হারাধন একটু জিরিয়ে নিতে বসল বড় বট গাছটার নীচে। এবার ছেঁড়া ব্যাগ থেকে বের হবে চিঁড়ে আর গুড়। সাথে রং চটা সবুজ প্লাস্টিকের বোতল ভরা জল। হারাধনের বয়স বাষট্টি, দেখে মনে হয় বাহাত্তর। চোয়াল ভাঙা, পরণে ময়লা ফতুয়া আর ধুতি। সকাল থেকে এই দুপুর পর্যন্ত ঘুরে শুধু একটা কাজ পেল সে। দিন দিন কমে যাচ্ছে কাজ। গলার জোরও মিইয়ে আসছে। তার ওপর দৃষ্টি হচ্ছে ঝাপসা। একসময় দিনে কুড়িটা কাজও করেছে সে। বাড়ির বউরা অপেক্ষায় থাকত তার জন্যে। হারাধন হেঁকে উঠত, ‘শিলপাটা ধার করাবেন গো ও ও ও … শিলপাটা আ আ আ …।’ এ বাড়ি-সে বাড়ি থেকে লোক রাস্তায় ছুটে আসত। কোথাও হয়ত মিলে যেত মুড়ি-বাতাসা। চোখে চশমা পড়ে শিলপাটা ধুয়ে নিয়ে বসে যেত সে ছেনি আর হাতুড়ি নিয়ে। পাথরের গায়ে খোদাই হত শিল্প। আমিষ পাটার ওপরের অর্ধবৃত্তে আঁকা হত মাছের ছবি আর নিরামিষে হত ফুল।
দেখতে দেখতে মা মড়া ছোট বিশু এখন তরতাজা যুবক। বাপ-বেটার সংসারে তবু অনটন রয়ে গেছে। গতকাল রাতে খেতে বসে বিশু বলছিল আজ থেকে একটা নতুন কাজে ঢুকছে। কোম্পানির মাল সাইকেলে চেপে, দোকানে দোকানে পৌঁছে দিতে হবে। আর যদি অর্ডার বাড়াতে পারে, তবে উপরি কমিশন। এবার যদি হারাধন একটু বিশ্রাম পায়। এখন রাত প্রায় আটটা। হারাধন শুয়ে আছে ছাপড়া ঘরটায়। বিশু এখনও ফেরেনি। কাশিটা কিছুতেই থামছে না। বড় দূর্বল লাগছে শরীরটা। ভাত চড়ানোর মত শক্তিটুকুও অবশেষ নেই। এমন সময় বাইরে সাইকেলের ঘণ্টি। ঐ বোধহয় বিশু এল। হ্যাঁ, ঠিকই। ঘরে ঢুকে বড় ব্যাগটা রেখে, গেল হাত-পা ধুতে। ও বোধহয় ভেবেছে বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে। হারাধন কাঁপা কাঁপা হাতে চৌকির পাশে রাখা বিশুর বড় ব্যাগটার দিকে হাত বাড়ায়। হাতে ঠেকল কিছু প্লাস্টিকের পাউচ। উল্টো পাল্টা নেশার কিছু নয়ত? ছেলেটা কিছু লুকোচ্ছে না তো! গতকাল এতবার জিজ্ঞেস করতেও বলল না কিসের কারবার করবে ও। রাস্তার আলোটা বাঁশের জানলা ছুঁয়ে চলে এসেছে বিছানার পাশে। সেই আলোয় হারাধন স্পষ্ট দেখল তার হাতের মুঠোয় ধরা একটা গুঁড়ো মশলার প্যাকেট।
লেখা: প্রদীপ্তময়
ছবি: অভিব্রত
Obhijojan | Pradiptomoy | Abhibrata | www.pandulipi.net | Bengali | Stories