যন্ত্রণার ভিন্নরূপ

 

 

 

মা : “আজ আর কলেজে গিয়ে লাভ নেই মামন। গরম জলে স্নান সেরে নে। আমি পরে হট্ ব্যাগে গরম জল দিচ্ছি, সেঁক দিলে আরাম পাবি।”

মামনের মায়ের মতো প্রায় একই রকম কথা সুমির মাও বলেন, বিশেষ সেই দিনগুলোতে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রত্যেক মেয়েকেই যখন এমন অস্বাভাবিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়, ঠিক তখন মায়েদের পরম মমতা মাখা স্পর্শ ওই অসহনীয় যন্ত্রণায় স্নেহের প্রলেপ দেয়।

 

ঠিক সেইসব কষ্টকর দিনগুলোই আবার অন্য রূপ পায় বছর পাঁচেক পর…

শাশুড়িমা : “মেয়ের ন্যাকামি দেখে আর বাঁচি না বাপু। এমন একটা ভাব, যেন আমাদের আর কোনও দিন এসব হয়নি! প্রত্যেক মাসে এই এক নাটক। বলি, শুয়ে থাকলে ঘরের কাজগুলো কে সারবে? উঠে কাজ সব সেরে তোমার যতক্ষণ মন চায় শুয়ে বসে আরাম করো।”

 

দাঁতে দাঁত চেপে, প্রচন্ড ব্যাথা শরীরে ও মনে নিয়েই ঘরের কাজ সারে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন একদল মামন-রা, আর মনে মনে ভাবে… “মা, মা-ই হয়। শাশুড়ি কোনদিনই নিজের মা হয়ে উঠতে পারে না।”

 

অন্যদিকে, এই রকম দিনগুলোতে কিছু শাশুড়িমা তাঁদের বউমাদের এমন কথাও বলে থাকেন, “এই ক’টা দিন একদম রান্নাঘর মুখো হতে হবে না তোকে। ঠাণ্ডা জল একদম নয়, উষ্ণ গরম জল খাবি। আর হ্যাঁ, হট্ ব্যাগের সেঁক নে, কিছুটা আরাম পাবি। সংসারের কথা ভাবতে হবে না, আমি আছি তো- সামলে নেব। আমিও যে তোর মা নাকি! আর তুইও যে আমার মেয়ে।”

কথাগুলো শুনেই যেন যন্ত্রণাটা অনেকটাই প্রশমিত হয়ে যায় সুমির। হ্যাঁ, সুমির শাশুড়িমা এমনই। সব শাশুড়ি মা হতে পারেন না হয়তো, কিন্তু কিছু শাশুড়িমা মায়েরই প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকেন। কথাগুলো আপন মনে ভাবতে ভাবতে নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবতী মনে হয় সুমির।

 

সর্বোপরি এটাই বলা-সব শাশুড়িমা, সুমির শাশুড়িমায়ের মত সমব্যথী, মমতাময়ী হয়ে উঠুন। তবে আর কোনও মামন অযথা শাশুড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে না, “শাশুড়ি কোনও দিনই মা হতে পারে না।” বদলে সব মামন ও সুমিদের মুখে একসাথে একটা কথাই উচ্চারিত হোক, “আমার শাশুড়ি মায়ের মতো শাশুড়ি পেয়ে আমি গর্বিত।”

শাশুড়ি-বৌ সম্পর্ক মানেই এক চাপা আক্রোশ, প্রতিহিংসা- এই ধারণা বদলাক, পরিবর্তে একটি সুন্দর ‘মা-মেয়ে’ সম্পর্ক গড়ে উঠুক। আজকে একবিংশ শতকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক নারীদিবসে এটাই কাম্য।

 

 

 

 

কলমে – রাজনন্দিনী

ছবি – নীপাঞ্জলি

Author: admin_plipi