লেখা: সূর্যতনয় অধিকারী
ছবি: কৌশিক দাশ
এ্যাসাইলামের ছোট্ট একটা ঘর,
ছাদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছে ছেলেটা-
“কালো রাতি গেল ঘুচে,.
আলো তারে দিল মুছে। ”
বয়স হবে ছয়, কিম্বা সাত।
চুরি গেছে তার শৈশব,
তমসাচ্ছন্ন সেই শৈশবকে,
তিমির-রাত্রির হাতেই তুলে দিয়েছিল তার অভিভাবক। ঠেলে দিয়েছিল আরও অন্ধকারের দিকে।
ছিল না শৈশবের সেই উশকোখুশকো চুলের দুরন্তপনা,
যার দুটো ডাগর খয়েরি রঙের চোখে,
লুকিয়ে থাকতো অনন্ত জিজ্ঞাসা আর অফুরান কৌতুহল!
তার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে পায়ে দলে-
স্কুল আর টিউশানের রুটিনের মায়াজালে বন্দী হয়েছে তার শৈশব ।
ছুটির দিনেও শৈশব বন্দী থেকেছে,
আঁকার ক্লাসে কিম্বা যোগার মহড়ায়।
বিরক্তিকর রুটিন, হোমওয়ার্কের নামে
শৈশবকে নিংড়ে নেওয়ার যে ব্যবস্থাপনা,
তার শিকার ছোট ছেলেটি, যার ঠিকানা এখন এ্যাসাইলামের ছোট্ট একটা ঘর।
টপার হওয়ার দৌড়ে, হোমওয়ার্ক নামক বিভীষিকা,
কেড়ে নিয়েছিল তার বিকেলের বিশ্রাম!
স্নেহহীন শিক্ষাগ্রহণের ধকল, সহ্য করতে পারেনি ঐ একরত্তি ছেলেটা।
হালকা হওয়ার দুষ্টুমি, হাসিঠাট্টার পরিমন্ডল আজ মৃত-
রুটিন আর হোমওয়ার্কের আতঙ্কে!
টিভি সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে থাকা মাকে,
আজ যদি তার সন্তান বলে-
“তুমি আমার শৈশব নষ্ট করেছ;
আমি তোমার বার্ধক্যের বারোটা বাজিয়ে দেবো!”
কি উত্তর দিবে প্রাইভেট টিউটরে ভরসা রাখা মা?
যদি মা বাবা কিছুটা সময় খুনসুটি করে কাটাত ছেলেটার সাথে,
যদি ছেলের মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে…
এক সাথে সুর করে পড়তে পারত –
“আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে….।”
তাহলে বোধহয় আজ এ্যাসাইলামের ঐ ছোট্ট ঘরে,
যার জীবন থেকে মুছে গেছে আলো,
তাকে বিড়বিড় করে বলতে হ’ত না-
“কালো রাতি গেল ঘুচে,
আলো তারে দিল মুছে।”
Asylume Soisob | Surytanay Adhikary | Kaushik Das | https://pandulipi.net | Bengali | Bengali Poem |