এবার মরলে গাছ হবো আমি

 

এবার মরলে গাছ হবো আমি

লেখা ও ছবি – নীপাঞ্জলি

 

বৃক্ষরা বড় ভালো প্রেমিক হয়, বড় ভালো সন্তান হয়। বুড়োটে গাঢ় সবুজে মুখ ডুবিয়ে প্রেমের অদ্ভুত নির্ভরতা পাওয়া যায়, কচি পাতায় মেলে শিশুর দুধেলা গন্ধ। তার শুষ্ক ত্বকে হাত বুলিয়ে আমি পৌরুষের কামার্ত উত্তাপ পেয়েছি, নরম বৃন্তে নারীর লালিমা!

যে অসহায় অঙ্কুরকে সযত্নে বড় করেছি, মন দিয়ে সাবধানে হিসেব করেছি কত পরিমাণে হাড়সার আর জৈবসারের মিশেলে কচি প্রাণটা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে তরতরিয়ে বড় হয়ে উঠবে, সদ‍্য যৌবনপ্রাপ্ত তার ছায়ায় বসে নিজেকে ঈশ্বর মনে হয়। মনে হয় সৃষ্টির চরম আনন্দে একছুটে আমি ছুঁয়ে ফেলতে পারি সূর্য, কিংবা বহু আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রদের।

ক্লান্ত হয়ে পথের বাঁকে ধুলো মাখা যার ছায়ায় দাঁড়িয়ে দু’দণ্ড জিরিয়ে নেওয়া যায়, ফিরে যাবার পথে একবার মুখ ফিরিয়ে দেখলে তাকে ব‍্যর্থ সেইসব প্রেমিকদের মত লাগে, যারা হয়তো একদিন এভাবেই ছাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা বোঝেনি ছায়াদের প্রয়োজন হারিয়েছে বহুদিন। অপেক্ষা করতে থাকে তারা, প্রতিদিন। আমি নিষিদ্ধ আনন্দ পাই, অপেক্ষা করিয়ে রাখার আনন্দ…।

এক একদিন বোকার মত স্বপ্ন দেখি আমিও গাছ হয়ে যাব। প্রাচীন শ‍্যাওলায় আপাদমস্তক মুড়ে ফেলে দাঁড়িয়ে থাকব ঠায়, পায়ের শিরা উপশিরারা পরিণত হবে মূল উপমূলে। মাটির গভীরে প্রোথিত হয়ে খুঁজে নেব পুষ্টি, শুষে নেব সূর্যের আশ্লেষ। হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা আর ধী নিয়ে আশ্রয় দিয়ে যাব শয়ে শয়ে পাখি, পরজীবী, পোকামাকড় এবং হয়তো মানুষকেও। ফের আমি ঈশ্বর হব, যে ঈশ্বর আশ্রয় দেবে নিজের সৃষ্টিকর্তাকেই।

Author: admin_plipi