বেইমানির শাস্তি ।। লেখা : শুভঙ্কর ভট্টাচার্য
হরিদেবপুর নামে একটি জায়গাতে এক দুধওয়ালা বসবাস করতো, যার নাম ছিল রবি। তার বেচা দুধের চাহিদা ছিল খুব। তার দুধ খুব খাঁটি হওয়ায় চাহিদাও ছিল অনেক। কেবল হরিদেবপুরের মধ্যেই না, আশে পাশের আরও তিন চারটি জায়গা থেকে মানুষ দুধ কিনে নিয়ে যেত।
সময়ের সাথে সাথে রবি ধীরে ধীরে বড়লোক হয়ে উঠলো। একদিন তার বউ বেবী তাকে বললো, “তুমি যদি দুধের ভেতরে কিছুটা জল মিশিয়ে দাও তাহলে তুমি আরও বেশি করে দুধ বেচতে পারবে এবং তাতে মুনাফাও আরও বেশি হবে।” এই কথা শুনে রবি ভাবলো যে তার বউ তো একদম ঠিক কথা বলেছে, এই পদ্ধতিতে সে আরও বড়লোক হতে পারবে।
এরপর থেকে রবি খাঁটি দুধ বেচা বন্ধ করে দুধে জল মেলাতে শুরু করল। সাধারণ মানুষেরা কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না, কারণ তারা সকলেই ভাবতো রবি খাঁটি দুধই তাদের দিচ্ছে। এরপর দুধে জল মিশিয়ে রবি ধীরে ধীরে আরও বড়লোকে পরিনত হলো।
আরও কিছু সময় পর রবি দুধে কেবল কুড়ি ভাগ দুধ রেখে বাকি আশি ভাগ জল মিশিয়ে বেচতে শুরু করল। সাধারণ মানুষেরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে রবির বেচা দুধে সেই আগের স্বাদ নেই। কিন্তু ততদিনে রবি অনেক টাকার মালিক। সে এখন এক মানীগুণী মানুষে পরিণত হয়েছে।
হঠাৎ এক বছর হরিদেবপুরে বন্যা দেখা দিল। চারিদিকে কেবল জল আর জল। মাটির বাড়িগুলি সব জলে ভেসে যায়, জমিতে সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়, মানুষ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দিকে তাদের শেষ সম্বল নিয়ে পালিয়ে যায় ।
রবিও দেখে যেভাবে জল বেড়ে চলেছে তাতে আর বাড়িতে থাকলে নিশ্চিত মৃত্যু হবে। তাই রবি ঠিক করে সমস্ত টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। টাকা থাকলে অন্য জায়গায় গিয়েও নতুন বাড়ি করা যাবে, বা যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন এখানেই ফিরে আসা যাবে।
এই ভেবে রবি তার বউ ও মেয়েকে নিয়ে, সমস্ত টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা দেয়। রাস্তাতে চারিদিকে জল থই থই করছে। কিছু জল ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর জলের ধাক্কায় রবির হাত থেকে টাকাতে ভর্তি থলে, যাতে ওর সারা জীবনের উপার্জন ছিল, জলে পড়ে যায় এবং নিমেষে তা জলের সাথে ভেসে অদৃশ্য হয়ে যায়। তাই দেখে রবির মাথাতে বাজ ভেঙে পড়ে আর সে মাথাতে হাত দিয়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।