বসন্ত বিলাপ

 

 

‘আমার পরাণ যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো’- এই গানটা গাইলে সুমির মনে কত কি  যে ঘোরাফেরা করে তা আজ অবধি উত্তর পাওয়া হলো না তার। আর পাবেই বা কি করে? সে বড় চুপচাপ, নাকি গোমড়ামুখো! নাহ্, আজ আর গান গাইতে ইচ্ছে করছে না তার, ‘বাতাসে বহিছে প্রেম’ এই ভেবে বিছানা ছেড়ে সে উঠে পড়ল।

সুমির বৌদি বলল ,“কি রে আজ বেশিক্ষণ রেওয়াজ করলি না যে , কি হলো?”

– “না তেমন কিছু নয়, ইচ্ছে করল না, একটু ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে।”

– “ঠিক আছে” ওর বৌদি বলল।

সুমি ছাদে গিয়ে রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়ে, দূরে কলেজের মাঠের কোণে বুড়ো পলাশ গাছটার দিকে তাকিয়ে  ভাবতে লাগল, “আহা, এই বসন্ত এলেই ওই বুড়ো পলাশ গাছটার কদর বেড়ে যায়, কেমন আলো করে আছে। কিছু মেয়ে আবার তার কুঁড়ি মাথায় গুঁজে এই পথ দিয়ে চলেছে।” হঠাৎ সে চোখ সরিয়ে তাকাল পাশের বাড়ির দিকে। সেই এক ছবি, গোমড়ামুখো নাকের ডগায় চশমা পরে কি যেন মন দিয়ে পড়ছে। ওর আজ কি কিছুই মনে হয় না, নাকি ঋতু-কাল নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই,  কি কারণ আজ অবধি সুমির জানা হলো না। এলোমেলো হাওয়া তার কানের পাশ দিয়ে এলেবেলে ভাবে আর তার চুল গালের একপাশ ছুঁয়ে চলেছে। আম গাছটার ডালে আজ কোকিলের কুহুতান, সব বুঝি একদিনে এসে সুমিকে জানান দিচ্ছে ,’বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ কেবল যার বোঝার কথা সেই বুঝল না।

“পিসিয়া কি একা একা বকছ?”- মিনি এসে বলতেই সুমির সম্বিত ফিরল, আর মনে মনে লজ্জা পেল। এই রে, মিনি সব শুনে ফেলল বোধহয়। “কি গো, বললে না তো একা একা কি বলে চলেছ?” মিনি আবার বলল। “কই কিছু বলছি না তো মিনি রানী। তোর স্কুল নেই বুঝি আজ, এখন ছাদে এসেছিস যে!” সুমি বলল। “না গো, স্কুল ছুটি আছে, স্পোর্টস্ এর পরদিন, তাই ছুটি… জানো পিসিয়া তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয় নি।” “কি কথা?” সুমি জানতে চাইল। “আমার সন্তুকাকু দুদিন আগে বলছিল।” নাম টা শুনেই সুমির মনে কেমন যেন করে উঠল, “কি বলল শুনি?”- সুমি জানতে চাইল। “কিরে মিনি, আজকাল তোর পিসিয়া গান তেমন করে না, শুনতে পাইনা তো…বড়ো ভালো গায়। আচ্ছা, তোকে কোনোদিন আমার কথা জিজ্ঞাসা করে?” এই কথা শুনে সুমি মুচকি হাসছে। এরপর আবার মিনি বলতে শুরু করল, “এরপর শুনলে তো তুমি আরও হাসবে পিসিয়া…” “কেন রে, আবার কি করল?” সুমি বলল।  “হঠাৎ দেখি সন্তুকাকু দরজার দিকে তাকিয়ে গান গাইতে শুরু করলো, আজি দখিন-দুয়ার খোলা – এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো। দিব হৃদয়দোলায় দোলা, এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো। “আমি তো অবাক, এই রাশভারী মানুষ টা আবার এই গান গাইছে, ভাবা যায়!” শুনে সুমি তো হোহো করে হেসে উঠেছে, একটু থেমে নিজেকে সামলে নিল। “পিসিয়া, আমার মনে হল, এই গান টা তোমার জন্যই গাইল, তুমি উত্তর টা দিয়ো, কেমন?” বলেই মিনি এক দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।

 

 

কলমে – দেবলীনা

ছবি – রাজনন্দিনী

 

Author: admin_plipi