এত রাতে এই ঝোপঝাড়ে ইন্দ্রদার কথায় আসতে হয়েছে বলে খুব খুশি হন নি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে পা কনকন করছিল বলে আমরা রুমাল পেতে মাটিতে বসে রইলাম।
আমি বলে উঠলাম, “কই চারিদিকে তো কাউকেই দেখছি না।”
দূরে অতর্কিতে জ্যোৎস্নার নির্জনতর সিমেন্টের রাস্তার ওপর দিয়ে একটা কালো বেড়াল মিয়াঁই ম্যাও করতে করতে চলে গেল। হঠাৎ ইন্সপেক্টরের মোবাইল বেজে উঠল। ইন্দ্রদা ফোন করেছে।