পারুল দিদি ।। লেখা : সুমা আইচ হাজরা
হঠাৎ করে তোমার কথা মনে পড়ে গেল,
পারুল দিদি,
কী করে সব বদলে দিয়েছিলে তুমি,
আমার জীবনের রেখা,
তোমার সীমান্ত রেখা ধরে।
আমার ছেলে বেলার সবচেয়ে কাছের সাথী ছিলে তুমি।
কোঁকড়ানো কালো চুলের রাশিতে,
আর টানা অথচ মায়াবী চোখের তারায়,
তুমি ছিলে আমার ভালবাসার জীবন্ত প্রতিমা।
তোমাকে ঘিরে কত শত ব্যাকুলতা জাগত,
মনের অসীম অতলে,
তোমার একটু খানি হাসির তরে আমার
বিনিদ্র রজনী কাটত!
আমার হৃদয়ের গভীরে কি জানি কী বাজত অহরহ,
শব্দহীন নির্বাক নিস্তব্ধ সংগীতে।
এ যেন এক অপরূপ প্রেম তা কেবল
তোমারই তরে, যুগে যুগে উত্তাল।
তুমি ছিলে আমার চেয়ে বড়,
তাই সমাজের বিধি মেনে তোমাকে চলে
যেতে হয়, শ্বশুর বাড়িতে।
আমি তখন একা, তোমার বিরহে দুর্বল একাকার।
তুমি জানতেও পারলে না,
আমার মনের সাঁঝবেলায়,
শুধু তোমাকে নিয়েই
এঁকেছিলাম, মায়াবী মনের জলছবি খানি।
গাঁ ছেড়ে চললাম বিদেশে কর্ম উদ্দেশ্যে।
তুমি ফিকে হলে সময়ের অনন্ত কালস্রোতে।
মাঝখানে কেটে গেল বেশ কয়েক বছর।
তারপর হঠাৎ একদিন ফিরে আসি নিজ বাসে।
খোঁজ করি তোমার, স্বভাব সুলভ ভাবেই।
কিংবা বুকের ভিতরে চাপা রয়েছে যে ভালোবাসা,
“তারে খুঁজিবার তরে অনিবার হেরি,
নানা ছলনায়।”
পারুলদি কে দেখলাম,অচেনা রূপে –
যেন অস্তমিত সূর্যের পড়ন্ত সায়াহ্নের সাজে।
পরণে আটপৌরে সাদা শাড়ি,
বৈধব্য ঘিরেছে তার অতীতের অপার সৌন্দর্যে।
আমি বারে বারে ফিরে যাই অসীম অতীতে,
আমার হৃদয়ের অবশিষ্ট স্মৃতিসুধার দেশে।
ক্ষণিকের নীরবতা ভেঙ্গে,
প্রশ্ন করলেম “কি ভাবছ এবার, এই ভাবেই
শেষ করবে নিজেকে?”
পারুলদি আমার মুখের পানে অবাক হয়ে
তাকিয়ে বলল “কি আর করব, আমার মতো
মেয়েদের সবাই তো বোঝাই ভাবে, তাই না!”
আমি প্রতিবাদ করে বলি, আমার চিরস্মৃতিময়ী
ধ্রুবতারার কাছে,
“তুমি আমার কাছে থাকবে।
বিধবা বিবাহ স্বীকৃতি পেয়েছে সমাজে।
আমি তোমাকে নববধূ বেশে নিয়ে যাব,
আমার জীবন মাঝে।
যেখানে পুরাতন প্রেম সাজবে নিত্য নতুন সাজে।
যেখানে অনাদি কালের প্রেম মধুর মিলনে
নিখিলের মাঝে, সুখের সাগরে ভাসবে।
আমাদের একটি মাত্র পুরাতন প্রেম মিলিয়ে দেবে…
হাজার হাজার প্রাণের প্রেমের গীতি।”
পারুলদির নতমস্তক, আমাকে সায় দিল…
আমিও মুক্ত হলাম, অনাদি কালের নিয়মের
শৃঙ্খল হতে,
দুটি হৃদয়ের বিরহবিধুর নয়ন জলের অবসানে
রচিত হবে, নতুন প্রেমের ইতিকথা,
চিরন্তন মিলন মধুর লাজে।