হলাহল

আবার সেই রোববার। দুহপ্তার টানা ব্যস্ততার পর একটু ফাঁকা ছিলাম সকাল থেকে। পাশের রুমে কেউ না থাকায় আড্ডার ও বালাই নেই। এক বন্ধুর প্ররোচনায় হাতে এসেছে ওরহান পামুকের ‘The Strangeness in My Mind’। সেটাই উল্টে-পাল্টে দেখতে দেখতে কখন আনমনে চুপ করে থাকা পাখাটির দিকে চেয়ে ল্যাদ খেতে শুরু করেছি তা আর খেয়াল নেই। তবে পুরোপুরি যে ল্যাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম তা নয়। হয়তো জাবর কাটছিলাম দ্রুত কেটে যাওয়া শেষ দুসপ্তাহের ঘটনা গুলিকে নিয়ে। ওই ঘরে একা থাকলে মস্তিষ্কের কিসব অংশ জেগে ওঠে, তাই হচ্ছিল হয়তো।

শেষ দুটো সপ্তাহ…

বছর তিনেকের ও বেশি সময় পর এক বান্ধবীর সাথে দেখা। প্রায় ১২ বছরের বন্ধুত্বের সেলিব্রেশন চললো আলো-ঝলমলে পার্কস্ট্রীটের নামজাদা রেঁস্তোবার এ। ভোররাতে ফেরার সময় গালিফ এর কাছে হঠাৎ শুনতে পেলাম ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা কোন এক শিশুর কান্নার শব্দ। মানুষ এভাবেও দিনযাপন করে! হয়তো সমুদ্র মন্থনে প্রাপ্ত হলাহলের পুরোটা মহাদেব গিলতে পারেননি, কিছুটা ভাগ করে দিয়েছিলেন সমাজের এই শ্রেণীর পূর্বপুরুষদের, যারা আজও বংশানুক্রমে সেই বিষের ভাগিদারী পালন করে যাচ্ছে ফুটপাথে দিন যাপন করে।

জরুরি কাজ নিয়ে মাঝে দিন চারেকের জন্য আবার বাড়ি যেতে হলো। সেখানে চা বাগানের নিঝুমতা আর ফ্যাক্টরি থেকে সেকেন্ড ফ্লাশ সিটিসি চায়ের মনমাতানো সুবাস। বেলার দিকে যখন খুব কাছের এক বন্ধুর সাথে একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, অতর্কিতে ওর উপর এসে হামলা চালালো এক আদিবাসী ছোকরা, শুধুমাত্র ৬০ টাকার মোবাইল রিচার্জ ফোনে ডেলিভারড হতে আধঘন্টা সময় লেগেছিল বলে। না মহাদেব, হলাহলের অনেকটাই আপনি গিলতে পারেননি। আপনার সেই বিষ এখানে রূপ নিয়েছে অশিক্ষার।

শিলিগুড়ি থেকে বাগডোগরা যাচ্ছি। সিটি সেন্টারটা সবে পার হয়েছে। তিনটে বাইকে তিনজোড়া যুবক সজোরে পেরিয়ে গেল। কিছুদূর এগিয়ে নর্থবেঙ্গল উনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের কাছে দেখি কিছু লোক জটলা পাকিয়েছে। সেই তিনটে বাইকের দুটো পাশে দাঁড়িয়ে। রাস্তায় খানিকটা রক্ত। কি হয়েছে জানতে চাওয়ায় একজন বললেন একটা বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ল্যাম্পপোস্ট ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে খালে গিয়ে পড়েছে। মহাদেব, আপনার বিষ এখানে রক্তে মিশেছে অপরিণত ঔদ্ধত্য রূপে।

খড়দহে ফিরে এসেছি। এই গত শুক্কুরবার মাঝ রাতে বেশ কোলাহল শুনে দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি, পাশের বাড়ির ভাড়াটে ঘরে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা অনবরত বমি ও পেট ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন। মোবাইল দেখলাম, দেড়টা মতো বাজে। পাড়ার দুজন ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছে দেখে, ওদের সাথে চললাম। বলরাম হসপিটালের পাশেই ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাটে নামকরা জেনারেল ফিজিশিয়ান। ডাক্তারবাবু সব শুনে বেশ ধীর গলায় বললেন, “I do have some etiquette. যার তার বাড়িতে আমি রোগী দেখতে যাইনা।” মহাদেব, আপনার হলাহল কিন্তু এতদিনে সীজনড। এবারে সে বিষ ছদ্মবেশে জ্ঞান এর রূপ নিয়েছে দেখছি।

ল্যাদগ্রস্ত তন্দ্রাটা ভাঙলো সামনে ল্যাপটপে চলতে থাকা ক্রিকেট ধারাভাষ্যের শব্দে। ভারতীয় ক্রিকেট দল চা-পানে যাচ্ছে। এক কাপ চা আমার ও খুব দরকার….

লেখাঃ সুপ্রতিম

ছবিঃ কুণাল

Holahol   |     Supratim     |    Kunal   |     www.pandulipi.net     |   Abstract Concepts.  |   Emotional    |    Story     |    Bengali

Author: admin_plipi