বুড়োদাদুর গল্পের ঝুলি ।। লেখা : রিয়া ভট্টাচার্য
বুড়ো দাদু ছেলেপিলেদের গল্প শোনাতে বসেন প্রতিসন্ধ্যায়। ঠিক যখন মামণির শঙ্খয় ফুঁ পড়ে, মিষ্টিদিদু নিজের ঘরে সুর করে রামায়ণ পাঠ করেন, কালবোশেখী ঝড়ে ঝুরঝুর ঝরে পড়ে বড়ো গাছটার পাতা… ঠিক সেই সময়, বুড়োদাদুকে ঘিরে বসে মৌটুসী ও তার বন্ধুরা।
মহামারীর জন্য এখন তালা ঝুলেছে ইস্কুলে। সকালে অনলাইন ক্লাস করে বিকেল বিকেল পড়া সেরে ফেলে তারা, গল্প শুনতে হবে যে! ভূত – পিশাচ – দত্যিদানো আর কত গল্প যে জমানো রয়েছে বুড়োদাদুর ঝুলিতে, কে জানে!
প্রতিদিন নতুন গল্প শোনান দাদু, শুরু করেন “ওই যে সে গাঁয়ে আমার বাস ছিল… ” বলে। ধীরে ধীরে সোনার কাঠি – রুপোর কাঠির ছোঁয়ায় খুলে যায় এক একটা জাদু দরজা। গল্প জমে উঠলে গুটিগুটি পায়ে মা আর মিষ্টিদিদু ও এসে বসে পড়েন। বাবার ফিরতে দেরী হয়। করোনা রাক্ষসের সঙ্গে লড়াই করে মানুষগুলোর জীবন বাঁচাতে হবে যে!
-“আমাদের ছোটকালে সেইবার মড়ক লেগেছিল গাঁয়ে। তাজা তাজা মানুষগুলো টুপটুপ করে চলে যাচ্ছিল রাক্ষসের গ্রাসে, বাকিরা দরজায় খিল দিয়ে ভয়ে কাঁপতো… পাছে রাক্ষস ঢুকে পড়ে ঘরে!
সেইসময় এক ডাক্তার এলো। রাক্ষসের চোখে চোখ রেখে বললো, “দেখি তোর কত্ত ক্ষমতা! নিয়ে যাবি আমার চোখের সামনে দিয়ে!”
রাক্ষস ফুঁসে উঠলো। হা হা বাতাসে ভর দিয়ে হেসে বললো, “তুই আটকাবি আমায়! এই লোকগুলো তোর কথা শুনবে!”
ডাক্তার মুচকি হেসে বললো, “দেখা যাক!”
তারপর সেই ডাক্তার গাঁয়ের লোকগুলোকে ডেকে বোঝালো। তারা আর পুকুরের জল না ফুটিয়ে খেতো না, খাবার ঢাকা না দিয়ে রাখতো না, হাত পরিস্কার করে তবেই খেতো। তাদের সবাইকে নিজের জাদুবাক্স থেকে টীকা দিয়েছিল ডাক্তার। রাক্ষস এসব দেখে খুব রেগে গেলো। সে আর মানুষ খেতে পারছিলো না। তখন সে করলো কি…!”
মৌটুসী ও তার বন্ধুরা দাদু থামতেই চেঁচিয়ে উঠলো, “কী করলো!”
-“রাক্ষসটা গাঁ ছেড়ে পালিয়ে গেলো। সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। আচ্ছা এটা থেকে তোমরা কী শিখলে?”
কেউ কিছু বলার আগেই চেঁচিয়ে উঠলো মৌটুসী, “ডাক্তারের কথা শুনে চলবো, হাত ধোবো। তাতে করোনা রাক্ষসও পালিয়ে যাবে!”
-“আলবাত যাবে৷ ডাক্তারের কাছে কোনো রাক্ষস টিকতে পারে নাকি!”
এই বলে বুড়োদাদু টান দিলেন গড়গড়ায়, দেওয়ালে বসা টিকটিকিটা বলে উঠলো, “ঠিক, ঠিক।”