সেদিন তোমার ২২
লেখা ও ছবি – সুমন ধর
এক পুরুষের রোপন করে দেওয়া গর্ভবীজ,
তুমি নয় মাস ধরে বহু যত্নে পালন করে,
সরকারী বিনি পয়সার হাসপাতালে আলোআঁধারি সূতিকাগৃহে,
আমায় প্রকাশ করলে।
“ছেলে হয়েছে” এই সংবাদ আসা মাত্র আনন্দের হুল্লোড় থেমে যেতে লাগল মুহুর্তে,
পরিনত হতে লাগল চরম বিরক্তিতে।
তুমি আধো অচেতন চোখে বোঝার চেষ্টা করছিলে-
ছেলে হল তবু সবার চোখে এত কুন্ঠা কেন?
মা গো! আমি যে নুলো।
পা দুখানি থেকেও নেই।
আমি জানি মা তোমার খুব কান্না পাচ্ছে, দুমড়িয়ে উঠছে বুকের ভিতরটা,
আমার উপর সৃষ্টি হয়েছে অব্যক্ত অভিমান।
কিন্তু মা-
আমায় মায়াময় মুখটা দেখে পারোনি আমায় অচ্ছেদ্দা করতে।
সেদিন তোমার ২৫ আর ২৭।
আবারো তুমি ওই আলো আঁধারিতে।
নাঃ এবার তুমি জিতেছো।
আবার ছেলে, না মা ভুল বললাম সুস্থ ছেলে।
তোমার যোগ্য নিরাপত্তা।
ওই পুরুষের দেওয়া গর্ভবীজ এবার বিফলে যায়নি।
এখন তুমি ৩২, আমি ১০ আর ওরা একজন ৭ আর আরেকজন ৫।
সাত আর পাঁচেরা স্কুলে যায়, খেলতে যায়, হিসেব কষতে পারে,
বর্তমানকে উপলব্ধি করতে পারে।
কিন্তু আমি? নুলো!
আমার কোন বর্তমান নেই, ভবিষ্যৎ নেই, তাই শিক্ষার দরকার নেই।
আমিও শিখি-
আমার পূর্বজরা শিখিয়ে দেয় কেমন করে পরনির্ভরশীল হয়ে চলতে হয়।
আর পাওনা খাওয়াতে, স্নান করাতে এসে তোমার চেখের জল আর মিথ্যে স্তোক।
আমি এখন ৩২, তুমি ৫৪।
তোমার গর্ভবীজ বহন করা লোকটা আর নেই।
সমাজের চোখে তুমি এখন বিধবা।
সেই সাত আর পাঁচেরা এখন ২৭ আর ২৫।
ওদের ভবিষ্যৎ হয়েছে।
তাই তুমি অতীত হয়ে গেছো মা।
আমি নুলো – তাই আমার বর্তমান এখনো অতীতেই দাঁড়িয়ে।
দুই ভাই আমার, একজন মুদি আরেক জন পাইকার।
ওরা স্বনির্ভর।
আমিও তো স্বনির্ভর।
আমারো পরিচয় তৈরী হয়েছে – ভিখিরি।
আর এই পরিচয়টা আমায় অতীত থেকে ভবিষ্যতের আলো দেখিয়েছে।
কিন্তু মাগো?
তুমি তো হতে পারতে মুদির মা, পাইকারের মা।
তুমি রয়ে গেলে ভিখারীর মা।
মা?
চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আজ পুব পাড়ায় যাব ভিক্ষা করতে।
পুব পাড়ায় বিরাট বড় মেলা বসেছে না?
তুমি না মেলা দেখতে বড্ড ভালোবাসো?
এম.এল.এ-র দেওয়া হাতগাড়িটায় আমি আর আমার গর্ভধারিণী মা।
আজ পুব পাড়া, কাল…… জানিনা।
নুলো আমি আজ তোমার রামায়ণের শ্রবন কুমার।
এই ভাবেই পেরিয়ে যাই ৩২…৪২….৫২………….
আর তুমি ৫৪……৬৪……৭৪……
বাকিটা ভগবান।