বই নিয়ে গড়ে ওঠা বইপাড়া। সারাদিন ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত অথচ কি উদ্দীপিত এই বইপাড়া। ভেসে আসে কত কথা চারিদিক থেকে – এদিকে আসুন, কি চাই?
কি চাই আমি? পারতাম যদি পুরো বইপাড়াটাই তো আমার চাই।
আস্তে আস্তে শীতে শীতল বইপাড়া ঘুম দিয়েছে। দোকানিরা বিদায় নিয়েছে। যে দু চার জন আছেন তারাও বাড়ি ফিরতি। জটলা করে সারাদিনের বিকি-কিনির ফিরিস্তি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। একটি ক্রেতাও নেই। ওদের বলতে শুনি আজকাল লোকে আর তেমন আসে না এদিকে। আগের তুলনায় নাকি বিক্রি অনেক কমেছে। প্রেসিডেন্সির সামনে কাঠের দোকানটার কাঠগুলোও শীত এ জমে কাঠ হয়ে গেছে। সকাল বেলাকার সেই ধর ধর শব্দ নেই। মনে হয় যেন বইপাড়াও বলছে ঘন্টা খানেক জিরিয়ে নি। ওরা আবার জাগবে। কাল সকাল থেকে নব জীবন, নব উদ্যমে আবার সারাদিনের কাল- চক্রে।
দূর থেকে কিসের শব্দ শোনা যায়! রাতের নিস্তব্ধতা চিরে দু একটা হলুদ ট্যাক্সি হুই হুই করে ছুটে যায়। ওই প্রসিডেন্সির সামনের ম্যানহোলের থেকে বড় বড় ইদুঁর বের হয়ে দিনে ফেলে যাওয়া কারো উচ্ছিষ্ট গুলি চিঁ চ্যা করে স্বভাব সুলভ ভাবাবেগ মিশ্রিত আনন্দে ভাগ করে, ঝগড়া না করে কিনা জানিনা, তবে খেয়েই চলেছে।
বইয়ের দোকান, পাকা বাড়ি বা দোকানের অস্থায়ী বাসিন্দা ওই বই গুলো এখন সবাই ঘুমে অচৈতন্য। বই পাড়ায় কত প্রাণ – বইয়ের প্রাণের শব্দ থেকেই হয়তো বইপাড়ায় প্রাণ সঞ্চার হয়। ওখানকার বাসিন্দা প্রতিটি বই এক একটি জৈবনিক প্রতিবিম্ব। এদের প্রাণের স্পন্দনই কি বইপাড়ায় প্রাণের সঞ্চার করে?
ওদের জিগেস করো – ওরা বলবে। বড়ো গলায় বলতে পারে – আজ্ঞে হ্যা ! এই বইপাড়া থেকে বই পড়েই তো ওই লোকটি আজ বিদ্যাসাগর কলেজের প্রিন্সিপাল। অথবা ওই যে ওই ভদ্রলোকটি উনিও আমার এই বইপড়ার বই পরেই আজ যাদবপুর বিদ্যাপীঠ এর হেডমাস্টার আর ওই মহিলা টি- স্কুলের পরিদর্শক। ওই ছেলেটি আজ সকালে আই আই টি তে ভর্তি হতে যাচ্ছে। ও তো বছর দুয়েক আমার বইপাড়ায় এসেছে নিয়মিত। কত বই নিলো। আজ বড়ো ভালো লাগছে ওর মুখের হাসি টা দেখে।
আচ্ছা, তুমি এখন কি করো?
লেখাঃ ব্রহ্মানন্দ চক্রবর্তী
ছবিঃ জয়দেব ভট্টাচার্য্য
Praner Boipara | Bramhananda | Jaydeb | www.pandulipi.net | Emotional | Historical | Story | Bengali